গ্রামে কোনও বিদ্যালয় ছিল না। পূর্ব পুরুষদের দেওয়া জমিতে গড়ে উঠেছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই জায়গারই ১৪ শতকে একসময় তাঁদের অনুমতিতে গড়ে ওঠে জুনিয়র হাইস্কুল। সম্প্রতি সেই জুনিয়র স্কুলটি থেকে হাইস্কুল গড়তে নতুন করে আরও ১৯ শতক জায়গা দিল একই পরিবারের উত্তরসূরিরা। মহম্মদবাজারের কবিলপুর গ্রামের ঘটনা। সম্প্রতি জমি দানের কাজ করে, কবিলপুরের সেই পাল ও মণ্ডল পরিবারের জানায়, ‘‘ভেবে দেখেছি, আমাদের বাপ-ঠাকুরদারা সঙ্গে করে কেউ জমি নিয়ে যাননি। আমরাও নিয়ে যাব না। তাই সমাজ চেতনার শুভ কাজে তাঁদের মতো আমরাও জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’
সে প্রায় ৬৫-৬৬ বছর আগের কথা। কবিলপুর গ্রামে তখন হাইস্কুল তো দূরের কথা, কোনও প্রাইমারি স্কুলও ছিল না। সে সময় গ্রামে অন্তত একটা প্রাইমারি স্কুল হওয়া দরকার ছিল। কয়েকদশক আগে গ্রামেরই বাসিন্দা স্বর্গীয় ননীলাক্ষ পালের স্ত্রী যশোমতীদেবী ও তাঁর জামাই মথুরানাথ মণ্ডল গ্রামে প্রাথমিক স্কুল গড়তে এক বিঘে জমি দান করেছিলেন। ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় মানুষজনের সিদ্ধান্তে ২০০৮-২০০৯ বছরে প্রাইমারি স্কুলের এক বিঘে থেকে ১৪ শতক জমি জুনিয়র হাইস্কুলের জন্য দেওয়া হয়। এবং স্থানীয়দের চেষ্টায় ২০০৯ সাল থেকেই গ্রামে জুনিয়ার স্কুল অর্থাৎ পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু হয়ে যায়। ২০১১-তে স্কুলটি সরকারি অনুমোদন লাভ করে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় তা বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে শুধু যে জায়গার সমস্যা তা নয়, আরও কিছু সমস্যা আছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, চারটি ক্লাস হলেও ঘরের সংখ্যা মাত্র তিনটি। এর মধ্যেই অফিসের আসবাবপত্র থেকে যাবতীয় কাগজপত্র রাখা হয়। টিফিনের সময় শিক্ষকদের বসার কোনও পৃথক ঘর নেই। ওই একই কারণে, কোনও গ্রন্থাগার পর্যন্ত করা যাচ্ছে না।’’ স্থানীয় বিডিও ও কিছু স্থানীয় মানুষজন দীর্ঘ দিন থেকে এ ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্কুলের দাবি, জমি বা জায়গার সমস্যার জন্য সে ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছিল না।
শেষ পর্যন্ত জমি সমস্যা সমাধানে ত্রাতার ভূমিকা নিলেন সেই পাল ও মণ্ডল পরিবারের সদস্যরা। প্রয়াত যশোমতীদেবীর দুই পুত্র মহিমা রঞ্জন ও সুষমা রঞ্জনদের(প্রয়াত) ছেলে কেশব ও অজিত এবং জামাই প্রয়াত মথুরানাথের তিন ছেলে কালী প্রসাদ, করালি প্রসাদ ও রামপ্রসাদরাই এগিয়ে আসেন। শুক্রবার তাঁরা মহম্মদবাজার বিডিও অফিসে গিয়ে হাইস্কুল গড়তে আরও ১৯ শতক জমি লিখে দেন। ফলে জুনিয়র হাইস্কুলের জমির পরিমাণ দাঁড়াল ৩৩ শতক।
শুধু তাই নয়, স্কুল লাগোয়া যে মাঠটিতে ছেলেরা খেলা করে, সেই মাঠটির জমিদাতাও পাল ও মণ্ডল পরিবার। শুক্রবার বিকেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে জমি দেওয়ার পর তাঁরা বলেন, ‘‘এ দিনই আনন্দবাজার পত্রিকায় স্কুল গড়তে সোতসালে জমি দেওয়ার খবরে আমরা আগ্রহী হই। বিডিও ও স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সঞ্জয়বাবুর প্রস্তাবে আমরা জমি দিতে রাজি হয়ে যাই।’’ তাঁরা আরও জানান, ‘‘পাশের খেলার মাঠটিও আমাদের পরিবারের জমি। প্রয়োজনে সেটিও দেওয়া হবে।’’
মহম্মদবাজারের বিডিও সুমন বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই এলাকায় শিক্ষার পরিবেশ আছে। কিন্তু স্কুলগুলি এত দূরে দূরে যে, যোগাযোগ বা যাতায়াতের কারণে ড্রপ আউটের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। অনেকদিন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম ওই জুনিয়র স্কুলের জায়গার ব্যাপারে। অনেককে বলেও ছিলাম। কারণ, আরও কিছুটা জায়গা পাওয়া গেলে স্কুলটিকে মাধ্যমিক স্তরে উত্তীর্ণ করা যাবে। ওই পরিবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এতে, দ্রুত সমস্যা মিটবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy