E-Paper

দিনে বরাদ্দ মাত্র দু’লিটার পানীয় জল

প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মেনে নেওয়া হয়েছে, দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানীয় জলের সমস্যা। জেলার বহু জায়গায়, বিশেষত পাথুরে এলাকায় ইতিমধ্যেই জলকষ্ট তীব্র আকার নিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ ০৮:০৮
দিনের বরাদ্দ জল নিয়ে বাড়ির পথে। রাজগ্রাম পঞ্চায়েতের আসমানপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

দিনের বরাদ্দ জল নিয়ে বাড়ির পথে। রাজগ্রাম পঞ্চায়েতের আসমানপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র Sourced by the ABP

সারাদিনে বরাদ্দ মোটে দু’লিটার পানীয় জল। সেটা সংগ্রহ করতেও রোদে ঘেমে হাঁটতে হয়, লাইনে দাঁড়াতে হয়। সরু ফিতের মতো জল পড়ে নলকূপ থেকে। এর বেশি জল সংগ্রহ করার উপায় নেই। কারণ, জলস্তর নেমে গেলে সেই নলকূপে সারা দিনই যে জল মেলে এমনটা নয়। জল সঙ্কটের এই চিত্র জেলার বেশ কিছু এলাকায়। বিশেষত পাথর শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা নিত্যদিন দু’ফোঁটা পানীয় জলের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মেনে নেওয়া হয়েছে, দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানীয় জলের সমস্যা। জেলার বহু জায়গায়, বিশেষত পাথুরে এলাকায় ইতিমধ্যেই জলকষ্ট তীব্র আকার নিয়েছে। নলকূপ এমনকি পাম্পও কাজ করছে না মহম্মদবাজার ও মুরারইয়ের বেশ কিছু এলাকায়।

জলকষ্টে ভুগছে জেলার পাথর শিল্পাঞ্চলের বনরামপুর, শ্রীরামপুর,অসমানপুর গ্রাম ছাড়াও বেশ কয়েকটি গ্রাম। প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও কোনও সমাধান হচ্ছে না বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত ভোটের আগে জল সমস্যা না মিটলে আন্দোলনে নামার হুমকিও দিয়েছেন বাসিন্দাদের একাংশ।

পানীয় জলের জন্য তপ্ত দুপুরে এক কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয় এই এলাকার বাসিন্দাদের। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে এই সব এলাকায় জলস্তর এতটাই নেমে যায় যে নলকূপে জল ওঠে না।বিশেষ করে আদিবাসী গ্রামে জল সমস্যা অত্যধিক। অধিকাংশ নলকূপ বিকল হয়ে পড়ে আছে। পাম্পও কাজ করে না অনেক সময়। পুকুরগুলিতেও কাপড় কাচা বা বাসন মাজার মতো জলটুকুও থাকে না। বাধ্য হয়ে গ্রাম থেকে দূরে পাথর খাদানের জল নিয়ে এসে জলসমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে স্থানীয়েরা জানান।

মহম্মদবাজার পঞ্চায়েতের পাঁচ নম্বর সংসদের বাসিন্দারাও অভিযোগ করেছেন, এলাকার একটিমাত্র টিউবওয়েলে এক-আধ বারের বেশি জল বেরোচ্ছে না। যাঁদের বাড়িতে পাম্প রয়েছে, তাঁদের কাছ থেকে প্রতিবেশীরা মাসে ২০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিয়ে জল কিনছেন। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জলের ব্যবস্থা করা হলেও সেটি বাউড়ি পাড়া পর্যন্ত যাচ্ছে। পাশাপাশি অন্য এলাকার বাসিন্দারা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে পাম্পের মাধ্যমে জল তোলা হচ্ছে তাতে ওই দূরত্বের বেশি জল পৌঁছনো যাচ্ছে না।

মুরারইয়ের আসমানপুর গ্রামের মৌমিতা খাতুন, বাসেরুন বিবি বা মহম্মদবাজার মুসলিমপাড়ার সেলিনা বিবি, সরিফা বিবিদের সমস্যাটা এক। তাঁদের ক্ষোভ, ‘‘এই সমস্যা তো নতুন নয়। তবে কেন এতদিন প্রশাসন পদক্ষেপ করল না!’’ মৌমিতারা বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে কত প্রতিশ্রুতি। ভোট পেরিয়ে গেলে কে আর মনে রাখে যে খাওয়ার জলটুকুও পাই না আমরা!’’

আশ্বাস মিলেছে এ বারও। মুরারইয়ের বিধায়ক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘‘পাথুরে এলাকা হওয়ায় জলস্তর নেমে গিয়েছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের জন্য সরকারি বিধিনিষেধ আছে। ভোটের পরে রাজগ্রাম পঞ্চায়েতের সমস্ত বুথে জল সরবরাহ স্বভাবিক হয়ে যাবে।" আর মহম্মদবাজার পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান উমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘সমস্যা হচ্ছে জানি। আমরা পাশেই মাছ বাজারে আরও একটি বড় সাবমার্সিবলের কাজ শুরু করেছি। ওই কাজ শেষ হলে এতদঞ্চলে আর পানীয় জলের সমস্যা থাকবে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Drinking Water Crisis Birbhum water problem

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy