Advertisement
E-Paper

ভোটের মুখে হামলার অভিযোগ বিজেপির

ইলামবাজার বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি পৌঁথনোর পরেই ওই মিছিল থেকে কয়েক জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বিজেপির অফিসে হামলা চালায়। ভেঙে দেওয়া হয় টেলিভিশন, টেবিল, শ’খানেক চেয়ার, আসবাবপত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২২
বিধ্বস্ত: বিজেপির অফিসে ভাঙচুর। ইলামবাজারে। নিজস্ব চিত্র

বিধ্বস্ত: বিজেপির অফিসে ভাঙচুর। ইলামবাজারে। নিজস্ব চিত্র

ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলল বিজেপি। ইলামবাজার থেকে সাঁইথিয়া, সিউড়ি— বিজেপি অফিসে হামলা, দলীয় কর্মীদের মারধর, জিনিস ভাঙচুরের নালিশ জানালেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। তবে অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা বিজেপিকেই নিশানা করেছে তৃণমূল। দলের অভিযোগ, প্রচার পেতেই এমন কথা রটানো হচ্ছে। বিজেপির হামলায় তৃণমূলের কর্মী জখম হয়েছেন বলেও নালিশ তুলেছে শাসকদল।

বিজেপির অভিযোগ, শনিবার সকালে তৃণমূলের একটি মিছিল ইলামবাজারে ওই দলের কার্যালয় থেকে বের হয়েছিল। মিছিলে ৫০০-৬০০ তৃণমূল কর্মী শামিল হন। অভিযোগ, ইলামবাজার বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি পৌঁথনোর পরেই ওই মিছিল থেকে কয়েক জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বিজেপির অফিসে হামলা চালায়। ভেঙে দেওয়া হয় টেলিভিশন, টেবিল, শ’খানেক চেয়ার, আসবাবপত্র। ছিঁড়ে ফেলা হয় দলীয় পতাকা। মারধর করা হয় সেখানে থাকা কয়েক জন বিজেপি সমর্থককে। বিজেপির ইলামবাজার ব্লক সাধারণ সম্পাদক সুকদেব বিশ্বাস বলেন, ‘‘তৃণমূলের মিছিল চলাকালীন আমাদের দলীয় অফিসে কয়েক জন কর্মী বসেছিলেন। আচমকা তৃণমূলের পতাকা হাতে কয়েক জন অফিসে হামলা চালায়। আমাদের কর্মীদের মারধর করে।’’ বিজেপির পক্ষ থেকে ইলামবাজার থানায় ১০ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিজেপির জেলা সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের দলীয় কার্যালয় থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে থানা। পুলিশ সব জেনেও এগিয়ে আসেনি। বরং তৃণমূলকে ওরা মদত দিয়েছে।’’

তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। দলের ব্লক সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘বিজেপির নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছে। ওরা নিজেরাই নিজেদের দলীয় অফিস ভাঙচুর করে তৃণমূলের নামে দোষ চাপাছে।’’

অন্য দিকে, নির্বাচনী প্রচার ঘিরে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষের অভিযোগ উঠল সাঁইথিয়ার বোলসুণ্ডা কলোনিতে। অভিযোগ, দু’পক্ষের ৭ জন আহত হন। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ বিজেপির বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডলের সমর্থনে পথসভা ছিল সাঁইথিয়ার বনগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বোলসুণ্ডা কলোনিতে। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, সেই পথসভা বানচাল করতে তৃণমূল কর্মীরা সভার আশপাশে চারটি টোটোয় মাইক বাজিয়ে দলীয় প্রার্থী অসিত মালের সমর্থনে প্রচার করতে শুরু করেন। তা অগ্রাহ্য করেই বিজেপির সভা চলতে থাকে। অভিযোগ, আচমকা ওই তৃণমূল কর্মীরা লাঠি নিয়ে বিজেপির সভাস্থলে হামলা চালান। বিজেপি কর্মীদের মারধর করা হয়। চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ। এক মহিলা সহ পাঁচ জন আহত হন। দু’জনকে সাঁইথিয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়৷

স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য অভিযোগ মানেননি। তাদের পাল্টা নালিশ, দলের এক কর্মী টোটোয় প্রচার করে ফিরছিলেন। বিজেপির লোকেরা তাঁকে একা পেয়ে মারধর করেন। তাঁকে বাঁচাতে গেলে আরও এক জনকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। দু’জনকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ওই ঘটনায় দু’পক্ষের ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্য দিকে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁইথিয়ার হাতোড়া দাসপাড়ার বাসিন্দা, দিনমজুর শান্ত দাসের বাড়িতে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। তিনি অবশ্য নিজেকে কোনও দলের কর্মী বলেননি। শান্তবাবু বলেন, ‘‘শুক্রবার রাতে লোডশেডিং ছিল। প্রচণ্ড গরম থাকায় ঘরের দরজা খোলা রেখে বারন্দায় ঘুমিয়েছিলাম। দুই নাতি ঘরে ছিল। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। বেরিয়ে দেখি আমার বাড়ির সামনে বোমা ফেটেছে। ঘরে ঢুকে দেখি নাতিদের বিছানার উপরে পড়ে রয়েছে একটি তাজা বোমা। আমি সাধারণ মানুষ। কে, কী কারণে এমন করল বলতে পারব না।’’

বিজেপি নেতা শান্তনুবাবু অবশ্য শান্তবাবুকে তাঁদের দলের কর্মী বলে দাবি করে জানান, ‘‘মানুষকে ভয় দেখাতে তৃণমূল ওই কাজ করেছে৷ সে জন্য মানুষ এখন নিজের রাজনৈতিক পরিচয় দিতেও ভয় পাচ্ছেন।’’

তৃণমূলের সাঁইথিয়া ব্লক সভাপতি সাবের আলি খান বলেন, ‘‘আমাদের কেউ ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। প্রচার পেতে বিজেপিই ওই নাটক করেছে।’’ পুলিশ জানায়, বোমাটি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। কে বা কারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিজেপি জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের অভিযোগ, এ দিন দুবরাজপুরের বসহরি, সিউড়ির হাটজনবাজার, সিউড়ি ২ ব্লকের চাতরা গ্রামে শাসকদলের সশস্ত্র মোটরবাইক বাহিনী ঢুকে মানুষকে ভয় দেখিয়েছে। বিজেপির পতাকা ছিঁড়ে দিয়েছে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘পুলিশ গিয়েছিল, কিন্তু কোনও দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে এমন নয়। এটা চলতে থাকলে মানুষ নিজের ইচ্ছায় ভোট দেওয়ার সাহস পাবেন না।’’

Lok Sabha Election 2019 Violence TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy