Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Elephant attack

হাতির হানায় মৃত্যুতে টাকার সঙ্গে চাকরিও

হাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে আড়াই লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের সাথে তাঁদের পরিবারের এক জনকে এ বার স্পেশাল হোমগার্ডের পদে চাকরিও দেওয়া হবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২০ ০৪:২৯
Share: Save:

হাতির হানায় মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়িয়ে আড়াই লক্ষ টাকা করেছে তৃণমূলের সরকার। এ বার মৃতের পরিবারের এক জনকে স্পেশাল হোমগার্ড পদে চাকরি দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার ঘোষণা করায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পেলেন বাঁকুড়ার হাতি উপদ্রুত এলাকার বাসিন্দারা। তবে একই সঙ্গে তাঁদের দাবি, একটা মানুষের জীবনের ক্ষতিপূরণ কয়েক লক্ষ টাকা আর চাকরিতে হতে পারে না। হাতিদের জেলায় ঢোকা পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করতে হবে।

এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসনের বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘হাতির আক্রমণে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও উত্তরবঙ্গে লোকজন মারা যান। আমরা তাঁদের পরিবারকে আড়াই লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে তাঁদের পরিবারের এক জনকে এ বার স্পেশাল হোমগার্ডের পদে চাকরিও দেওয়া হবে।’’

চলতি বছরে বাঁকুড়া জেলায় এখনও পর্যন্ত মোট ছ’জন হাতির হানায় মারা গিয়েছেন। দু’জন দক্ষিণ বনবিভাগের, তিন জন উত্তর বনবিভাগ ও এক জন বিষ্ণুপুর-পাঞ্চেত ডিভিশনের।

এই জেলার বিষ্ণুপুর, সোনামুখী, বড়জোড়া, গঙ্গাজলঘাটি ব্লকে হাতির হানা বেশি। আবার ঝাড়গ্রাম পার হয়ে জেলার খাতড়া মহকুমার জঙ্গলমহলের ব্লক রাইপুর, রানিবাঁধ, সারেঙ্গাতেও হাতি ঢুকছে। ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। জেলায় ৩৮টি হাতির একটি দল এই মুহূর্তে বেলিয়াতোড়ের বৃন্দাবনপুর বিটের জঙ্গলে অবস্থান করছে। চারটি ‘রেসিডেন্ট’ হাতি রয়েছে। যার মধ্যে দু’টি বেলিয়াতোড়ে আছে। এ ছাড়া, বড়জোড়া ও বাঁকুড়া উত্তর রেঞ্জে একটি করে ‘রেসিডেন্ট’ হাতি রয়েছে। বন দফতরের দাবি, আগের থেকে এই জেলার হাতির হানা গত কয়েক বছরে কিছুটা কমেছে।

আবার পুরুলিয়ায় ঝাড়খণ্ড থেকে আসা হাতির হানা গত কয়েকবছরে বেড়েছে। এ বছরেই পুরুলিয়া জেলার চার জন হাতির হানায় মারা গিয়েছেন। হাতি উপদ্রুত এলাকাগুলি হল: বাঘমুণ্ডি, ঝালদা, কোটশিলা, আড়শা, বলরামপুর, বান্দোয়ান ও বরাবাজার।

মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণার পরে, ‘হাতি সমস্যা স্থায়ী সমাধানের লক্ষে সংগ্রামী গণমঞ্চ’-এর বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক শুভ্রাংশু মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘হাতির হানায় মৃতের পরিবারের এক জনকে সরকারি চাকরি দেওয়ার দাবি আমরা দীর্ঘদিন ধরেই তুলে আসছি। ২০১৭ সালে মুখ্যমন্ত্রীও ঘোষণা করেছিলেন, হাতির হানায় মৃতের পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়ার কথা। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে, কাজের কাজ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ভরসা পাচ্ছি না।’’

তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় হাতি উপদ্রুত এলাকার বাসিন্দারা অনেকেই খুশি। গঙ্গাজলঘাটির কুঁকড়াঝোড়ের বাসিন্দা শম্পা পাল মণ্ডল বলেন, ‘‘২০১৬ সালে এক সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে গ্রামের স্কুলের কাছে হাতির হানায় আমার স্বামী আশিসকুমার মণ্ডলের (২৬) মৃত্যু হয়। বর্তমানে সাত বছরের ছেলে ও বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সংসার টানতে খুব সমস্যায় রয়েছি। স্বামীর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণের আড়াই লক্ষ টাকা কবেই ফুরিয়ে গিয়েছে। ছেলেকে পড়াশোনা করাতে হিমশিম খাচ্ছি। এই সময়ে একটা চাকরি পেলে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাব।’’

ঝালদা থানার পুস্তি পঞ্চায়েতের ভাকুয়াডি গ্রামের বাসিন্দা মথুর লোহার তাঁর ছেলে সুভাষ লোহারকে ভোরের ট্রেন ধরাতে মোটরবাইকে যাচ্ছিলেন। ২০১৯-র ডিসেম্বরের ভোরে আচমকা হাতির সামনে পড়েন তিনি। মথুরবাবুকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে মেরে ফেলে হাতি।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার প্রেক্ষিতে সুভাষবাবু বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে গিয়েছি। এখানও অনেকের প্রাণ যাচ্ছে। তাই চাকরির প্রস্তাব বেশ ভাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant attack Job Mamata Banerjee Purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE