Advertisement
E-Paper

খুনিকে ধরিয়ে দিল দেওয়ালে হাতের ছাপ

দিন কয়েক পরেই একমাত্র ভাই গুরুচরণের বিয়ে। বাবা মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। বাপের বাড়ি এসে বিয়ের প্রস্তুতি প্রায় একা হাতেই সামলাচ্ছিলেন দিদি রাণুবালা মাহাতো। তারই মধ্যে এক দিন কাজ সেরে ঘুমিয়েছেন।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৬
চিলেকোঠার সেই সিঁড়িতে বসেছে দরজা।—নিজস্ব চিত্র।

চিলেকোঠার সেই সিঁড়িতে বসেছে দরজা।—নিজস্ব চিত্র।

দিন কয়েক পরেই একমাত্র ভাই গুরুচরণের বিয়ে। বাবা মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। বাপের বাড়ি এসে বিয়ের প্রস্তুতি প্রায় একা হাতেই সামলাচ্ছিলেন দিদি রাণুবালা মাহাতো। তারই মধ্যে এক দিন কাজ সেরে ঘুমিয়েছেন। হঠাৎ একাট আর্ত চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল। ধরমড়িয়ে উঠে রাণুবালা বুঝলেন, ভাইয়ের গলা। পাশের ঘরেই ঘুমিয়েছিল ছেলেটা। ছুটে গিয়ে আবছা আলোয় দেখেন একটা লোক অস্ত্র হাতে ভাইকে কোপাচ্ছে। মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা। ছুটে গিয়ে ভাইকে জাপটে ধরে আততায়ীর থেকে আড়াল করার চেষ্টা করেছিলেন রাণুবালা। কিন্তু তাঁর শরীরেও কোপ বসিয়ে ছুটে পালায় আততায়ী। অবশ্য পালানোর আগে ধ্বস্তাধস্তিতে মুখ থেকে গামছা খুলে এসেছিল আততায়ীর। চেঁচামিচি শুনে ছুটে আসার সময় গুরুপদর মা এক ঝলক দেখেও ফেলেছিলেন মুখটা। আবছা অন্ধকারে চেনা চেনা ঠেকেছিল!

বেশি দিন আগের কথা নয়— চলতি বছরেরই ৩ জুন। ঘটনাস্থল কাশীপুর থানা এলাকার মোধাপাতড়া গ্রাম। রাণুবালার চিৎকারে সবাই ছুটে এসেছিলেন। রক্তে ভেসে যাওয়া গুরুচরণ মাহাতোকে (২৮) উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় কল্লোলী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। চিকিৎসকেরা জানান তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

রাণুবালার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় অনেককে। ঘটনাস্থল থেকে সূত্রও মেলে কিছু। তদন্তের সঙ্গে জড়িত থাকা এক পুলিশ আধিকারিক জানান, খুনের পরে গুরুচরণদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চিলেকোঠায় কোনও দরজা নেই। একবার ছাদে উঠতে পারলে সটান অন্দরমহলে ঢুকে পড়া যেতে পারে। ছাদের পাশেই দেওয়ালে ঠেক দিয়ে রাখা ছিল একটা বাঁশ। যা দেখে পুলিশ একপ্রকার নিশ্চিত হয়, বাঁশ বেয়েই ছাদ দিয়ে ঢুকেছিল আততায়ী।

কিন্তু এই দরজা না থাকার ব্যাপারটা একেবারে আনকোরা কারও পক্ষে জানা মুশকিলের। তদন্তকারীদের সন্দেহ ছিল, পরিচিত কেউই খুন করেছেন। যিনি জানতেন কী ভাবে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়া যায়। আর এও জানতেন, খুব গরম পড়ায় গুরুচরণ দরজায় খিল না দিয়েই ঘুমোচ্ছিলেন ক’টা দিন। জানতেন, কখন ঢুকলে কাজ হাসিল হবে।

তদন্তকারীদের সন্দেহ কাটানোর জন্য আরও একটা মোক্ষম সূত্র হাজির। বাঁশটি যেখানে রাখা ছিল সেই বরাবর বাড়ির বাইরের দেওয়াল খুঁটিয়ে পরীক্ষা করার সময় একটা হাতের ছাপ চোখে পড়ে তাঁদের। বোঝা যায়, নামার সময় তাড়াহুড়োয় বাঁশটি সম্ভবত নড়ে গিয়েছিল। টাল সামলানোর জন্য পুরনো দেয়াল আঁকড়ে ধরতে গিয়ে চিহ্ন ফেলে রেখে গিয়েছিল আততায়ী। আর সেই চিহ্নই ধরিয়ে দিল তাঁকে।

মামলার চার্জশিট পেশ হয়েছে। ধৃত জামিনে মুক্ত।

আটক করা হয় গুরুপদ মাহাতোকে। গামছা সরে যাওয়া মুখটা এক ঝলক দেখে গুরুপদর মতোই লেগেছিল রাণুবালার মায়ের। দেখা যায়, গুরুপদর হাতের কিছুটা ছড়ে গিয়েছে। ছাপ পরীক্ষা করতে মিলেও য়ায়। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে পড়ে খুনের কথা কবুল করে গুরুপদ। জানায়, গ্রামের একটি জমি নিয়ে বিবাদের জেরেই এই কাজ করেছে সে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছু দিন ধরেই দুই পরিবারের মধ্যে জমি নিয়ে বিবাদ চলছিল। এক প্রস্ত মারামারিও হয়েছিল কিছু দিন আগে। ওই ঘটনা নিয়ে তখন পুলিশে অভিযোগও দায়ের হয়েছিল।

গুরুচরণ বাবার একমাত্র ছেলে। দিদিদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পুলিশের দাবি, তাঁকে সরিয়ে দিতে পারলেই জমির দখল এক প্রকার নিশ্চিত জেনে খুনের পরিকল্পনা করেছিল গুরুপদ। ঠিক করেছিল, বিয়ে হওয়ার আগেই কাজটা হাসিল করতে হবে, যাতে নতুন কোনও ওয়ারিশ চলে আসতে না পরে। সাধারণত খাওয়াদাওয়ার পরে পাড়ার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে একটু আড্ডা মেরে একটু বেশি রাত করেই শুতে যেতেন গুরুচরণ। কিন্তু ঘটনার দিন এলাকায় একটি পুজোর অনুষ্ঠান থাকায় বন্ধুবান্ধরা কেউ বিশেষ ছিল না। তাড়াতাড়ি ঘুমোতে গিয়েছিলেন গুরুচরণ। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছিল আততায়ী।

অভিযুক্ত গুরুপদ মাহাতোকে গ্রেফতারের পরে আদালতে তুলে তদন্তের জন্য হেফাজতে নেয় পুলিশ। গ্রামে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্গঠনও করানো হয়। উদ্ধার হয় অস্ত্র। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মামলার চার্জশিট আদালতে জমা পড়েছে। তবে অভিযুক্ত আপাতত জামিনে মুক্ত।

Murder Kashipore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy