ভরসা সাবমার্সিবল পাম্পের জল। ওন্দার সানতোড় গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
সেচের জল মিলবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। বোরোর বীজতলা তৈরি নিয়েও চিন্তা বাড়ছিল চাষিদের। অবশেষে সেই জট কাটল।
বাঁকুড়ার উপ কৃষি অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র জানিয়েছেন, আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে রবিশস্যের জন্য ও ২৬ জানুয়ারি থেকে বোরো চাষের জন্য জল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিভিসি। এর ফলে ডিভিসির সেচ প্রকল্পের আওতায় থাকা বাঁকুড়া জেলার চারটি ব্লকের প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর জমি জল পাবে। সোমবার বর্ধমান সার্কিট হাউসে ডিভিসির কর্তাদের সঙ্গে প্রশাসনিক কর্তাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অন্য দিকে, কংসাবতী সেচ প্রকল্প থেকে চাষের জন্য জল ছাড়া নিয়ে বুধবার বাঁকুড়ার কংসাবতী সেচ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কৃষি কর্তাদের বৈঠক হয়। সুশান্তবাবু জানান, বৈঠকে স্থির হয়েছে ১৮ জানুয়ারি, ১৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৮ মার্চ মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে কংসাবতী সেচ দফতর বোরো চাষের জন্য জল ছাড়বে। তবে এপ্রিলে তারা জল ছাড়তে পারবে না বলে জানিয়েছে। তাতে বোরোর ফলনে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি দফতর।
বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ ও পূর্ব দিকের একাংশ যেমন কংসাবতীর উপরে নির্ভরশীল, তেমনই উত্তর ও পূর্ব দিকের অন্য অংশ দামোদরের উপরে ভরসা করে। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, বাঁকুড়া জেলার দামোদর নদের পার্শ্ববর্তী বড়জোড়া, পাত্রসায়র, ইন্দাস ও সোনামুখী ব্লক ডিভিসি থেকে সেচের জল পায়। এই ব্লকগুলিতে বোরো ধান চাষ ডিভিসির জলের উপরে নির্ভরশীল। জেলা জুড়ে প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়, যার প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর রয়েছে ওই চারটি ব্লকে।
চাষিরা জানান, বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করতে কম-বেশি ৫০ দিন সময় লাগে। বীজতলা তৈরির খরচও নেহাত কম নয়। এই ধান চাষে সেচের জলই ভরসা। ফলে বীজতলা তৈরির পরে, সেচের জল না মিললে ধান মাঠেই মারা যাবে। তাই চাষ শুরুর আগেই চাষিরা সেচের জল মিলবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত হতে চাইছিলেন।
অবশেষে জল মেলার খবরে খুশি চাষিরা। সোনামুখীর পূর্বনবাসন গ্রামের চাষি নিতাই গড়াই, নিত্যানন্দ দেবনাথ, পরেশ বাগদিরা বলেন, “খরচ করে বীজতলা তৈরি করে সেচের জল না পেলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। অতীতে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাই এখনও বোরো চাষের জন্য বীজতলার কাজই শুরু করিনি। এ বার শুরু করব।”
চাষের জন্য জল পাওয়ার খুশি কংসাবতী সেচ প্রকল্পের উপরে নির্ভর করে থাকা খাতড়া মহকুমার আটটি ব্লক-সহ বাঁকুড়া ১, ওন্দা, বিষ্ণুপুর, জয়পুর ও কোতুলপুর ব্লকের বোরো চাষিরাও। তবে এপ্রিলে কংসাবতী জল ছাড়ার সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়ায় সবাই উদ্বেগে। যদিও কংসাবতী সেচ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মুকুটমণিপুরের জলাধারে জলের পরিমাণ কম থাকায় এপ্রিলে চাষের জন্য জল দেওয়া সম্ভব নয়।’’
সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘এপ্রিল মাসে জল ছাড়াটা বোরো চাষের পক্ষে খুবই দরকার ছিল। কিন্তু কংসাবতী কর্তৃপক্ষ ওই সময়ে জল দিতে পারবেন না বলায়, বৃষ্টির উপরে নির্ভর করতে হবে চাষিদের। সে সময়ে বৃষ্টি না হলে ফলনে তার খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy