Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
flood

flood: ৭৪টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় বন্যার্তদের

কেবল বাঁকুড়া শহরই নয়, এক টানা বৃষ্টিতে জেলার প্রায় সব ক’টি ব্লক কম-বেশি বিপর্যস্ত।

জল-ছবি: পিটরাবনিডাঙা, কলাবেড়েডাঙা গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের আনা হল সোনামুখী শহরে।

জল-ছবি: পিটরাবনিডাঙা, কলাবেড়েডাঙা গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের আনা হল সোনামুখী শহরে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৫১
Share: Save:

খালের জলের তোড়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ছে আস্ত একটা দো’তলা পাকা বাড়ি। ২০১৮-সালের বৃষ্টিতে বাঁকুড়ার জুনবেদিয়ায় ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার স্মৃতি আজও তাড়া করে বাঁকুড়াবাসীকে। আবহাওয়া অফিসের মতে সে বারও তুমুল বৃষ্টি হয়েছিল। বুধবারের বৃষ্টি অবশ্য একশো বছরের রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, বুধবার বাঁকুড়ার বৃষ্টি অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। তীব্র বৃষ্টির জেরে নদীর জল উপচে প্লাবিত করেছে শহরের বড় অংশকে।

বাঁকুড়ার জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার বলেন, “জলমগ্ন গ্রামগুলি থেকে মানুষজনকে উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। তবে নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।”

বুধবার রাত থেকেই প্রশাসনের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতরের তিনটি কুইক রেসপন্স টিম সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করার কাজ শুরু করে। গন্ধেশ্বরী লাগোয়া লক্ষ্যাতড়া মহাশ্মশান জলমগ্ন হয়ে বৈদ্যুতিক চুল্লিতে জল ঢুকে পড়ায় যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়। সে কারণে দুপুর পর্যন্ত শবদাহ বন্ধ রাখা হয়।

বাঁকুড়া শহরের পুকুর ও ডোবার জল উপচে বিভিন্ন বস্তি প্লাবিত হয়। শহরের ১৭, ১৯, ২০ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বহু মানুষকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। বাঁকুড়ার পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন অলকা সেন মজুমদার বলেন, “শহর জুড়ে এমন প্লাবনের ঘটনা আগে দেখিনি।”

কেবল বাঁকুড়া শহরেই নয়, এক টানা বৃষ্টিতে জেলার প্রায় সব ক’টি ব্লক কম-বেশি বিপর্যস্ত। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রশাসনিক সূত্রে দাবি, জেলা জুড়ে ২৪ হাজার ৭৩৫ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এই দুর্যোগে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দু’হাজার ১৫১টি। ৭৪টি ত্রাণ শিবির চালু করেছে প্রশাসন। সেখানে নয় হাজার ২২৮ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জলবন্দি অবস্থায় থাকা আট হাজার ৬২৯ জন মানুষকে প্রশাসন উদ্ধার করেছে। ইঁদপুর ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ায় ৩০টি পরিবার আটকে পড়ে। বুধবার রাতেই তাঁদের উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। হিড়বাঁধ ব্লকের অর্জুনদহ গ্রামে একটি কাঁচাবাড়ির দেওয়াল পড়ে জখম হন কালাচাঁদ মুর্মু নামে এক ব্যক্তি। তাঁকে খাতড়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

খাতড়ার মহকুমা শাসক মৈত্রী চক্রবর্তী বলেন, “প্রবল বৃষ্টির জেরে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত খাতড়া মহকুমা এলাকায় বেশ কিছু বাড়ি ভেঙেছে। ওই পরিবারগুলিকে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।”

প্রশাসন সূত্রে খবর, মেজিয়া ব্লকের মানাচরে প্রায় দু’শোটি পরিবার আটকে রয়েছে। তাদের উদ্ধারের জন্য জাতীয় ও রাজ্যস্তরের বিপর্যয় মোকাবিলা টিম পাঠানো হচ্ছে জেলায়। শালতোড়া, ছাতনা ব্লকের বহু গ্রাম জলমগ্ন। বিষ্ণুপুর মহকুমার বিভিন্ন ব্লকে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাজ্য সড়কের বিড়াই নদীর সেতুর উপরে জল উঠে যাওয়ায় ভোর থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেতু পরিদর্শনে যান বাঁকুড়ার জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার, পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার, মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত প্রমুখ। বেলা ১১টা নাগাদ জল সেতু থেকে নেমে যায়। এর পরে পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে হালকা যানবাহন চলাচলে অনুমতি দেন। পণ্যবাহী ভারী যানবাহনগুলিকে অন্য পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।

সোনামুখী ব্লকের একাধিক গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি হয়েছে। ডিভিসি-র জলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দামোদ নদ লাগোয়া গ্রামগুলিতে। বড়জোড়া, ইন্দাস, পাত্রসায়র, সোনামুখী ব্লকের দামোদর লাগোয়া গ্রামের মানুষজনকে সরিয়ে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তীব্র বৃষ্টির জেরে পাত্রসায়র ব্লকের নাড়িচা থেকে পান্ডুয়া যাওয়ার রাস্তায় হরিণমুড়ি খালের জল উপচে কালভার্ট ডুবিয়ে দেয়। একে ওই রাস্তায় চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাত্রসায়রের নারায়ণপুর পঞ্চায়েতে শালি নদীর উপরে চাপাবনি কজ়ওয়ে প্লাবিত হওয়ায় পাত্রসায়র থেকে নারায়ণপুর যাওয়ার রাস্তায় পারাপার সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের পরে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। শীলাবতী নদীর জল বেড়ে সিমলাপালে কজ়ওয়ে প্লাবিত হওয়ায় বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

মুকুটমণিপুরের কংসাবতী জলাধার থেকে ২৫ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কংসাবতীর সেচ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার গৌরব ভৌমিক। তিনি বলেন, “কংসাবতীতে জল ছাড়ার জন্য বাঁকুড়ায় কোথাও প্লাবনের আশঙ্কা নেই। তবে ঘাটালের কিছু গ্রামে প্লাবনের আশঙ্কা থাকায় আমরা কম পরিমাণে জল ছাড়ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

flood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE