টানা দু’দিনের নিম্নচাপ পার করে রোদের ঝিলিক দেখা গেল মঙ্গলবার। তবে নিম্নচাপের জের কাটেনি এ দিনও। বাঁকুড়ার পাত্রসায়র, ইন্দাস ব্লকের বেশ কিছু গ্রাম এখনও জলমগ্ন। জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলিতে যান চলাচল শুরু হলেও বাঁকুড়া-পুরুলিয়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক এ দিনও বন্ধ ছিল। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানান, পোয়াবাগানের কাছে এই জাতীয় সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তা মেরামতি শুরু হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিভিসি-র দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার ফলে পাত্রসায়র ব্লকের খোসালপুর, পাঁচপাড়া, চরগোবিন্দপুর এবং ইন্দাস ব্লকের ভাবাপুর, সোনারপুর গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় এই সব এলাকার মানুষ কার্যত ঘরবন্দি। বহু জায়গায় নামেনি জলও। জলমগ্ন এই গ্রামগুলিতে ত্রাণ শিবির চালু না করা হলেও শুকনো খাবার, ওষুধপত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে প্রশাসন। ওই সূত্র জানাচ্ছে, নিম্নচাপের জেরে জেলার বিভিন্ন ব্লকের ১৮২টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত, ২ হাজার ৩৯১টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শালি নদীর জলের তোড়ে ভেঙে পড়েছে সোনামুখী ব্লকের শালদহ গ্রামের কালর্ভাট। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন দরিয়াপুর, মির্জাপুর, বন পাথরা ইত্যাদি গ্রামের বাসিন্দারা। একই ভাবে বাঁশের সেতু ভেঙে পাত্রসায়র ব্লকের গোস্বামী গ্রাম, ভেটিয়া ও ইন্দাস ব্লকের ভগবতীপুর গ্রামও প্রায় বিচ্ছিন্ন। ঘুরপথে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের। সোনামুখীর বিডিও রিজিওয়ান আহমেদ বলেন, ‘‘শালদহ গ্রামের কালর্ভাটটি মেরামতির জন্য জেলা পরিষদকে বলা হয়েছে। লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা এখন পিয়ারবেড়া হয়ে অনেকটা ঘুরে আসা-যাওয়া করতে বাধ্য হচ্ছেন।’’ কেশিয়াকোল এলাকার প্রাইমারি স্কুলের ত্রাণ শিবিরে শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেরই বাড়ি থেকে জল নেমে গেলেও বাড়িতে ঢোকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
সোমবার চোখের সামনে নিজের একতলা পাকাবাড়ি গন্ধেশ্বরীতে তলিয়ে যেতে দেখেছিলেন বাঁকুড়ার কেশিয়াকোলের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শম্ভুচরণ গরাই। নিজের বাড়ি হারিয়ে দাদার বাড়িতে সপরিবার উঠেছেন তিনি। এ দিন সেই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “জলের তোড়ে ঘরটা নদীতে তলিয়ে গেল। চেয়ে চেয়ে শুধু দেখলাম। কিচ্ছু করতে পারলাম না!’’
এ দিকে, প্রবল বৃষ্টি ও নদনদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় সোমবার রানিগঞ্জ-বাঁকুড়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক, বাঁকুড়া-পুরুলিয়া ৬০-এ জাতীয় সড়ক-সহ সোনামুখী-বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বাঁকুড়া-পুরুলিয়া জাতীয় সড়ক ও বিষ্ণুপুর সোনামুখী রাস্তা ছাড়া বাকি রাস্তাগুলিতে যান চলাচল করছে। জাতীয় সড়কেও দ্রুত যান চলাচল শুরু হবে বলে আশাবাদী জেলাশাসক।