Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বঁটির কোপে কাবু ডাকাত, জাপটে ধরলেন স্বামী-স্ত্রী

আলমারি ভেঙে টাকাকাড়ি, সোনার গয়না, মোবাইল, হাতঘড়ি এমনকী পয়লা বৈশাখে পাওয়া নতুন শাড়ি-জামাকাপড়ও পোঁটলায় বেঁধে পাঁচিল টপকে একে একে উধাও হয়ে গিয়েছিল ডাকাতরা। বিপত্তি বেধেছিল উত্তমকুমারের ঢাউস টিভিটা নিয়ে। আধমনি টিভিটা কাঁধে নিয়ে কূঁয়োর দেওয়ালে এক পা দিয়ে অন্য পায়ে পাঁচিল টপকে যাওয়া কী চাট্টিখানি কথা! মাঝ-বয়সী ডাকাতটি ঠিক যেন জুত করে উঠতে পারছিল না। চেষ্টা করেও পা পিছলে সড়াৎ করে খসে পড়ছিল সে।

এই বঁটি দিয়েই দুষ্কৃতীদের মারেন ধনী বাউড়ি। ছবি: অনির্বাণ সেন।

এই বঁটি দিয়েই দুষ্কৃতীদের মারেন ধনী বাউড়ি। ছবি: অনির্বাণ সেন।

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার
মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৫২
Share: Save:

আলমারি ভেঙে টাকাকাড়ি, সোনার গয়না, মোবাইল, হাতঘড়ি এমনকী পয়লা বৈশাখে পাওয়া নতুন শাড়ি-জামাকাপড়ও পোঁটলায় বেঁধে পাঁচিল টপকে একে একে উধাও হয়ে গিয়েছিল ডাকাতরা। বিপত্তি বেধেছিল উত্তমকুমারের ঢাউস টিভিটা নিয়ে।

আধমনি টিভিটা কাঁধে নিয়ে কূঁয়োর দেওয়ালে এক পা দিয়ে অন্য পায়ে পাঁচিল টপকে যাওয়া কী চাট্টিখানি কথা! মাঝ-বয়সী ডাকাতটি ঠিক যেন জুত করে উঠতে পারছিল না। চেষ্টা করেও পা পিছলে সড়াৎ করে খসে পড়ছিল সে।

কিন্তু এগিয়ে গিয়ে এই বেলা তাকে জাপ্টে ধরবে এমন বুকের পাটা ছিল না উত্তমকুমারের। সাত-পাঁচে না জড়ানো নিরীহ উত্তমকুমার ঘরের এক কোণে বসে থাকলেও জানলা দিয়ে কাণ্ডটা দেখে ফেলেছিলেন তিনি, উত্তমকুমারের স্ত্রী ধনী।

এক লাফে রান্নাঘর থেকে বঁটিটা নিয়ে ছুট্টে গিয়ে পাঁচিল টপকানোয় ব্যস্ত দুষ্কৃতীর পায়ে বসিয়ে দিয়েছিলেন এক কোপ। শুধু তাই নয়, কম্পিউটার নিয়ে পালানোর তাল করা অন্য এক দুষ্কৃতীকেও বঁটির কোপ বসিয়ে দেন তিনি। বুধবার গভীর রাতে স্ত্রীর এমন উগ্র মূর্তি দেখে বুকে বল পেয়েছিলেন উত্তমকুমার। গলা খুলে হল্লা শুরু করেন তিনি, ‘‘বাড়িতে ডাকাত পড়েছে গো বাঁচাও!’’

সে হল্লায় কাজ হয়। আশপাশের বাড়ি থেকে ছুটে আসেন পড়শিরা। সবাই মিলে জাপ্টে ধরেন বৈশাখী রাতের সেই ডাকাতকে। তাকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে।

উত্তমকুমার বলেন, ‘‘রাত দেড়টা হবে। বাইরের গ্রিল-গেট খুলে বাথরুমে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দরজা বন্ধ করতে যাব, কার্নিস থেকে লাফ দিয়ে পড়ল এক জন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারধর করে আমায় ঠেলে দিল ঘরের মধ্যে।’’ চিৎকার করতে গিয়েছিলেন তিনি, হুমকি এল, ‘‘বেশি কথা না বাড়িয়ে আলমারির চাবি দে, আর চেঁচামেচি করলে গ্যাসের পাইপ খুলে আগুন ধরিয়ে দেব। জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাবি।’’

উত্তমকুমার জানান, এই বলে ডাকাতরা গ্যাসের পাইপ খুলে দেন।

তিনি বলেন, ‘‘চোখের সামনে হুশ হুশ করে গ্যাস বেরোচ্ছে। আমি ভয়ে কাঁটা হয়ে বসে থাকি।’’ তিনি জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকলেও দমবার পাত্রী ছিলেন না তাঁর স্ত্রী। টিভি নিয়ে পাঁচিল টপকানোর সময় এক ডাকাতের পায়ে বঁটি দিয়ে আঘাত করে পা’টা ধরে টেনে রাখেন তিনি। চিৎকার করে স্বামীকে ডাকতে থাকেন, ‘‘আমি একটাকে ধরে রেখেছি গো, তাড়াতাড়ি এসো।’’ স্ত্রীর মুখে ডাকাত ধরার কথা শুনে উত্তমবাবুও বুকে বল পান। এক ছুটে এসে তিনিও জাপ্টে ধরেন ডাকাতের পা।

ইতিমধ্যে তাঁদের চিৎকারে ছুটে আসেন পাড়া প্রতিবেশী।

ধনীদেবী বলেন, ‘‘টিভি নিয়ে পাঁচিল টপকানোর সময় বঁটি দিয়ে ওই দুষ্কৃতীর পায়ে কোপ মারতেই সে ব্যাটা টিভি’টা ফেলে পালানোর চেষ্টা করে। আমি তখন তার দু’টো পা জাপটে ধরে স্বামীকে ডাকি।’’ তিনি জানান, এই সময়ে সঙ্গী ছাড়াতে এসেছিল অন্য এত ডাকাত। কিন্তু কম্পিউটার কাঁধে টালমাটাল সেই ডাকাতটির হাতেও বঁটির এক কোপ বসিয়ে দেন ধনী। তিনি বলেন, ‘‘বঁটির এক কোপেই সে কম্পিউটার ফেলে তড়িঘড়ি পালিয়ে যায়।’’

পুলিশ জানায় ধৃতের নাম সীতানাথ রায়। তাকে জেরা করে পর দিন মানি শেখ নামে আরও এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের দু’জনেরই বাড়ি মহম্মদবাজারের রাজ্যধরপুরে।

ওই আবাসনের সামান্য দূরে বিডিও সুমন বিশ্বাসের আবাসন। চিৎকারে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তাঁরও। তিনি বলেন, ‘‘এ রকম হতে পারে ভাবতেই পারিনি। দিন কয়েক আগেই এই আবাসনে এক চিকিৎসকের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। তারপরে এই কাণ্ড।’’

পুলিশ কি এ বার একটু নড়েচড়ে বসবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE