Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রচারে সুফল, আটকে রেখেও হল না মারধর

শনিবার বিকেলেই  বছর ছাব্বিশের এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে  উদ্ধার তাঁর পরিবারের কাছে  ফিরিয়ে দিয়ে মানবিক মুখের পরিচায় দিয়েছে কাঁকরতলা থানা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁকরতলা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৫৪
Share: Save:

এলাকায় অপরিচিত কাউকে দেখলে ছেলেধরা গুজব ছড়াবেন না বা ধরে মারধর করবেন না। পুলিশে খবর দিন। দিন কয়েক ধরেই এলাকায় এমন প্রচারে চালিয়েছিল পুলিশ। লাগাতার প্রচারে যে কাজ হয়, সেটা বিলক্ষণ বুঝেছে বীরভূমের কাঁকরতলা থানার পুলিশ। গত এক সপ্তাহে এক কিশোর-সহ মানসিক ভারসাম্যহীন চার জনকে উদ্ধার করে কাউকে হোমে, কাউকে মানসিক হাসপাতাল, কাউকে বা বাড়ি পাঠাতে সক্ষম হয়েছে ওই থানা। এটা সম্ভব হয়েছে প্রচারের জেরে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ার জন্য।

শনিবার বিকেলেই বছর ছাব্বিশের এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে উদ্ধার তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে মানবিক মুখের পরিচায় দিয়েছে কাঁকরতলা থানা। গত চার বছর ধরে নিঁখোজ ছিলেন গোবিন্দ শ্রীবাস্তব নামে ওই যুবক। তাঁর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের মুঘলসরাইয়ের (অধুনা দীনদয়াল উপাধ্যায় নগর) ভেলুপুর থানা এলাকায়। এত বছর পরে ভাইকে ফেরত পেয়ে পেয়ে আপ্লুত গোবিন্দের দাদা নন্দলাল শ্রীবাস্বব। তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেন পুলিশকে। শনিবার রাতেই তাঁরা বাড়ি ফিরেছেন। আসানসোল স্টেশন থেকে তাঁদের ট্রেন ধরিয়ে দেন কাঁকরতলা থানার পুলিশকর্মীরাই।

পুলিশ ও গোবিন্দের পরিবার সূত্রে খবর, বছর চারেক আগে হঠাৎই একদিন বেপাত্তা হয়ে যান গোবিন্দ। উৎকন্ঠায় পড়েন তাঁর গোটা পরিবার। বহু খোঁজাখুঁজির পরেও সন্ধান মেলেনি। শুক্রবার রাতে কাঁকরতলা থানার পুলিশ খবর পায়, বড়কোলা গ্রামে এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু, মারধর করা হয়নি। তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসার পরেই ওই যুবককে বাড়ি ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেন ওসি জহিদুল ইসলাম। ওই যুবককে স্নান করিয়ে, নখ-চুল কাটিয়ে খাবার খেতে দেয় পুলিশ। একটু সহজ হলে ওই যুবক তাঁর বাড়ির কাছের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বলতে পারেন।

সেই সূত্রে ধরে প্রথমে চাইল্ড লাইন এবং মুঘলসরাইয়ের স্থানীয় থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করে যুবকের বাড়ির সন্ধান পায় কাঁকরতলা থানা।

তবে শুধু গোবিন্দ শ্রীবাস্তবই নয়, আরও তিন জনকে উদ্ধার করেছে কাঁকরতলা থানা। থানা সূত্রের খবর, চলতি মাসের ১৩ তারিখ তারা খবর পায়, এলাকার ভবানীগঞ্জে বছর ষোলোর কিশোরকে ছেলেধরা সন্দেহে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে রামপুরহাট হোমে পাঠায় পুলিশ। কিন্তু এ ভাবে কাউকে সন্দেহ হলে তাঁর উপরে অত্যাচার যাতে এলাকার মানুষ না করেন, সেটা নিয়ে প্রচার চালায় কাঁকরতলা থানা। তাতে ফল মেলে।

এর পরে একই ভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন শ্যামাপদ মুর্মু নামে এক আদবাসী যুবককে উদ্ধার করে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া এবং সনু সিংহ নামে আর এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে উদ্ধার করে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ওসি জহিদুল ইসলামের প্রচেষ্টায়।

জনসাধারণের মনে সচেতনতা তৈরি করার পাশাপাশি মানবিক মুখ দেখানোয় কাঁকরতলা থানার উদ্যোগে খুশি জেলা পুলিশের কর্তারাও। তাঁরা বলছেন, ‘‘সন্দেহ হলেই কাউকে ধরেবেঁধে মার, আইন হাতে তুলে নেওয়া যে অন্যায় ও আইনবিরোধী কাজ, তা বোঝাতে লাগাতার প্রচার চালানো হচ্ছে। সেই প্রচার যে কাজে এসেছে, সেটা জেনে ভাল লাগছে। কাঁকরতলার ওসি-ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাল কাজ করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kankartala Lynching Campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE