রাস্তা আটকে। —নিজস্ব চিত্র
রেফার হওয়া রোগী নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র নিয়ে শাসকদলেরই দুই গাড়ি সংগঠনের মধ্যে বচসা-মারপিট। আর তার জেরেই পথে তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে প্রায় আধঘণ্টা ঘরে অবরোধ করে দেওয়া হল জাতীয় সড়ক।
রবিবার সকালে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালের সামনে ৬০ নম্বর রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম জাতীয় সড়কে তৃণমূলের এই ‘দাদাগিরি’র জেরে দুর্ভোগে পড়লেন অসংখ্য যাত্রী। দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ল বিভিন্ন পণ্য ও যাত্রিবাহী গাড়ি। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। এখনও পর্যন্ত কোনও পক্ষই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। যোগাযোগ করা হলে এসডিপিও (রামপুরহাট) জোবি থমাস কে দাবি করেন, ‘‘জাতীয় সড়কে অবরোধের কোনও খবর আমার জানা নেই।’’ তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ঘটনার নিন্দা করেছে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে হাপাতালের রোগী নিয়ে যাওয়ার গাড়িকে ঘিরে গণ্ডগোলের জেরে অবরোধ চলছিল। তার জেরে অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে এক রোগীর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। ওই দুর্ঘটনার জেরেই এসডিও-র নির্দেশে রামপুরহাট হাসপাতালে ‘প্রি-পেড অ্যাম্বুল্যান্স’ ব্যবস্থা চালু হয়। ওই ব্যবস্থায় নিয়ম মতো সিরিয়াল মেনে রোগী পায় প্রত্যেকটি অ্যাম্বুল্যান্স। ওই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হাসপাতাল চত্বরে থাকা গাড়িগুলির চালক ও মালিকদের তৃণমূল প্রভাবিত একটি সংগঠন রয়েছে। আবার হাসপাতালের বাইরেও বেশ কিছু গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। তারাও রোগীদের নিয়ে আসা-যাওয়ার কাজ করে। ওই সব গাড়ির চালক ও মালিকেরাও তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
হাসপাতাল চত্বরে থাকা প্রি-পেড অ্যাম্বুল্যান্স চালক ও মালিক সংগঠনের অভিযোগ, হাসপাতালের বাইরে থাকা জ্বালানি গ্যাস ভর্তি ওই গাড়িগুলি অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই রেফার হওয়া রোগীদের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনের সম্পাদক নাসিরুদ্দিন শেখ এ দিন বলেন, ‘‘এ নিয়ে শনিবার রাতে ওদের এক গাড়ি চালকের সঙ্গে আমাদের এক জনের সামান্য বচসা-ধাক্কাধাক্কি হয়। ওই ঘটনা রাতেই মিটে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও এ দিন সকালে ওরা হাসপাতাল চত্বরে এসে আমাদের এক গাড়ি চালককে মারধর করে।’’ তার পরে বাইরের গাড়ির সংগঠনের সদস্যেরাই জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করে বলে তাঁর দাবি।
এ দিকে, নাসিরুদ্দিনদের সংগঠনের অভিযোগ মানতে চাননি হাসপাতালের বাইরে থাকা গাড়ি চালকদের তৃণমূল প্রভাবিত ইউনিয়নের সম্পাদক চকলেট শেখ। তুলেছেন পাল্টা মারধরের অভিযোগও। তাঁর দাবি, ‘‘হাসপাতাল থেকে রেফার হওয়া রোগীর আত্মীয়-পরিজনেরাই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের কথাতেই রোগীদের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। আর তার জন্য ভিতরের গাড়ির সংগঠনের লোকেরা আমাদের প্রায়-ই মারধর করে। এ দিন ওরা ফের মারধর করতেই আমাদের ছেলেরা ক্ষুব্ধ হয়।’’ মারধরের প্রতিবাদেই কয়েক জন জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন বলে তিনি জানান।
দলের শ্রমিক সংগঠনের সদস্যেরা অবরোধে সামিল হলেও তার নিন্দা করেছে তৃণমূল। দলের আইএনটিটিইউসি-র জেলা কোর কমিটির সদস্য তথা রামপুরহাট মহকুমার প্রাক্তন সভাপতি নবগৌরাঙ্গ দাস বলেন, ‘‘দুই গাড়ি চালকের মধ্যে গণ্ডগোল। তার জন্য নেতৃত্বের অনুমতি না নিয়ে এ ভাবে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা অন্যায় হয়েছে। ঘটনার কথা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনকে জানানো হয়েছে।’’ ঘটনায় কড়া বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। তাঁর সাফ কথা, ‘‘তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে সংগঠনের সদস্যেরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে থাকলে, আমরা তা বরদাস্ত করব না। যারা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দল কড়া ব্যবস্থা নেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy