Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গলায় বাদাম,বন্ধ দম

ঘরে বসে বাটিতে চানাচুর খাচ্ছিল ছোট্ট ছেলেটি। হঠাৎ গলায় বাদাম আটকে শ্বাসরোধ মারা গেল সেই শিশু। শুক্রবার রাতে বিষ্ণুপুরে হাজরাপাড়ার ঘটনা। মৃত আড়াই বছরের ওই শিশুর নাম আয়ুষ অধিকারী। এই ঘটনায় শোক নেমে এসেছে এলাকায়।

আয়ুষ। নিজস্ব চিত্র

আয়ুষ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৭ ০২:০০
Share: Save:

ঘরে বসে বাটিতে চানাচুর খাচ্ছিল ছোট্ট ছেলেটি। হঠাৎ গলায় বাদাম আটকে শ্বাসরোধ মারা গেল সেই শিশু। শুক্রবার রাতে বিষ্ণুপুরে হাজরাপাড়ার ঘটনা। মৃত আড়াই বছরের ওই শিশুর নাম আয়ুষ অধিকারী। এই ঘটনায় শোক নেমে এসেছে এলাকায়।

শনিবার মৃত শিশুর মা সুজাতা অধিকারী বলেন, ‘‘সুস্থ-সবল ছেলেকে বাটিতে করে চানাচুরের বাদাম বেছে খেতে দিয়েছিলাম। ওর বাবার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে খেলার জন্য বায়না করছিল। তারই মধ্যে যে কী হয়ে গেল।’’ আয়ুষের বাবা পেশায় গাড়িচালক তারক অধিকারী বলেন, ‘‘বাদাম কোনও ভাবে গলায় আটকে ছেলেটা ছটফট করছিল। ভাইকে নিয়ে মোটরবাইকে করে সঙ্গে সঙ্গে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিয়ে যাই। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক একটি ইঞ্জেকশন দেন ছেলেকে। কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে ছেলেটা নেতিয়ে পড়ল।’’

তারকবাবুর অভিযোগ, চিকিৎসা ঠিক মতো হয়েছিল বলে তিনি মনে করেন না। তাঁর মতে, ডাক্তারবাবুরা আরও একটু যত্নবান হয়ে চিকিৎসা করতে পারতেন। যদিও তিনি কোথাও এ নিয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি।

আরও পড়ুন: সাবিত্রীর শিক্ষাব্রত

শনিবার সকালে হাজরা পাড়ায় আয়ুষের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, একটানা কেঁদে চলেছেন আয়ুষের মা ও ঠাকুমা। পড়শিরা তাঁদের সান্ত্বনা জানাচ্ছেন। আয়ুষের কাকা বামা অধিকারী বলছিলেন, ‘‘মোটরবাইকে খুব তাড়াতাড়ি ভাইপোকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না।’’ তিনি জানান, সারা বাড়িতে ছোট্ট ছেলেটা হেলে খেলে বেড়াত। এখন সেই বাড়ি খাঁ খাঁ করছে। শোকে হাঁড়িও চড়েনি।

প্রতিবেশী শঙ্করী গোস্বামী, রবিশঙ্কর দত্তদের ক্ষোভ হাসপাতালের উপরে। তাঁদের অভিযোগ, বিষ্ণুপুরে নামেই জেলা হাসপাতাল হয়েছে। কাজের মান বাড়েনি। ডাক্তারর মানসিকতার পরিবর্তন যত দিন না হচ্ছে, ততদিন এখানে চিকিৎসা মিলবে না। বিষ্ণুপুরের হাজরা পাড়ার আয়ুষের প্রতিবেশী তথা বাঁকুড়া জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক দেবু চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘আয়ুষের মৃত্যু দেখিয়ে দিল, হাসপাতালের বাইরেটা চকচক করলেও, বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের পরিষেবা তলানিতেই রয়ে গিয়েছে।’’

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ডিউটিতে ছিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অমিত মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘চিকিৎসার সুযোগই তো পাওয়া যায়নি। মৃত অবস্থায় শিশুটিকে ওঁরা জরুরি বিভাগে নিয়ে এসেছিলেন। শিশুটির পরিজন এবং স্থানীয় কাউন্সিলরের অনুরোধে ময়নাতদন্ত না করেই ছেড়ে দেওয়া হয়।’’ বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক দাবি করেছেন, ‘‘পরিকাঠামোর দিক থেকে আমাদের বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের কোনও ত্রুটি নেয়। কী ঘটনা ঘটেছে খতিয়ে দেখছি। তবে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকের উচিত ছিল শিশুটির নাম জরুরি বিভাগের রেজিস্ট্রারে নথিভুক্ত করা। দেহটির ময়নাতদন্তও করানো দরকার ছিল। কেন তা হয় নি, খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Nut Dies
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE