প্রায় তিন মাস ধরে রেশন না দেওয়ার অভিযোগে বাঁকুড়ার শালতোড়ার গোগড়া পঞ্চায়েতের একটি ‘ল্যাম্পস’কে সাসপেন্ড করল খাদ্য দফতর। শুক্রবার শালতোড়ার নেতকামলা, কর্কটা ও চাঁদড়া গ্রামের বাসিন্দারা রেশন না পাওয়ায় বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। পরে পুলিশ ও ব্লক খাদ্য পরিদর্শক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।
বাঁকুড়া জেলা খাদ্য নিয়ামক সেখ আলিমুদ্দিন বলেন, “রেশন সামগ্রী বণ্টনের দায়িত্বে থাকা ওই ল্যাম্পসকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। স্থানীয় একটি রেশন ডিলারের মাধ্যমে উপভোক্তাদের বকেয়া রেশন দ্রব্য দেওয়া হচ্ছে।” ল্যাম্পসের তরফে মহেশ্বর টুডুর দাবি, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে গ্রাহকদের বঞ্চিত করা হয়নি।
ওই ব্লকের একাধিক আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের উপভোক্তারা প্রায় তিন মাস রেশন সামগ্রী থেকে কী ভাবে বঞ্চিত থাকলেন, কেন জনপ্রতিনিধি, ব্লক দফতর জানতে পারল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
উপভোক্তারা জানান, ডিসেম্বর থেকে নিয়মিত রেশনদ্রব্য বণ্টনের কুপন বিলি করা হয়েছে ওই ল্যাম্পসের তরফে। অথচ প্রতি বারই তা আসেনি বলে জানানো হয়। প্রশাসনের দাবি, রেশন না মিললে অভিযোগ জানানোর নির্দিষ্ট ফোন নম্বর রয়েছে। ওই গ্রামগুলির কোনও উপভোক্তা অভিযোগ জানাননি। এক উপভোক্তা বলেন, “কোথায় অভিযোগ জানাতে হয়, আমরা জানি না।”
প্রশ্নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকাও। প্রায় প্রতি ভোটের আগে নিয়ম করে বিনামূল্যের রেশন প্রকল্পকে হাতিয়ার করে জনমত আদায়ের লক্ষ্যে উঠেপড়ে লাগেন শাসক থেকে বিরোধী। অথচ প্রায় ৬০০টি পরিবারের ২,৪০০ জন সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ উঠছে। শুক্রবার রাতে শালতোড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্যাণী হেমব্রম বলেন, “কেউ তো এ নিয়ে কিছু জানাননি। বিক্ষোভ হয়েছে বলেও খবর নেই। খোঁজ নেব।”
সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ ধূর্জটি বন্দ্যোপাধ্যায় গোগড়া পঞ্চায়েত এলাকা থেকেই নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি জানান, বিক্ষোভ হয়েছেন বলে জেনেছেন। তবে শারীরিক ভাবে অসুস্থ বলে খোঁজ-খবর বিশেষ নিতে পারেননি। সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি সন্তোষ মণ্ডল বলেন, “ঘটনাটি জানলে অনেক আগেই ব্যবস্থা নিতাম। যারা দোষী, তাদের শাস্তি হোক।” শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউরিরও দাবি, “সম্প্রতি একাধিক কর্মসূচিতে গোগড়া পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরেছি। কেউ কিছু জানাননি।”
ঘটনার পরে জেলা খাদ্য দফতর প্রত্যেক ব্লক খাদ্য পরিদর্শককে এলাকায় এলাকায় জনসংযোগ বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ামক বলেন, “উপভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও জনসংযোগ বাড়াতে আমরা জোর দিচ্ছি।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)