Advertisement
E-Paper

শেষদিন পংক্তিভোজে

জনশ্রুতি, কাটোয়ায় কেশব ভারতীর কাছে সন্ন্যাসধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পরে চৈতন্যদেব এসেছিলেন রাঢ় বঙ্গে। পথ ক্লান্ত চৈতন্যদেব তাঁদের গ্রামের যুগ্ম নিম-তমাল গাছের নীচে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এমনটা বিশ্বাস করেন, সিউড়ি ১ ব্লকের পানুরিয়া গ্রামের মানুষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
বিশ্রামতলাকে ঘিরে উৎসব। নিজস্ব চিত্র।

বিশ্রামতলাকে ঘিরে উৎসব। নিজস্ব চিত্র।

জনশ্রুতি, কাটোয়ায় কেশব ভারতীর কাছে সন্ন্যাসধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পরে চৈতন্যদেব এসেছিলেন রাঢ় বঙ্গে। পথ ক্লান্ত চৈতন্যদেব তাঁদের গ্রামের যুগ্ম নিম-তমাল গাছের নীচে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এমনটা বিশ্বাস করেন, সিউড়ি ১ ব্লকের পানুরিয়া গ্রামের মানুষ। মহাপ্রভূর সাক্ষ্য বহনকারী শতাব্দী প্রাচীন সেই নিম-তমাল গাছ এখনও বর্তমান। নাম বিশ্রামতলা। মহাপ্রভুর সেই আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতেই মাঘমাসের ত্রয়োদশীর দিন থেকে সাতদিনের উৎসবে মতে ওঠেন ওই গ্রামের মানুষ। বসে মেলা। ভিড় করেন কয়েক হাজার মানুষ। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে সেই উৎসব।

বাসিন্দাদের দাবি, উৎসবকে কেন্দ্র করে একটি ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠুক। ইতিমধ্যেই জেলাপরিষদের কাছে সেই প্রস্তাব পাঠিয়েছেন বিশ্রামতলা পরিচালন কমিটি ও স্থানীয়রা। জেলাপরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী বলছেন, ‘‘প্রস্তাব এসেছে গুরুত্ব দিয়ে আমরা বিষয়টিকে দেখছি।’’

শনিবার পানুরিয়া বিশ্রামতলা গিয়ে দেখা গেল, মেলা বসেছে আশ্রমের বেশ কিছুটা আগে থেকে। নিম-তমাল মন্দির ঘিরে এখন সুদৃশ্য ঝকঝকে মন্দির। প্রচুর মানুষের উপস্থিতি। প্রত্যেকের জন্যই পাত পড়ে প্রসাদের আয়োজন। পরিচালন কমিটির সম্পাদক শক্তিপদ নাথ, কোষাধ্যক্ষ মনোরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, সভাপতি অমিয় মুখোপাধ্যায়রা বলছেন, গ্রামের মানুষের সক্রিয় যোগদানে এতবড় আয়েজন সম্ভব। কর্মরত গ্রামের অনেকে এই সময়টা কাজে থেকে ছুটি নেন। প্রস্তুতি শুরু হয় এক মাস আগে থেকে। আশপাশের ৫০টি গ্রাম থেকে কার্যত মাধুকরি করেই ওঠে খরচ। দানও আসে ভক্তদের কাছ থেকে।

দুবরাজপুর সিউড়ি- সহ আশপাশের যত গ্রাম রয়েছে সব জায়গা থেকে মানুষ আসেন। যাঁরা এখানে আসেন তাঁরা এই জায়গা সম্পর্কে জানেন। সিউড়ির কাছ ঘেঁষে এমন একটি ধর্মীয় ক্ষেত্রে আরও মানুষ টানতেই পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার দাবি বলছেন স্থানীয়রা। ঠিক কোন পথে কাটোয়া থেকে বীরভূমে এসেছিলেন তার ইতিহাস নির্ভর তথ্য মেলে না। তবে লোকশ্রুতিকে মান্যতা দিয়েছে বৈষ্ণবদের দুটি গ্রন্থ কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর ‘চৈতন্য চরিতামৃত’ এবং বৃন্দাবন দাস ঠাকুরের ‘চৈতন্যভাগবত।’ তাতে উল্লেখ রয়েছে বক্রেশ্বর থেকে চার ক্রোশ আগে যুগ্ম নিম-তমাল বৃক্ষের নীচে পথক্লান্ত চৈতন্যদেব সপার্ষদ বিশ্রাম নিয়েছিলেন। পানুরিয়া গ্রামটি বক্রেশ্বর থেকে আট কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত।

বীরভূমের লোক-গবেষক আদিত্য মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘পানুরিয়ায় এসেছিলেন চৈতন্যদেব।’’ অন্যদিকে সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘চৈতন্যদেব পানুরিয়া ছাড়াও বোলপুরের কাছে বাহিরী এবং ইলামবাজারের পায়ের বা পদচিহ্ন গ্রামেও এসেছিলেন বলে লোকশ্রুতি রয়েছে। তবে ঠিক কোন পথে সেটা সেটা স্পষ্ট নয়।’’ এসব তথ্য সরিয়ে রেখে মেলায় আসেন অনেক মানুষ। তেমনই রেবতীরঞ্জন মণ্ডল, রাসবিহারী মণ্ডল, নিমাই গড়াই, রেখা পালরা বলছেন, ‘‘ইতিহাস নয়, বিশ্বাস থেকেই ফি বছর শান্তি পেতে আসি।’’

মেলা উৎসবের পাশাপাশি আশ্রমের মঞ্চে চলে কীর্তন। চৈতন্যদেবের রাঢ বঙ্গে আসা নিয়ে উপর একটি নৃত্যগীতি আলেখ্যে মঞ্চস্থ করবে সিউড়ি সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র সংস্কার ভারতী। নাম ‘রাঢ়ভূমে শ্রীচৈতন্য।’ সেখানে পানুরিয়া গ্রামে নিম তমালের ছায়ায় চৈতন্যদেব বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়টি থাকবে, জানিয়েছে সংস্থা। কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শেষ দিন বুধবার পংক্তিভোজে কয়েক হাজার মানুষ খাবেন।

Festival Food
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy