পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে রেল জায়গা দিক। তা হলে তাঁরা নিজেরাই বাজার সরিয়ে নিয়ে যাবেন। উচ্ছেদের দরকার পড়বে না। আদ্রার রেল কর্তৃপক্ষকে এমনই প্রস্তাব দিল আদ্রার নর্থ সেটলমেন্ট এলাকায় রেলের জমিতে থাকা আনাজ বাজারের ব্যবসায়ীদের সংগঠন। বৃহস্পতিবার বিকেলে আদ্রার এডিআরএমের সঙ্গে দেখা করেন সংগঠনের এক প্রতিনিধি দল।
অমৃত ভারত প্রকল্পে আদ্রা স্টেশনের আমূল উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। স্টেশনের খোলনলচে বদলের কাজ যেমন চলছে, নতুন ভাবে তৈরি করা হবে স্টেশন লাগোয়া ‘সার্কুলেটিং এরিয়া’ও। তার জন্য স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রেলের জমিতে থাকা দোকানগুলি সরিয়ে নিতে নোটিস জারি করে রেল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা দোকান সরাননি। রেল পরে উচ্ছেদ অভিযানে নামলেও তৃণমূলের ‘সক্রিয় বিরোধিতায়’ স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়। এই পরিস্থিতিতে আনাজ বাজারের ব্যবসায়ীদের একাংশ রেলের সঙ্গে বোঝাপড়ার পথে গিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন। বিষয়টি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে রেলও।
বছর পঞ্চাশেক আগে স্টেশনের অদূরে ওই আনাজ বাজারটি তৈরি করেছিল রেলই। বাজারের পরিকাঠামোও গড়ে দেয় রেল। আদ্রার মূল আনাজ বাজার বলতে ওই বাজারটিকেই বোঝায়। ব্যবসায়ীরা জানান, ‘সার্কুলেটিং এরিয়া’র মানোন্নয়নে যে এলাকা রেল চিহ্নিত করেছে, তাতে আনাজ বাজারের একটা বড় অংশ পড়ছে। অন্তত পঞ্চাশ-ষাটটি দোকান ভাঙা পড়বে।
কমিটির কর্মকর্তারা জানান, বাজারের বড় থেকে ছোট ব্যবসায়ী, মুন্সী, কর্মচারী, ঠেলাচালক, টোটো-অটো চালক—সব মিলিয়ে দৈনিক পাঁচ হাজার জনের কর্মসংস্থান জুড়ে ওই বাজারের সঙ্গে। বাজার না থাকলে সকলে কাজ হারাবেন। তা ছাড়া, শুধু রেলশহরের বাসিন্দারা নন, আশপাশের তিন-চারটি পঞ্চায়েত এলাকার বড় অংশের বাসিন্দাদের দৈনিক আনাজের সংস্থান হয় ওই বাজার থেকেই। ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্মকর্তারা বলছেন, “রেলের ওই জায়গায় আমরা দীর্ঘসময় ধরে পুরুষানুক্রমে ব্যবসা করে আসছি। এখন রেলের জমির প্রয়োজন হয়েছে। বিষয়টা আমরা বুঝি। কিন্তু পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে আমাদের সরিয়ে দিলে সংসার কী ভাবে চলবে! সেটাই রেলকে জানানো হয়েছে।”
আনাজ বাজারের ঠিক পেছনে রেলের অনেকটা জায়গা আছে। সেখানেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, ওই জায়গায় রেল আনাজ বাজার সরিয়ে দিক। প্রয়োজনে ব্যবসায়ীরা নিজেরা খরচ করে দোকান তৈরি করবেন। কর্মকর্তাদের দাবি, “আমরা সমস্ত রকম ভাবে রেলকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। কিন্তু রেলকে আমাদের পুনর্বাসনের জন্য জমির ব্যবস্থা করে দিতে হবে।”
এডিআরএম কেএন ঘোষ বলেন, “আদ্রা স্টেশনের সার্কুলেটিং এলাকার উন্নয়ন আমাদের করতেই হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়ে রেল বোর্ডের নির্দেশিকা অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)