Advertisement
E-Paper

রঘুনাথপুরেই অপহরণের নালিশ কেন?

সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির জেতা সদস্য সৌমেন মণ্ডলকে গোবাগ থেকে বৃন্দাবনপুরের বাড়িতে ফেরার পথে রামকানালির কাছ থেকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়  তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে তৃণমূলে যোগ দেওয়াতে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি নাটকীয় ভাবে পানাগড় সেনাছাউনিতে ঢুকে পড়ায় রক্ষা পান বলে দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৮ ০১:২৮

পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের দিন যত এগিয়ে আসছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে দলের জেতা সদস্যদের অপহরণ করে দলবদলের চেষ্টার অভিযোগে ততই সরব হচ্ছে বিজেপি। কয়েক সপ্তাহ আগে পাড়া পঞ্চায়েত সমিতির এক বিজেপি সদস্যকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল। পরের দিন তাঁর সঙ্গেই ওই পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির আরও এক সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন।

বৃহস্পতিবার সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তির অভিযোগ তুলল বিজেপি। তাঁদের দাবি, সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির জেতা সদস্য সৌমেন মণ্ডলকে গোবাগ থেকে বৃন্দাবনপুরের বাড়িতে ফেরার পথে রামকানালির কাছ থেকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে তৃণমূলে যোগ দেওয়াতে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি নাটকীয় ভাবে পানাগড় সেনাছাউনিতে ঢুকে পড়ায় রক্ষা পান বলে দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি।

বছর পাঁচিশের যুবক সৌমেন বিজেপির যুব মোর্চার সাঁতুড়ি ব্লকের অন্যতম সাধারণ সম্পাদকও। তাঁর দাবি, ‘‘দুষ্কৃতীরা তাঁকে একটি গাড়িতে বসিয়ে কলকাকায় নিয়ে যাচ্ছিল। পানাগড় সেনা ছাউনির কাছে তাঁরা গাড়ি থামিয়ে প্রস্রাব করতে নামেন। সৌমেনও নেমেছিলেন। তাঁর দাবি, ‘‘একটা রাস্তা থেকে সেনার গাড়ি বার হতে দেখে মনে হয়েছিল কাছেই পানাগড়ের সেনা ছাউনি। সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সড়ক পার করে ছুট লাগাই ওই রাস্তার ধরে। ধাওয়া করে লোকগুলোও। কয়েকশো মিটার পথ টুকু কোনওরকমে ছুটে গিয়ে ছাউনির দরজার কাছে যেতেই চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। জওয়ানেরাই আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সব জানার পরে বাড়ির লোকেদের সঙ্গে ফোনে কথা বলায়। দুপুরে বাড়ির লোকজন ও দলের নেতারা আসার পরে ছাড়া হয়।’’

তবে, পঞ্চায়েত ভোটে ব্যালট বক্স লুঠ থেকে বোমাবাজি, গুলি ছোড়া, পুনর্গণনায় জেলা পরিষদের ফলাফল পাল্টে যাওয়ার মতো অনেক নতুন অভিজ্ঞতাই এ বার হয়েছে পুরুলিয়ার। বিজেপির অভিযোগ, এ বার বিরোধী দলের জয়ী সদস্যকে দলে টানতে শাসকদলের অপহরণ করাও দেখছেন পুরুলিয়াবাসী। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বড় ধাক্কা খেয়ে আসলে তৃণমূল জেলার সংস্কৃতিই ভুলে গিয়েছে বলে কটাক্ষ ছুড়ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই যেনতেন প্রকারে জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিজেপির হাত থেকে পঞ্চায়েত ও সমিতি কেড়ে নিয়ে বলপ্রয়োগের রাস্তা বেছে নিয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ।

নির্বাচনে পাড়া পঞ্চায়েত সমিতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েছিল বিজেপি। দুই সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বর্তমানে তা ত্রিশঙ্কু অবস্থায়। সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল ও বিজেপি ৬টি করে এবং সিপিএম একটি আসন পেয়েছিল। সিপিএমের জয়ী সদস্য বিজেপি শিবিরে যোগ দেওয়ায় বোর্ড গঠন করার ক্ষেত্রে এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি।

ঘটনা হল, এ বার জেলার ২০টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে পাঁচটিতে জিতেছে বিজেপি। জেলার ১৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫৯টিতেই জিতেছে বিজেপি। দখল করেছে জেলা পরিষদের ৯টি আসন (বিজেপির অবশ্য দাবি জেলা পরিষদের ১০টি আসনে জিতেছেন তাঁদের প্রার্থীরা)।

এই প্রেক্ষিতেই বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ ও প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের বিশেষ করে বিজেপির জেতা সদস্যদের ভয়, প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের দলে টানার খেলায় নেমেছেন শাসকদলের নেতারা। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা পুরুলিয়াকে বিরোধীশূন্য করার কথা বলার পর থেকেই আমাদের জেতা সদস্যদের ভয়, প্রলোভন দেখানো থেকে জোর খাটানোর মাত্রা অনেক গুণ বেড়েছে।’’

বিজেপির সাঁতুড়ি ব্লক সভাপতি অরূপ আচার্যের অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির দখল পেতে মরিয়া হয়েই তৃণমূল সৌমেনকে অপহরণ করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ানোর জন্য কলকাতা নিয়ে যাচ্ছিল।’’

বিজেপির জেলা সভাপতির মন্তব্য, ‘‘পাড়া ও সাঁতুড়ির ঘটনাতেই স্পষ্ট, ক্ষমতা দখলের নেশায় জেলার রাজনৈতিক সংস্কৃতিই নষ্ট করতে শুরু করেছে তৃণমূল। ভবিষ্যতে এর ফল ভুগতে হবে তৃণমূলকেই।” জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, ‘‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা বিজেপির মুখে রাজনৈতিক সংস্কৃতি মানায় না। আমরাই পুরুলিয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতি বজায় রাখার কাজ করছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের শরিক হতে কেউ স্বেচ্ছায় আসতে চাইলে, আমরা বাধা দেব কেন?’’

Kidnap BJP TMC Panchayat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy