‘অসুবিধাজনক জায়গায়’ চলছে বীরভূমের আড়াইশোর বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। সরকারি খাতায় মিলেছে এমনই তথ্য। কোথাও গাছতলা, কোথাও বাড়ির বাগান, কোথাও রাস্তায় পাশে চলছে সে সব কেন্দ্রগুলি। গ্রীষ্ম, বর্ষা থেকে শীত— খোলা আকাশের নীচেই ভিড় জমছে খুদেদের। খাতায়-কলমে সেগুলিই চিহ্নিত করা হয়েছে ‘অসুবিধাজনক জায়গা’ হিসেবে।
জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানসূত্র খুঁজতে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই পথে জেলার ১৯টি ব্লকে প্রশাসনিক বৈঠকের পরিকল্পনা করেছেন বীরভূমের সরকারি আধিকারিকরা। সম্প্রতি সিউড়ি ২ ব্লকে এক বৈঠকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির নিজস্ব ভবন নির্মাণ নিয়ে ক্ষোভ
প্রকাশ করেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। তিনি দ্রুত ওই কেন্দ্রগুলি উপযুক্ত জায়গায় সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিডিও ও প্রকল্প আধিকারিকদের নির্দেশ দেন।
সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প নিয়ে বীরভূম জেলার প্রশাসনিক সূত্রে পাওয়া তথ্যে স্পষ্ট, সিউড়ির পাশাপাশি জেলার অন্য প্রান্তেও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নিয়ে হরেক সমস্যা রয়েছে। জেলার ৪ হাজার ৭৯৬টি কেন্দ্রের মধ্যে আড়াইশোর বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলছে আকাশের নীচেই। মুরারই ২ ব্লকের পরিস্থিতি সব চেয়ে খারাপ। সেখানে ২৪৭টি অঙ্গনওয়াড়ির মধ্যে ৫১টি কেন্দ্র চলছে খোলা জায়গায়। নানুর, ইলামবাজার, বোলপুর-শ্রীনিকেতনেও আইসিডিএস প্রকল্পের অনেক কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই। নলহাটি ১ ব্লকের নলহাটি পুরসভার ২৮টি কেন্দ্রের একটিরও নিজস্ব ভবন নেই। দু’টি কেন্দ্র চলে আকাশের নীচে। অন্যগুলির কোনওটি কমিউনিটি হলে, কোনওটি প্রাথমিক স্কুল বা কোনও ক্লাবে।
মাড়গ্রামের ইদতলা পাড়া সংলগ্ন রামপুরহাট ২ ব্লকের ২৩৭ নম্বর কেন্দ্র চলছে রামপুরহাট-বিষ্ণুপুর সড়কের পাশে। ওই কেন্দ্রের লোকেরা জানান, রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই কাজ চলে সেখানে। স্থানীয় বাসিন্দা রহিমা বিবি বলেন, ‘‘আমার নাতনি এখানে পড়তে আসে। রাস্তার পাশে বসে সবাই। দুর্ঘটনা এড়াতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের চোখে চোখে রাখতে হয়। কখন কী হয়, তা নিয়ে চিন্তায় থাকি।’’ এলাকাবাসীর বক্তব্য, বৃষ্টি আর শীতে সমস্যা বাড়ে কয়েকগুণ।
কোথায়, কত
ব্লকের নাম কেন্দ্র খোলা আকাশের নীচে
• বোলপুর – শ্রীনিকেতন ৩৫৫ ২৫
• রামপুরহাট ১ ৩০৪ ১৭
• মুরারই ২ ২৪৭ ৫১
• নানুর ২৯৫ ৩৩
• ইলামবাজার ২২৭ ৩৯
• সিউড়ি ২ ১৭৯ ১১
সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের ব্লক আধিকারিকদের বক্তব্য, জায়গার অভাবে আকাশের নীচে কয়েকটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালানো হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় কিছু জায়গা দিতে বারবার আর্জি জানানো হয়েছে। কিন্ত সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের কথায়, ‘‘জায়গা মিললেই উন্নয়নমূলক প্রকল্পের টাকায় ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’’
ওই প্রকল্পের জেলা আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ি জানিয়েছেন, নিজস্ব ভবন না থাকায় প্রাথমিক স্কুল, ব্যক্তিগত বাড়ি, অসুবিধাজনক জায়গায় কয়েকটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালানো হচ্ছে। ‘ল্যান্ড-ব্যাঙ্ক’ থেকেও জমি মিলছে না। জমি কিনে ভবন নির্মাণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমোদনও মেলেনি। তবে অসুবিধাজনক জায়গা থেকে কেন্দ্রগুলি সরানোর চেষ্টা চলছে।
সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের জেলা আধিকারিক অরিন্দমবাবু জানান, সিউড়ি ২ ব্লকে অসুবিধাজনক জায়গায় থাকা ১১টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মধ্যে ৬টি মঙ্গলবার অস্থায়ী ভাবে কয়েকটি ক্লাব ও প্রাথমিক স্কুলে সরানো হয়েছে। বাকি ৫টি কেন্দ্রও শীঘ্র সরিয়ে দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy