Advertisement
E-Paper

ভাসছে কাঠামো, পচছে খড়-ফুল

অনেক জায়গায় এখনও মণ্ডপে প্রতিমা। কিন্তু যে ক’টি বিসর্জন হয়েছে, তাতেই জলাশয়গুলির দূষণের ছবিটা ফের সামনে এসে পড়েছে। বাঁকুড়া, সোনামুখী, বিষ্ণুপুর, রঘুনাথপুর, আদ্রা — এক ছবি। রাঢ়বাংলার এই দুই জেলায় নদীগুলিতে জল বিশেষ না থাকায় পুকুর বা খাল-বিলে প্রতিমা বিসর্জনের চল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫৩
আদ্রার স্বর্গদুয়ার সরোবর। —নিজস্ব চিত্র

আদ্রার স্বর্গদুয়ার সরোবর। —নিজস্ব চিত্র

অনেক জায়গায় এখনও মণ্ডপে প্রতিমা। কিন্তু যে ক’টি বিসর্জন হয়েছে, তাতেই জলাশয়গুলির দূষণের ছবিটা ফের সামনে এসে পড়েছে। বাঁকুড়া, সোনামুখী, বিষ্ণুপুর, রঘুনাথপুর, আদ্রা — এক ছবি।

রাঢ়বাংলার এই দুই জেলায় নদীগুলিতে জল বিশেষ না থাকায় পুকুর বা খাল-বিলে প্রতিমা বিসর্জনের চল। দশমীর দিন মঙ্গলবার কিছু প্রতিমা বিসর্জন হলেও মহরমের জন্য বুধবার বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে দুই জেলার শহরগুলিতে ঘুরে দেখা গেল জলাশয়ে যথারীতি খড়, বাঁশ, রাংতা, কাপড়, থার্মোকল প্রভৃতি ভাসছে। বৃহস্পতিবারও সমস্ত পুজোর বিসর্জন হয়নি। শুক্রবার অবধি চলবে। ফলে সমস্ত পুজোর বিসর্জন মিটলে জলাশয়গুলির অবস্থা কী হবে, ভেবে আতঙ্কে বাসিন্দারা। পুরসভাগুলি কেন সাফাইয়ে নামতে গড়িমসি করছে সে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

• বাঁকুড়া

বাঁকুড়া শহরের দশেরবাঁধ এলাকার পদ্মার পুকুরে এ দিন গিয়ে দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি প্রতিমার কাঠামো ভাসছে। ডাঁই হয়ে ভাসছে ফুল, বেলপাতা-সহ পুজোর সামগ্রী। বাসিন্দাদের অভিযোগ, “এই পুকুরে বহু মানুষ স্নান করেন। ছোটরা সাঁতার কাটে। কিন্তু বরাবরা বিসর্জনের পরে অনেকদিন ধরে প্রতিমার কাঠামো জলে পড়ে থাকে। জল দূষিত হয়ে অনেকেই চর্মরোগ ছড়ায়। পুরসভার সাফাইয়ে নামতে নামতে জল পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়।’’ একই অবস্থায় শহরের পোদ্দারপুকুরের মতো আরও কিছু জলাশয়ের। বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত অবশ্য জানাচ্ছেন, পুজো কমিটিগুলিকে আবেদন জানানো হয়েছে, ভাসানের পরে তারা নিজেরাই যেন কাঠামো তুলে নেয়। তারপরেও কাঠামো তোলা না হলে কাউন্সিলরেরা এক দিনের মধ্যেই পুকুর সাফ করে দেবেন।

• সোনামুখী

সোনামুখীর পুকুরগুলিতেও জলাশয়ে কাঠামো ও অন্যান্য আবর্জনা জমেছে। শহরের রতনগঞ্জ এলাকার দশেরপুকুর, লালবাজার এলাকার হালদার পুকুর, বাবুপাড়া এলাকার হরিসায়ের, মনোহরতলার পুকুরে প্রচুর দুর্গাপ্রতিমা ভাসানো হয়েছে। কিন্তু পুরসভাকে এখানেও সাফাইয়ে নামতে দেকা যায়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। যদিও সোনামুখীর পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়েরও আশ্বাস, লক্ষ্মীপুজোর আগেই এলাকার সব পুকুর থেকে কাঠামো ও আবর্জনা সাফ করে দেওয়া হবে। পুরপ্রধানদের আশ্বাসে বাস্তবে সমস্যা মিটবে কি না তা অবশ্য সময়ই বলবে।

• বিষ্ণুপুর

বিষ্ণুপুর শহরে এখনও সে ভাবে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া শুরু হয়নি। তবে শহরের বেশির ভাগ প্রতিমাই ঐতিহাসিক লালবাঁধ, যমুনাবাঁধে ভাসানো হয়। প্রতিবারই মূর্তির কাঠামো ও আবর্জনা দীর্ঘ দিন ধরেই জমে থাকে জলে। এ বারও একই চিত্র দেখা যাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী। তবে প্রতিমা নিরঞ্জনের পরে দ্রুত কাঠামো ও আবর্জনা সাফ করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। শ্যামাপ্রসাদবাবু বলেন, “শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডের পুকুরেই আমাদের নজর রয়েছে। কাউন্সিলরদের বলা রয়েছে প্রতিমা ভাসানোর পরেই যাতে কাঠামো তুলে নিয়ে পুকুর সাফ করে দেওয়া হয়।”

• রঘুনাথপুর

এ দিন রঘুনাথপুর ও আদ্রার বড় পুকুরের ঘাটগুলি ঘুরেও একই চিত্র দেখা গিয়েছে। বস্তুত গত বছর পুজোর বিসর্জনের পরে রঘুনাথপুর শহরের বিভিন্ন পুকুরের ঘাটগুলি আবর্জনায় ভরে ওঠার পরে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়া এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ প্রশাসনের কাছে বিষয়টি দেখার আর্জি জানানোয় তৎপরতা দেখিয়েছিল মহকুমা প্রশাসন। এ বার পুজোর আগে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, উদ্যোক্তারা যেন নিজেরাই বিসর্জনের পরে কাঠামো পুকুর থেকে তুলে নেয়। ঘটনা হল প্রশাসনের সেই আর্জিতে উদ্যোক্তারা কতটা কান দিয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। রঘুনাথপুর শহরে পুজো হয় ২১টি। তার মধ্যে বুধবার পর্যন্ত ১৮টির বিসর্জন হয়ে গিয়েছে। বেশিরভাগের ভাসান হয়েছে আদ্রা-রঘুনাথপুর রাস্তার পাশের ভাগাবাঁধে। এ দিন সেই পুকুরে সকালের দিকে গিয়ে দেখা যায় বেশ কয়েকটি কাঠামো ভাসছে। মোটে দু’টি কাঠামো পাড়ে তুলে রাখা হয়েছে।

• আদ্রা

আদ্রার ৩৫টি পুজোর মধ্যে বুধবার পর্যন্ত বিসর্জন হয়েছে প্রায় ২০টি প্রতিমার। রেলশহরের বেশিরভাগ পুজোর বিসর্জন হয় রঘুনাথপুর-আদ্রা রাস্তার পাশে বেনিয়াসোলের স্বর্গদুয়ার সরোবরে। এ দিন সকালেও ওই পুকুরের জলে বেশ কয়েকটি প্রতিমার কাঠামো ভাসতে দেখা গিয়েছে। কয়েকটি পুজোর উদ্যোক্তাদের দাবি, বিসর্জনের পরে পুকুর থেকে কাঠামো তোলার কাজ কষ্টকর হওয়ায়, তাঁরা পারেননি। তাঁদের পাল্টা প্রস্তাব, কাঠামো তোলার কাজটা পুলিশ, প্রশাসন করুক। উদ্যোক্তারা বরং খরচ বহণ করবেন। এ ক্ষেত্রে পুজোর অনুমতি দেওয়ার সময়েই প্রশাসনকে ওই খরচ কমিটিগুলির কাছ থেকে নিয়ে রাখার প্রস্তাব দিচ্ছেন কয়েকটি বড় পুজো কমিটি। রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় পাল জানান, পুজোর আগে কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকেই বিসর্জনের পরে পুকুর থেকে তাদের কাঠামো তুলতে বলা হয়েছিল। তখন কেউ আপত্তি তোলেননি। তিনি বলেন, ‘‘পুজো কমিটিগুলি ঘাট পরিষ্কার না করলে গতবারের মতো এ বারও প্রশাসনই ঘাটগুলি সাফ করতে নামবে। রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় ও আড়রা পঞ্চায়েতের প্রধান মধুসূদন দাস দু’জনেই বলেন, ‘‘শুক্রবারের আগে সমস্ত পুজোর বিসর্জন হবে না। তাই এখনই ঘাটগুলি পরিষ্কার করে লাভ হবে না। শনিবার থেকে ঘাটগুলি পরিষ্কার শুরু করা হবে।”

Idols Immersion Durga Puja water pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy