ডিভিসির সেচখাল থেকে ঠিকমতো জল না পাওয়ায় শুকিয়ে যাচ্ছে বোরো ধান। এই অভিযোগে রবিবার পাত্রসায়রের ধগড়িয়ায় পথ অবরোধ করলেন চাষিদের একটা বড় অংশ। সোনামুখীতেও এ দিন সেচের জলের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে।
এ দিন সকালে বাঁকুড়া-বর্ধমান রাস্তায় অবরোধের জেরে আটকে পড়ে বেশ কিছু গাড়ি। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গত ২৬ জানুয়ারি থেকে জল দেওয়ার কথা ডিভিসির সেচখালে। তবে প্রথম থেকে পর্যাপ্ত জল মিলছে না। প্রথম দফায় দিন পাঁচেক জল পাওয়া গেলেও বোরো ধান রোয়ার পরে এখনও জল দেওয়া হয়নি। শুকিয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা চাষজমি। এক চাষির দাবি, “ঋণ নিয়ে চাষ করেছি। প্রায় দশ বিঘা জমির ধান শুকিয়েছে। আর জল দিয়েও তা বাঁচানো যাবে না। অনেক টাকার ক্ষতি হল।” আর এক চাষিও জানান, সেচখালে জল এত কম আসছে যে দূর জমিতে সেচ মিলছে না।
পাত্রসায়রের বিডিও সুভাষ বিশ্বাস বলেন, “চাষিরা আগে সমস্যার কথা জানাননি। তঁদের সঙ্গে কথা বলার পরে অবরোধ উঠেছে। ডিভিসি সেচ দফতরে যোগাযোগ করা হয়েছে। দ্রুত সেচের জল পাবেন চাষিরা।” দ্রুত পর্যাপ্ত জল দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ডিভিসির অমরকানন ডিভিশনের এসডিও উত্তম দাস। তিনি বলেন, “১৪ তারিখ থেকে জল ছাড়ার কথা ছিল। তা দেওয়া হচ্ছে। তবে উপরের এলাকায় থাকা বড়জোড়া, পখন্না আগে জল পাচ্ছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ জল ছাড়া হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই পাত্রসায়র, ধগড়িয়ার চাষিরাও পর্যাপ্ত জল পাবেন।” তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বার শীতে বৃষ্টি হয়নি। সেচখালগুলিতে জল কম রয়েছে। অন্য দিকে, যতটা জমিতে ডিভিসি সেচের জল দেয়, তার অনেক বেশি জমিতে চাষ হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।
সেচের জলের দাবিতে এ দিন প্রায় ঘণ্টা দুয়েক বিক্ষোভ হয় সোনামুখী-দুর্গাপুর রাস্তার নফরডাঙাতেও। বিক্ষোভকারী মহেশপুর, রাউতোড়া, গোবিন্দবাটি-সহ একাধিক গ্রামের চাষিদের দাবি, সেচ দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছিল, ২৬ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যায়ক্রমে সেচখালে জল ছাড়া হবে। কিন্তু জানুয়ারিতে পাঁচ দিন জল ছাড়ার পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়। ব্লকের একাধিক গ্রামের কয়েকশো বিঘা বোরো ধানের জমি ফেটে চৌচির। তাঁদের দাবি, বর্ষায় না চাইতেই জল ছেড়ে পাকা ধান ডুবিয়ে দেওয়া হয়। এখন জলের অভাবে মাঠ শুকিয়ে গিয়েছে। ক্যানালে জল ছাড়ার খবর আগাম না জানালে তাঁরা বোরো ধান লাগাতেন না। অনেকে জানান, মহাজনের কাছে ঋণ নিয়ে ধান লাগিয়েছেন। এখন জলের অভাবে চাষ না হলে ঋণশোধের উপায় থাকবে না। পরে পুলিশ ও সেচ দফতরের আধিকারিকের আশ্বাস পেয়ে অবরোধ উঠে যায়।
সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুশল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “চাষিরা সেচের জল না পেলে আমাদের কাছেই প্রথম অভিযোগ জানান। অথচ আমরাই অন্ধকারে রয়েছি। কখন, কতটা জল ছাড়া হবে তা ওয়টস্যাপ গ্রুপে অন্যদের সঙ্গেই জানতে পারি। সেচ দফতরের বৈঠকে আমাদের ডাকা হয়নি।” সেচ দফতর জানাচ্ছে, জেলা জুড়ে ১০ হাজার একর জমিতে পাঁচটি পর্যায়ে জল ছাড়া হবে। সম্ভাব্য দিনগুলি হল ২৬ জানুয়ারি-৫ ফেব্রুয়ারি, ১৪-২৩ ফেব্রুয়ারি, ৩-১৫ মার্চ, ২৪ মার্চ-২ এপ্রিল ও ১১-২০ এপ্রিল। এর পরেও প্রয়োজনে ২৬-৩০ এপ্রিল জল দেওয়া হবে। এসডিও উত্তমের আশ্বাস, “বৃষ্টি না হওয়ায় জমি শুকিয়ে গিয়েছে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জল লাগছে চাষিদের। সোনামুখী ও পাত্রসায়রের জন্য ২০০ কিউসেক অতিরিক্ত জল চাওয়া হয়েছে
ডিভিসির কাছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)