Advertisement
E-Paper

হোয়াট‌্স‌অ্যাপে মুখ্যমন্ত্রীর ভিডিও শেয়ার, হাজতে যুবক

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে জড়িয়ে এক মধ্যবয়সী পাগলাটে এক মহিলা নানা আপত্তিকর কথা বলে চলেছেন। নিজের মোবাইলে সেই দৃশ্য রেকর্ড করতে করতে তাঁকে আরও খেপিয়ে তুলে কথা আদায় করে চলেছেন এক যুবক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০১:১২
আদালতে: মঙ্গলবার ধৃত বাপ্পাদিত্য সাহা। নিজস্ব চিত্র

আদালতে: মঙ্গলবার ধৃত বাপ্পাদিত্য সাহা। নিজস্ব চিত্র

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে জড়িয়ে এক মধ্যবয়সী পাগলাটে এক মহিলা নানা আপত্তিকর কথা বলে চলেছেন। নিজের মোবাইলে সেই দৃশ্য রেকর্ড করতে করতে তাঁকে আরও খেপিয়ে তুলে কথা আদায় করে চলেছেন এক যুবক।

হোয়াট‌্স‌অ্যাপের নানা গ্রুপে ঘোরা ওই ভিডিওটিই একটি গ্রুপে শেয়ার করেছিলেন বীরভূমের লাভপুরের এক যুবক। আর তার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই শাসকদলের এক নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে বাপ্পাদিত্য সাহা নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। পেশায় সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকানি ওই যুবক আবার ঘটনাচক্রে তৃণমূলেরই এক প্রাক্তন প্রধান। ঘটনাটিকে পুলিশের অতি সক্রিয়তা বলেই মনে করছে ‘সেভ ডেমোক্রেসি’র মতো সংগঠনগুলি।

মঙ্গলবার ধৃতকে বোলপুর আদালতে হাজির করায় পুলিশ। এসিজেএম রাজেশ গুহরায় তাঁকে ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠান। সরকারি আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্যের ভিডিও শেয়ার করার অভিযোগে ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের বিরুদ্ধে ভারতী দণ্ডবিধির ২৯২ (অশালীন কার্যকলাপ), ৩৫৪এ (শ্লীলতাহানি) ও ৫০৯ (মহিলার সম্মানহানি) এবং আইটি অ্যাক্ট (২০০০)-এর ৬৭ ধারায় মামলা রজু করা হয়েছে।’’ বীরভূমের পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার জানান, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই যুবককে ধরা হয়েছে। তাঁর মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার এক অফিসারকে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করানো হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, লাভপুরের সাহাপাড়ার বাসিন্দা বাপ্পাদিত্য ২০০৮ সালে তৃণমূলের টিকিটে জিতে লাভপুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছিলেন। সোমবার একটি হোয়াট‌্স‌অ্যাপ গ্রুপে ওই ভিডিওটি তিনি শেয়ার করেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তৃণমূলের লাভপুর ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী। তার পরে ওই দিনই পুলিশ বাপ্পাদিত্যকে গ্রেফতার করে। এদিন সকালে ধৃতের বাড়িতে যেতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাপ্পাদিত্যের বিধবা মা বীথিকাদেবী। কী করে কী হল, তিনি তার কিছুই বুঝতে পারছেন না। তাঁর দাবি, ‘‘আমার ছেলে কোনও ঝুট ঝামেলায় থাকে না। ও এমন কিছু করতেই পারে না। ওকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ কে, কী কারণে ফাঁসিয়েছে, তা অবশ্য তিনি খোলসা করেননি।

তবে তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, একসময়ের প্রধান হলেও বর্তমানে দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল বাপ্পাদিত্যর। প্রকাশ্যেই দলের দুর্নীতি এবং নানা নীতির বিরুদ্ধে তাঁকে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা গিয়েছে। সেই আক্রোশেই কি তাঁকে লঘু পাপে গুরুদণ্ড দেওয়া হল? তৃণমূল নেতা তরুণবাবু অবশ্য ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওঁর সঙ্গে বর্তমানে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে সব কথা ওই ভিডিওতে রয়েছে, তা অত্যন্ত আপত্তিকর। সেটি ছড়ানোয় দলের দলের নির্দেশে অভিযোগ করেছি।’’ গ্রেফতার হওয়ার পরে অভিযুক্ত যুবকের অবশ্য দাবি ছিল, ‘‘ওই ভিডিও আমি বানাইনি। স্রেফ মজা করতে শেয়ার করেছিলাম মাত্র। তার জন্য এমনটা হবে, তা বুঝতে পারিনি।’’

বিষয়টিকে যদিও নাগরিকদের স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা হিসেবেই দেখছেন সেভ ডেমোক্রেসির রাজ্য সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিরুদ্ধমত হলেও নাগরিকদের তা প্রকাশ করার অধিকার সংবিধান দিয়েছে। ওই ভিডিও-তে ঠিক কী আছে জানি না। তবে, এ ধরনের ক্ষেত্রে অভিযোগ হলেই কাউকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করাটা গণতন্ত্রের পক্ষে সুস্থ নয়। এই ধরনের গ্রেফতারি অবশ্য রাজ্যে নতুন নয়।’’

arrest CM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy