Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

লোটোকে যুগোপযোগী করেই বাজিমাত

নিত্যনতুন বিনোদনের দাপটে বিপন্ন হচ্ছে লোকশিল্প। হারিয়ে যাচ্ছেন শিল্পীরা। এমন সময়েও লোটোগানকে যুগোপযোগী করে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন শিল্পী অধীর মণ্ডল। টিকিয়ে রেখেছেন দলের অন্য শিল্পীদেরও। এখনও বছরে গড়ে দু’শো পালাগানের বরাত পায় অধীরবাবুর দল।

কাণ্ডারি: দলনেতা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

কাণ্ডারি: দলনেতা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

অর্ঘ্য ঘোষ
নানুর শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৭ ০৮:১০
Share: Save:

নিত্যনতুন বিনোদনের দাপটে বিপন্ন হচ্ছে লোকশিল্প। হারিয়ে যাচ্ছেন শিল্পীরা। এমন সময়েও লোটোগানকে যুগোপযোগী করে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন শিল্পী অধীর মণ্ডল। টিকিয়ে রেখেছেন দলের অন্য শিল্পীদেরও। এখনও বছরে গড়ে দু’শো পালাগানের বরাত পায় অধীরবাবুর দল।

‘বীরভূমের ওই সূচপুর/ নানুর থেকে নয়কো দূর। সেথায় যেতে আর না লাগে ভাল রে/ ওরা খুঁচিয়ে ১১ মানুষ মেলো রে’। কিংবা ‘অজয় আর ময়ূরাক্ষী বানে/ গরিবগুলো মলো ধনে প্রাণে। তার মাঝে কেউ বগল বাজায়/ বান-খরাতে হয় ওদের মজাই’। ১৯৮৫ সালের বন্যার ক্ষতিপূরণে আর্থিক দুর্নীতি, কিংবা ২০০০ সালে সূচপুরের গণহত্যা নিয়ে অধীর মণ্ডলের লেখা ওই সব লোটোগান এক সময় বীরভূম তথা রাজ্যের মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে। ওই সব লোটোগানেই নানা বিষয় জেনেছেন এলাকার মানুষজন। সেই ধারায় আজও লোটোর জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন ওই শিল্পী।

নানুরের দাসকলগ্রামের চাষি পরিবারে জন্ম অধীরবাবুর। বাবা প্রয়াত নারায়ণচন্দ্র মণ্ডল গ্রামেরই শিশির ঘোষের কৃষ্ণযাত্রার দলে অভিনয় করতেন। ওই দলে মহিলা চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রবেশ বালক অধীরের। ওই সময় বর্ধমান থেকে গ্রামে আসে একটি লোটো (পঞ্চরস) গানের দল। সেই গান শুনে আকৃষ্ট হন অধীরবাবুরা।
তাঁরা কৃষ্ণযাত্রার দলের মালিককে লোটোগানের দল খোলার আর্জি জানান। সেই মতো কৃষ্ণযাত্রার দলটি রূপান্তরিত হয় লোটো গানের দলে। মহিলা চরিত্রে অভিনয় দিয়ে লোটো গানের আসরে পা রাখেন অধীর। পরে নিজেই দল খোলেন। তাঁদের গানে মুগ্ধ হয়ে চুরুলিয়ার নজরুল অ্যাকাডেমি, শান্তিনিকেতন পৌষমেলায় শান্তিদেব ঘোষ পুরস্কৃতও করেন।

সেই থেকে পৌষমেলায় অধীরবাবুর রামকৃষ্ণ অপেরার আসন পাকা হয়ে যায়। দলে শিল্পীর সংখ্যা এখন ২৮। মহিলা ৮ জন। এঁদের অধিকাংশই গানের মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছেন জীবন-জীবিকা। বোলপুরের সিয়ানের ৬২ বছরের গীতা রায়, বর্ধমানের বলগোনার ৪৫ বছরের ঝর্ণা ঘোষরা জানান, গান গেয়েই তাঁদের অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান হয়।

শুধু ওই মহিলারা নন, কলকাতা যাত্রাদলের এক সময়ের অভিনেতা নানুরের চিৎগ্রামের উজ্বল রায়, সিউড়ির শ্যামল খয়রা, লাভপুরের আবাদের মিলন বাগদিরাও জানিয়েছেন একই কথা। তাঁরা বলেন, ‘‘লোটোগান তো বটেই, নিত্যনতুন বিনোদনের দাপটে অধিকাংশ লোকশিল্প বিপন্ন হয়ে পড়েছে। শিল্পীরা মজুর খাটছেন। কিংবা রিকশা টানছেন। কিন্তু আমাদের গানের দল এখনও সমান জনপ্রিয়।’’

কোন রসায়নে লোটোগান এখনও জনপ্রিয় তার ব্যাখ্যা দিলেন অধীর। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ ঘরের কাছের সমকালীন বিষয়কে মঞ্চে দেখতে বেশি পছন্দ করেন।
তাই আমরা সমকালীন বিষয় নিয়ে গান কিংবা হাস্যকৌতুক লিখে পরিবেশন করি।’’ একই মঞ্চে কোনও গান বা কৌতুক দর্শকদের অনুরোধে একাধিকবার পরিবেশনও করতে হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Loto gan folk song Nanoor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE