Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
manasi mandal

‘আমার গর্ব চলে গেল’

হস্টেলের পাঁচ তলার ঘর থেকে দেহ উদ্ধারের পরে এন্টালি থানার পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, আত্মঘাতী হয়েছেন মানসী। তাঁর ঘর থেকে একটি ‘সুইসাইড নোট’ মিলেছে। তাতে মানসিক অবসাদের উল্লেখ রয়েছে, দাবি পুলিশের।

বাবাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন মানসীর ভাই। নিজস্ব চিত্র

বাবাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন মানসীর ভাই। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২০ ০০:৪৭
Share: Save:

মাধ্যমিকে ফল ছিল নজরকাড়া। পরে ‘ডেন্টাল’ পাঠ্যক্রমে পড়ার সুযোগ মেলে। মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের সেই মানসী মণ্ডলের (২৭) এই অকালমৃত্যু কেন, বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁর পরিবার ও পড়শিরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর মৃত্যুর খবর রঘুনাথপুরে ১ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বপল্লির বাড়িতে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পেশায় শিক্ষক বাবা কার্তিকচন্দ্র মণ্ডল ও মা তুলসীদেবী। কার্তিকবাবুর আক্ষেপ, ‘‘আমার গর্ব, আমার অহঙ্কার, চলে গেল।”

কলকাতার এন্টালি থানা এলাকার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের হস্টেল থেকে এ দিন দুপুরে উদ্ধার হয় মানসীর ঝুলন্ত দেহ। তিনি ওই কলেজের পিজিটি (দ্বিতীয় বর্ষ)-র ছাত্রী ছিলেন। হস্টেলের পাঁচ তলার ঘর থেকে দেহ উদ্ধারের পরে এন্টালি থানার পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, আত্মঘাতী হয়েছেন মানসী। তাঁর ঘর থেকে একটি ‘সুইসাইড নোট’ মিলেছে। তাতে মানসিক অবসাদের উল্লেখ রয়েছে, দাবি পুলিশের।

কিন্তু কেন এই অবসাদ, তা বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁর পরিবার। এ দিন বিকেলে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন পড়শিরা। তাঁরাই সামলাচ্ছেন কার্তিকবাবু ও তুলসীদেবীকে। মানসীর বোন বাঁকুড়ার একটি কলেজের ছাত্রী। আর ভাই এ বছরে রঘুনাথপুরের একটি স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-এ রঘুনাথপুর গার্লস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন মানসী। সে বছর জেলায় ছাত্রীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর ছিল তাঁর। পরে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হন রঘুনাথপুরের জিডি ল্যাং ইনস্টিটিউশনে। এর পরে ‘ডেন্টাল’ পাঠ্যক্রমে পড়ার সুযোগ মেলে। পরিবারের লোকজন জানান, গত মে মাসে কয়েকদিনের জন্য রঘুনাথপুরের বাড়িতে আসেন মানসী। সে সময়ে নিজের বিয়ের খবর জানান মানসী, দাবি পরিবারের। জুনের প্রথম সপ্তাহে তিনি কলকাতায় কলেজে ফিরে যান।

কার্তিকবাবু জানান, গত বুধবার সন্ধ্যায় ফোন করেছিলেন মানসী। জানিয়েছিলেন জ্বর হয়েছে। সর্দি-কাশিও আছে। কার্তিকবাবুর কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবার একটু বেলার দিকে ওকে ফোন করে পাইনি। কলেজের এক জনকে ফোন করে মেয়ের কথা জানতে চাই। বলল, খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছে। অনেকক্ষণ পরে জানায়, হস্টেলের ওর ঘরের দরজা বন্ধ আছে। ডাকাডাকি করেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছে। তখনই বুঝেছিলাম, মেয়ের কিছু হয়েছে।’’

কিন্তু কেন এই ঘটনা? এর পেছনে কি কোনও রহস্য আছে? আপনারা কি তদন্ত চাইছেন? কার্তিকবাবু বলেন, ‘‘কী আর তদন্ত চাইব? পুলিশই তদন্ত করুক। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে কিছু হয়তো জানা যাবে।” তাঁর সংযোজন, ‘‘মেয়ের ফোন আর ল্যাপটপ তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখলে হয়তো কিছু জানা যাবে।”

ঘটনায় হতবাক পড়শিরাও। প্রতিবেশী মানিক দত্ত বলেন, ‘‘দেখা হলেই সম্মান দিয়ে কথা বলত। কেন এমন ঘটনা ঘটাল, বুঝতে পারছি না।” ওই ওয়ার্ডের তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলার ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘মেধাবী মেয়েটির এমন মৃত্যু মানা যাচ্ছে না। ওঁর পরিবারের পাশে আছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manasi Mandal Medical Student Purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE