Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
পুলিশ ফাইল থেকে

বিবাদেই খুন প্রতিবাদী, দাবি পুলিশের

পরের দিন অম্বুবাচী। ছেলে মেয়েরা বায়না ধরেছিল মাংস খাবে। মলিরাম মান্ডি কাজ সেরে বিকেলে বাড়ি ফিরেছেন। ফেরার পথে লাগোয়া নেকড়া গ্রামের হাট থেকে আনাজপাতিও কিনে এনেছিলেন।

এই জমিতেই পড়েছিল মলিরামের দেহ। নিজস্ব চিত্র।

এই জমিতেই পড়েছিল মলিরামের দেহ। নিজস্ব চিত্র।

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১২
Share: Save:

পরের দিন অম্বুবাচী। ছেলে মেয়েরা বায়না ধরেছিল মাংস খাবে। মলিরাম মান্ডি কাজ সেরে বিকেলে বাড়ি ফিরেছেন। ফেরার পথে লাগোয়া নেকড়া গ্রামের হাট থেকে আনাজপাতিও কিনে এনেছিলেন। কিন্তু আব্দার রাখতে আবার তাকে রওনা দিতে হল সন্ধ্যায়। বান্দোয়ানের উদলবনি গ্রাম থেকে শবরপাড়া বড়জোর এক কিলোমিটার দূরে। বলে গিয়েছিলেন, মাংসের টাকা বায়না করেই ফিরে আসবেন।

মলিরাম ঘরে ফেরেননি। রাত বাড়লে তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি ছেলেমেয়েদের নিয়ে খোঁজ করতে বেরিয়েছিলেন। তল্লাটে কোথাও স্বামীর দেখা পাননি তখন।

পরের দিন জমির ধারে মিলেছিল মলিরামের থেঁতলানো দেহ। পা ভাঁজ করে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা মলিরামের মাথায় তখনও জড়ানো সর্বক্ষণের সঙ্গী মলিন গামছাটা। কয়েক হাত দূরে প়ড়েছিল বড় একটি পাথর। পুলিশের দাবি, ওই পাথর দিয়েই খুন করা হয়েছিল মলিরামকে। মাত্র কয়েকটা মাস আগের ঘটনা। দিনটা চলতি বছরের ২১ জুন।

ঘটনার পরে মলিরামের স্ত্রী অঞ্জলি মান্ডি তিন পড়শির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ জগন্নাথ মান্ডি, অবনী মান্ডি এবং গোলজারি বেসরা নামে উদলবনি গ্রামের তিন জনকে গ্রেফতার করে। তবে বর্তমানে ধৃতেরা জামিনে মুক্ত রয়েছেন ।

পেশায় রাজমিস্ত্রি মলিরাম মান্ডির সঙ্গে ওই তিন জনের পুরনো বিবাদ ছিল বলে দাবি পুলিশের। ৩০ জুলাই আদালতে পেশ করা চার্জশিটেও সে কথাই বলা হয়েছে। তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক পুলিশ আধিকারিক জানান, তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই দিন হাট থেকে ফেরার পথে মলিরামের সঙ্গে অভিযুক্তদের বচসা হয়। শবরপাড়া থেকে ফেরার পথে তাঁরা চড়াও হন মলিরামের উপরে। ধাক্কাধাক্কিতে তিনি মাটিতে পড়ে যান। তাঁর মাথায় ভারী পাথর দিয়ে আঘাত করা হয়। তার পরে অভিযুক্তরা ভয়ে পালিয়ে যায়। মাথা থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মলিরামের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। ধৃতদের নিয়ে এলাকায় গিয়ে ঘটনার পুনরাভিনয় করানো হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

অঞ্জলি এখন উদলবনি গ্রাম ছেড়ে ভাইয়েদের সংসারে থাকেন। ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ টানতে তাঁকে দিনমজুরি করতে হয়। তিনি জানান, মলিরাম প্রতিবাদী বলে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। অন্যায়ের প্রতিবাদে সব সময় সরব হতেন। তাঁর দাবি, সেই সূত্রেই অনেকের বিরাগভাজন হতে হয়েছিল মলিরামকে। দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি করেছেন অঞ্জলি।

তবে অভিযুক্তদের দাবি, তাঁরা নির্দোষ। মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে তাঁদের।

২০১৬ সালের ২১ জুন ধান খেত থেকে উদ্ধার হয় বান্দোয়ানের উদলবনি গ্রামের বাসিন্দা মলিরাম মান্ডির দেহ।

মৃতের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে চার পড়শি গ্রেফতার হন।

চলতি বছর ৩০ জুলাই আদালতে মামলার চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। ধৃতেরা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

মামলার শুনানি চলছে আদালতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder broil police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE