Advertisement
২১ মে ২০২৪
Drinking Water Crisis

জল সরবরাহে টান, বিজ্ঞপ্তি দিল পুরসভা

শহরের পানীয় জলের প্রধান উৎস কংসাবতী নদী। তেলেডি, শিমূলিয়া ও ডাবর-বলরামপুর— তিনটি ঘাটের পাম্পিং স্টেশন শহরবাসীর তৃষ্ণা মেটায়।

পুরুলিয়ার রাঁচী রোডের জল ট্যাঙ্কিমোড়ে জলের কলের সামনে ভিড়। শনিবার। ছবি: সুজিত মাহাতো

পুরুলিয়ার রাঁচী রোডের জল ট্যাঙ্কিমোড়ে জলের কলের সামনে ভিড়। শনিবার। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৩ ০৮:৩৮
Share: Save:

কংসাবতীতে জলস্তর নেমে যাওয়ায় পানীয় জল সরবরাহে সমস্যা দেখা দিয়েছে পুরুলিয়া শহরে। পরিস্থিতি এমনই যে, সমস্যার কথা জানিয়ে শহরবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে পুরসভা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তাতে কংসাবতীতে জলস্তর নেমে যাওয়া ও নদীগর্ভের মোটরপাম্প অকেজো হয়ে যাওয়ায় নিয়মিত জল সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে জানিয়ে শহরবাসীর সহযোগিতা প্রার্থনা করা হয়েছে।

পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি বলেন, “নদীগর্ভে একেবারে তলায় যেখানে পাম্পগুলি রয়েছে, তা চালালে হাওয়া ধরে নিচ্ছে। কারণ, সেখানে জলই জমা হচ্ছে না। কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষায় কিছুটা জল মিলছে। তবে তা চাহিদার অর্ধেকেরও কম। পাড়ার কলগুলিতেই জল সরবরাহ চালু রাখা হয়েছে। জল মিললে বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা হবে। পুরসভার তরফে গোটা পরিস্থিতি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।”

শহরের পানীয় জলের প্রধান উৎস কংসাবতী নদী। তেলেডি, শিমূলিয়া ও ডাবর-বলরামপুর— তিনটি ঘাটের পাম্পিং স্টেশন শহরবাসীর তৃষ্ণা মেটায়। পুরসভার পানীয় জল সরবরাহ বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, “ফেব্রুয়ারিতেই নদী শুকিয়ে যায়। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে বর্ষা আসা, অর্থাৎ জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত নদীবক্ষে বালির তলায় যে জল থাকে, তা-ই ভরসা।” বাড়তে থাকা জলের চাহিদার কথা ভেবে যদিও নদীবক্ষে বালির তলায় ‘ইনফিল্টিশেন গ্যালারি’ তৈরি করা হয়েছে। এতে বালির স্তরের তলায় কংক্রিটের আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে সঞ্চিত জল সংরক্ষণ করা হয়।

তবে, নদীবক্ষ থেকে বালির স্তর উধাও হয়ে যাওয়ায় ভরা গ্রীষ্মে শহরে জল-সমস্যা যে বাড়তে পারে, ফেব্রুয়ারিতে পাম্পিং স্টেশনের অবস্থা দেখতে গিয়ে আশঙ্কা করেন পুরপ্রধান থেকে পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের বাস্তুকারেরা। পুরপ্রধানের কথায়, “দিনের বেলাতেই দেখি, পানীয় জলের ঘাটের কাছাকাছি এলাকা থেকে ট্রাক্টরে বালি তোলা হচ্ছিল। ট্রাক্টর খালি করাতে বাধ্য করাই।”

জল-সমস্যার সেই আশঙ্কাই কার্যত সত্যি হল, জানাচ্ছেন বাস্তুকারেরা। নদীগর্ভে জলস্তর একেবারে তলানিতে ঠেকায় টান পড়েছে জলের ভাঁড়ারে। পুরসভা সূত্রে দাবি, গত বছর এ সময়ে নদীতে পাম্পিং স্টেশন সংলগ্ন এলাকাগুলি জুড়ে বালির যে স্তর ছিল, এ বারে তা আরও কমেছে। এক আধিকারিকের কথায়, “নদীর তলায় বিভিন্ন জায়গায় পাম্প বসানো রয়েছে। বালির স্তরে সঞ্চিত থাকা জল চুঁইয়ে তলায় জমা হয়। সেই জল তুলে সরবরাহ করা হয়। গত বছর পর্যন্তও জল সরবরাহ হয়েছে। এ বারে অবস্থা আরও খারাপ। মার্চের মাঝামাঝি বড় বৃষ্টি হয়েছিল। তার পরে থেকে কালবৈশাখীও নেই।”

এ দিকে, পাড়ার কল থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মানুষজন। এক কলসি জল পেতেও দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে দাবি। শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কৃষ্ণা রায় বলেন, “জলের জন্য দিনভর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কলে জল আসার কোনও ঠিক নেই। বাধ্য হয়ে রাঁচী রোডের জলট্যাঙ্কে গিয়ে থেকে জল নিতে হচ্ছে।” ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নিমটাঁড়ের বাসিন্দা শেখ মুন্না জানান, দু’দিন ধরে জল নেই। একই দাবি ভাটবাঁধের বাসিন্দা সুরভি পাল, কাজল লোহারদেরও। কেউ টোটো, কেউ সাইকেল বা মোটরবাইক নিয়ে জল সংগ্রহে এ দিক ও দিক ছুটছেন। শুক্রবারও শহরের বেশির ভাগ বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ ছিল। কেবলমাত্র পাড়ার কলে জল মিলেছে। দু-একটি ওয়ার্ডের কিছু এলাকায় আবার পাড়ার কলও ছিল শুকনো। সমস্যা মেনে পুরপ্রধান বলেন, “শহরবাসীর কাছে অনুরোধ, যেটুকু জল মিলবে, তা কেবলমাত্র পানীয় হিসেবে ব্যবহার করুন। সবারই দেখা দরকার, কোথাও কলের মুখ না থাকা বা অন্য কারণে যেন জল নষ্ট না হয়।” বৃষ্টি না নামা পর্যন্ত পরিস্থিতির বদল হওয়া মুশকিল বলে দাবি তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drinking Water Crisis Kangshabati River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE