Advertisement
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Flood Situation in West Bengal

বেশি শাড়ি ফেরত দুর্গতের, সততার পাঠ দিলেন মমতা

দামোদরে জল বাড়ায় ঘরবাড়ি ছেড়ে বড়জোড়ার মানাচরের বহু বাসিন্দা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। পরিবারের আয়ও কার্যত বন্ধ। হাতে গোনা কয়েকটি শাড়িতে দিন গুজরান করতে হচ্ছে অনেককে।

আসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অপেক্ষায় বন্যার্তরা।

আসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অপেক্ষায় বন্যার্তরা। —নিজস্ব চিত্র।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৫১
Share: Save:

এক সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির তলায় লেখা থাকত ‘সততার প্রতীক’। গত কয়েক বছরে তৃণমূলের নানা স্তরের নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে সেই প্রচার বিশেষ চোখে পড়ে না। সোমবার বড়জোড়ায় দুর্গতদের ত্রাণ বিলিতে গিয়ে সততার অন্য নজির খোদ মমতার নজরে পড়ল। তা দেখে নিজের দলের এক সাংসদকে সততার পাঠও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

দামোদরে জল বাড়ায় ঘরবাড়ি ছেড়ে বড়জোড়ার মানাচরের বহু বাসিন্দা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। পরিবারের আয়ও কার্যত বন্ধ। হাতে গোনা কয়েকটি শাড়িতে দিন গুজরান করতে হচ্ছে অনেককে। তারপরেও মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে একটির বদলে একাধিক শাড়ি হাতে পেয়েও ফেরালেন এক বধূ।মুখ্যমন্ত্রীকে জানালেন, সবাই যখন একটি শাড়ি পাচ্ছেন, তখন তিনিও একটির বেশি নেবেন না। দুর্গাপুর যুব আবাসে ত্রাণ বিলিতে গিয়ে এই ঘটনা নজর কেড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। পাশে থাকা বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্তীকে মমতা বলেছেন, ‘‘দেখলে অরূপ, সততা একেই বলে।’’

পরে ওই বধূ বলেন, “বন্যায় আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। পুজোর কেনাকাটার আর সাধ্য নেই। তা বলে একটির বেশি শাড়ি আমি নিলে অন্য কেউ বঞ্চিত হতেন। তাই দিদিকে ফিরিয়ে দিয়েছি।” সাংসদ অরূপ মানছেন, “ভুল করে ওই বধূর হাতে দু’টি শাড়ি চলে গিয়েছিল। তিনি একটি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর সততা দেখে মুখ্যমন্ত্রী অভিভূত।’’ অভিভূত বাঁকুড়ার জেলাশাসক সিয়াদ এন-ও।

বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডলের কটাক্ষ, “সততা শব্দটাই তৃণমূলে নেই। তাই বন্যা দুর্গতদের মধ্যে থেকেই সততার নজির খুঁজে দলের নেতা-কর্মীদের পাঠ দিতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে!” পাল্টা অরূপ বলেন, “কোনও নেতার সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আমাদের দলে তাঁর ঠাঁই হয় না। অথচ সেই নেতাকে বিজেপি হাসিমুখে নিয়ে নেয়। ওদের মুখে সততার কথা মানায় না।”

টানা নিম্নচাপ ও ডিভিসির ছাড়া জলে ক্ষতিগ্রস্ত বহু মানুষ। এখনও সামগ্রিক তথ্য গুছিয়ে উঠতে না পারলেও ক্ষয়ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা ছাপিয়ে গিয়েছে বলে দাবি জেলা প্রশাসনের। পুজোর আগে জনজীবন স্বাভাবিক করতে প্রশাসনকে তৎপর হতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, দুর্গতদের ত্রাণ দেওয়ার প্রক্রিয়া যাতে অব্যাহত থাকে, তা দেখতে বলেছেন জেলাশাসককে।রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়ে মেরামতির নির্দেশ দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির জন্য দ্রুত আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং রাজ্যের পাকা বাড়ি তৈরির প্রকল্পে ওই ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রাধিকারের নির্দেশ দেন মমতা। নামের তালিকা বানিয়ে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে জমা দিতে বলেছেন তিনি। জেলাশাসক বলেন, “আমরা সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ইতিমধ্যেই জেলায় প্রায় ১৪ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রশাসনের তরফে বিশেষ ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। এই কাজ চলবে।’’

সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘বাঁকুড়ার ওন্দা, ইন্দাস, বড়জোড়া ও মেজিয়ায় জল বেশি উঠেছে। এছাড়া সোনামুখী, জয়পুর, প্রতাপপুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে রাস্তা খারাপ, ঠিক করতে হবে। যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে, ডিসেম্বরে আমরা যে ১১ লক্ষ বাড়ি দেব, সেই তালিকায় তাঁদের নাম রয়েছে কি না তা দেখে নিতে হবে। ত্রাণ চলবে যতক্ষণ স্বাভাবিক জীবনে তাঁরা না ফিরতে পারেন।’’ সব ক্ষতিগ্রস্ত যাতে সরকারি সাহায্য পান সাংসদ অরূপকে সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে বলেছেন মমতা।

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Situation In Bengal Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy