Advertisement
০২ মে ২০২৪
potato farmers

জোগান বেশি বলে উঠছে না চাষের খরচটুকু

কৃষি দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় অন্যতম আলু উৎপাদক এলাকা হিসেবে পরিচিত ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লক।

খেত থেকে তোলা হচ্ছে আলু। নিজস্ব চিত্র

খেত থেকে তোলা হচ্ছে আলু। নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৪৩
Share: Save:

অনাবৃষ্টির কারণে এ বারে ধান চাষ ভাল হয়নি। অনাবাদী হয়ে পড়েছিল বহু জমি। সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আলু চাষের দিকে ঝুঁকেছিলেন চাষিরা। এখন কপাল চাপড়াচ্ছেন তাঁরা। আলু বিক্রি করে চাষের খরচটুকুও উঠছে না বলে চাষিদের অভিযোগ।

কৃষি দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় অন্যতম আলু উৎপাদক এলাকা হিসেবে পরিচিত ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লক। ওই ব্লকের দুনা, রসিদপুর, ষাটপলশা, নারায়ণঘাটি, রসুনপুর, নবগ্রাম প্রভৃতি এলাকায় ব্যাপক আলু চাষ হয়। জেলায় এ বারে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছিল। চাষ হয়েছিল ২১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লকে ২,৬০০ হেক্টরে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে হেক্টর প্রতি ২৫ মেট্রিক টন। গত বছর চাষ হয়েছিল ২,৪০০ হেক্টর জমিতে। ব্লক কৃষি দফতরেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ধান চাষের ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই অতিরিক্ত আলু চাষের দিকে ঝুঁকেছিলেন চাষিরা। তাঁরাই এখন হাহুতাশ করছেন।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বিঘে প্রতি চাষ করতে খরচ পড়েছিল ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। ফলন মিলছে বিঘে প্রতি ৮০-৯০ বস্তা (এক বস্তায় ৫০ কেজি)। পাইকারি হিসেবে বস্তা প্রতি দাম মিলছে ২৫০-২৬০ টাকা। বাজারে খুচরো কেজি প্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বছর এই সময়ে বস্তা প্রতি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে আলু বিক্রি হয়েছে। খুচরো কেজি প্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা দাম মিলেছে।

কৃষি বিপণন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ বারে জেলায় বহু হিমঘরে পুরনো আলু রয়ে গিয়েছে। হিমঘর খালি করতে কম দামে সেই আলু বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। স্বভাবতই জোগান বেশি থাকায়, নতুন আলুর দাম মিলছে না। এই পরিস্থিতিতে আলু চাষিরা পড়েছেন মহা বিপাকে। অন্য বার বিঘে তিনেক জমিতে আলু চাষ করে থাকেন লাভপুরের মীরবাঁধের এহেসান আলি, সাঁইথিয়ার মোতিপুরের সুদেব মণ্ডলেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘এ বারে অনাবৃষ্টির কারণে ভাল ধান হয়নি। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিঘে পাঁচেক জমিতে আগাম আলুর চাষ করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে না করলেই ভাল হত। আলু বিক্রি করে চাষের খরচটুকুও উঠছে না। পর পর দু’বার ক্ষতি সামাল দেব কী করে ভেবে পাচ্ছি না।’’ ময়ূরেশ্বরের ভগবতীপুরের বিল্বচরণ ভল্লা, রসুনপুরের পূর্ণচন্দ্র ভল্লাদের অবস্থা আরও খারাপ। তাঁদের নিজের জমি নেই। অন্যের জমি ঠিকায় নিয়ে বিঘে তিনেক করে জমিতে আগাম আলু চাষ করেছিলেন। তুলতেও শুরু করেছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘নিজের জমি না থাকায় আমরা সরকারি ভর্তুকিতে কৃষিঋণ পাইনি। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে দু’পয়সা লাভের আশায় চাষ করেছিলাম। এ বার সে ভাবে কুয়াশা হয়নি। ফলে নাবিধসা রোগের প্রকোপ দেখা যায়নি। আশানুরূপ ফলনও মিলেছে। কিন্তু আলুর দাম কম থাকায় কী করে ঋণের টাকা মেটাব ভেবে পাচ্ছি না।’’

ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা উজ্জ্বল রায় বলেন, ‘‘অনাবৃষ্টির কারণে ধান চাষ কম হওয়া এ বারে চাষিরা বেশি করে আলু চাষের দিকে ঝুঁকে ছিলেন।’’ জেলা সহ কৃষি অধিকর্তা শিবনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলায় প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে বেশি আলু চাষ হয়েছে। এখন সবে উচ্চফলনশীল আলু তোলা শুরু হয়েছে। মূল আলু তোলা হবে ফেব্রুয়ারি, মার্চে। তাই উৎপাদন এবং বাজার দর না-দেখে এখনই লাভ, লোকসানের কথা বলা যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

potato farmers mayureshwar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE