শোকস্তব্ধ পরিজন। নিজস্ব চিত্র।
খালাসি চিৎকার করছেন গেটের কাছে গলা বাড়িয়ে, ‘‘সরে যান, সরে যান’’, সরে যাওয়ার আগে পিষে দিল বাস!
হুড়মুড়িয়ে রাস্তার ধারে দাঁড় করানো দুটি বাইকও চাকার তলায়। চাকার তলায় চলে যাচ্ছে ভ্যানো। লোকজন ছুটছে। ফুটপাতের দোকান থেকে বেরিয়ে পড়ে পড়িমরি দৌড় দিচ্ছেন দোকানি। ব্রেকফেল হয়ে বাস এগোচ্ছে, সামনেই তিন মহিলা হাঁটছিলেন। একজনের কোলে এক শিশুকন্যা। বেমালুম পিষে দিল চারজনকেই! একটু পরেই আরও একজন। শনিবার, মকর সংক্রান্তির দিন দুপুরে বারোটা নাগাদ ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ইলামবাজারের জয়দেবমোড়ের কাছে। ‘ব্রেকফেল’ যাত্রীবাহী বেসরকারি বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে মৃত্যু হল তিন মহিলা ও এক শিশু-সহ পাঁচ জনের। ঘটনায় জখম এক সিভিক ভলেন্টিয়ার-সহ বেশ কয়েকজন পথচারিও।
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় মৃতেরা হলেন বাসন্তী দাস (৪২), তাঁর পুত্রবধূ ইতু দাস (২৩), ইতুদেবীর মেয়ে এগারো মাসের মেঘা দাস, বাসন্তীদেবীর ভাগ্নের বউ তৃপ্তি সাহা (২৩) এবং শেখ নাইমূল (৩৫)। বাড়ি জয়দেব এলাকায়। ঘটনার খবর পেয়ে, আহত এবং নিহতদের পরিবারের লোকজন হাসপাতালে ভিড় জমান। বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল স্থানীয় সুপুরের বাসিন্দা অনুসূয়া দাস এবং তাঁর স্বামী কৃপাসিন্ধু দাস বছর পাঁচেকের ভাইঝি, আহত কোয়েল দাসকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন। অনুসূয়াদেবী বলেন, ‘‘দু’ ভাইঝি ও দুই বৌদি ইতু এবং তৃপ্তিকে নিয়ে মা স্থানীয় শিমুলতলায় বুড়ো মিলনমেলায় যাচ্ছিলেন। ওই ঘাটে স্নান সেরে প্রসাদ নেওয়ার কথা ছিল। বাবা বিশ্বনাথ দাসের চায়ের দোকানে দেখা করে যাওয়ার আগেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা।’’
রাস্তা পারাপার করার জন্য বছর পাঁচেকের মেয়ে অর্চনাকে নিয়ে ইলামবাজার ট্রাফিক স্ট্যান্ডের কাছে অপেক্ষা করছিলেন পায়েরের বাসিন্দা ঝর্ণা দাস। তাঁর চোখে মুখে আতঙ্ক।
বলছিলেন, ‘‘আচমকা সামনের একটি ভ্যানোকে ওই বাসটি ধাক্কা মারে এবং আমাদের দিকে এগোতে থাকে। আমরা পড়িমরি করে কোনও মতে সরতে না সরতে গাড়ির ধাক্কায় মেয়ে আহত হয়েছে। তার পরেই গাড়ি থামাতে গিয়ে দেখি বাসের ধাক্কা পড়ে গেল সিভিক ভলেন্টিয়ার।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার জয়দেবে যাত্রী নামিয়ে ফের যাত্রী নেওয়ার উদ্দেশ্যে বোলপুরের দিকে ফিরছিল বোলপুর-লাঙ্গলহাটা রুটের ওই বেসরকারি যাত্রীবাহী বাসটি। ইলামবাজার ট্রাফিক স্ট্যান্ডের তিনশো মিটার আগে জয়দেব মোড়ে বাসটির ব্রেক ফেল হয়। চালক নিয়ন্ত্রণ হারানোয় মুখ্য রাস্তার ওপর ধাক্কা মারতে মারতে এগোতে থাকে বাস। একটি ভ্যানো, দুটি বাইক, একটি চার চাকার গাড়িকে ধাক্কা মেরে এগোতে থাকে। দেখতে দেখতে রাস্তা পারাপারের জন্য অপেক্ষা করা লোকজনকে পিষে দেয়! ট্রাফিক স্ট্যান্ডে ধাক্কা মেরে বাস থামে।
ঘটনা হল, জেলার বোলপুর মহকুমায় চলতি মাসের ৯ তারিখ থেকে চলছে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ। প্রশ্ন উঠছে, ভিন্ন রুটের বাস কী করে জয়দেব রুটে চলার পারমিট পেল, সে নিয়ে। বোলপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি সুজিত মণ্ডল বলেন, ‘‘মেলাতে অনুমতি নিয়ে বাস চালালো হয় তবে এই বাসটির ক্ষেত্রে কী ঘটেছে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
ঘটনার পরই চালক ও খালাসি চম্পট দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy