Advertisement
E-Paper

দূষণে মুখ ফেরাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা

পুরুলিয়া শহরের সাহেববাঁধ থেকে মুখ ফেরাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা। সরকারি ভাবে কোনও সমীক্ষা না হলেও শীতে পুরুলিয়া জেলার বড় জলাশয় ও ঝিলগুলিতে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনার খবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের চোখে ধরা পড়েছে এই তথ্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪২
পুরুলিয়ার সাহেববাঁধের পাড়ে ধোঁয়া উড়িয়ে রাস্তার সংস্কার। নিজস্ব চিত্র।

পুরুলিয়ার সাহেববাঁধের পাড়ে ধোঁয়া উড়িয়ে রাস্তার সংস্কার। নিজস্ব চিত্র।

পুরুলিয়া শহরের সাহেববাঁধ থেকে মুখ ফেরাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা। সরকারি ভাবে কোনও সমীক্ষা না হলেও শীতে পুরুলিয়া জেলার বড় জলাশয় ও ঝিলগুলিতে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনার খবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের চোখে ধরা পড়েছে এই তথ্য। শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকা সাহেববাঁধের চারপাশ ঘিরে গড়ে ওঠা বহুতল, মাত্রাছাড়া দূষণ ও সন্ধ্যার পর থেকে জলাশয়কে ঘিরে জ্বলে ওঠা রঙিন আলোয় পরিযায়ীদের ঠিকানা বদলে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ তাঁদের।

রুখা পুরুলিয়া শহরে পানীয় জল সরবরাহ করতে ৮৫ একর জমি নিয়ে এই জলাশয় খনন করা হয়। তারপর থেকে নিরিবিলি এই জলাশয় শীতে পরিযায়ী পাখিদের ঠিকানা হয়ে ওঠে। জলাশয় লাগোয়া পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্র নিয়মিত এই পাখিদের তথ্য সংগ্রহ করে আসছে। তারা জানাচ্ছে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই জলাশয়ে রেডক্রেশটড পোচার্ড, নর্দান পিনটেল, গার্ডওয়াল, ফেসান্ট টেলড জাকানা, ব্রোঞ্জউইং জাকানা, পার্পেল শ্যাম্পেন, কমন মুরহেন, কমন কুট প্রভৃতি বাহারি চেহারা ও রঙের পাখিদের আস্তানা হয়ে ওঠে। কিন্তু ছবিটা এখন বদলে গিয়েছে বলে মত জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রের আধিকারিক ঋতব্রত বিশ্বাসের। তিনি বলেন, ‘‘এই জলাশয়ে পরিযায়ী পাখি আসা একেবারেই কমে গিয়েছে। এ বছরও তারা সংখ্যায় অনেক কম এসেছে।’’ তিনি জানান, কয়েক বছর আগেও সাহেববাঁধে প্রচুর পাখি আসত।

পুরুলিয়া নিস্তারিণী মহিলা কলেজের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রিয়ব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁরা ২০০২ সাল থেকে সাহেববাঁধ-সহ জেলার অন্যান্য কয়েকটি জলাশয়ে সমীক্ষা চালাচ্ছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘দেখা যাচ্ছে অন্য জলাশয়গুলিতে পরিযায়ী পাখিদের যাতায়াত ঠিকই রয়েছে। যেখানে ভিড় বা শব্দ বেড়েছে, সেখানে কিছুটা কমেছে। কিন্তু সাহেববাঁধে অবিশ্বাস্য ভাবে পাখিদের আসা কমে গিয়েছে। বিশেষত গত তিন বছরে সবচেয়ে বেশি কমে গিয়েছে।’’ এর কারণ হিসেবে তাঁদের মনে হচ্ছে, সাহেববাঁধকে ঘিরে অনেক বহুতল নির্মাণ, বাঁধের পাড়ের রাস্তা দিয়ে ভারী গাড়ির হর্ন বাজিয়ে যাতায়াত, জল ও পরিবেশের দূষণ এবং বাঁধের চারপাশের আলো— সব মিলিয়ে এই বাঁধ পরিযায়ী পাখিদের কাছে নিরাপদ আস্তানা বলে মনে হচ্ছে না।

জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রের আধিকারিকেরাও জানাচ্ছেন, আদ্রার সাহেববাঁধ, কাশীপুর জমাদারবাঁধ, পঞ্চকোট পাহাড়ের জলাশয় প্রভৃতি জায়গায় পাখিদের আনাগোনা আগের মতোই রয়েছে। শুধু ব্যতিক্রম পুরুলিয়ার সাহেববাঁধ। সমাজকর্মী আবু সুফিয়ান বলেন, ‘‘পাখিরা মুখ ফেরালে তা আবার পরিবেশের ভারসাম্যের দিক দিয়েও ক্ষতিকর।’’

প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের বিনায়ক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা ক্ষমতায় থাকার সময় বাঁধের পাড়ের রাস্তা দিয়ে ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। বাঁধের পাড় ‘সাইলেন্স জোন’ হিসেবে চিহ্নিত ছিল। এত আলোও ছিল না।’’ পরিবেশ বিজ্ঞান মেনে আলো লাগানো দরকার। বর্তমান পুরসভার জলাশয় উন্নয়নের দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল কৃষ্ণেন্দু মাহালির বক্তব্য, ‘‘পাখি আসা কমেছে বলে কেউ জানাননি। সাহেববাঁধে দূষণ কমাতে পুরসভা সচেষ্ট। তবে ওখানে বহুতল তৈরি-সহ দূষণের কারণ যা যা তা আমাদের সময়কার নয়।’’

রাজনৈতিক চাপানউতোর ছেড়ে কবে সবাই সাহেববাঁধকে দূষণমুক্ত করতে এগিয়ে আসবে, সে দিকেই তাকিয়ে পরিবেশপ্রেমীরা।

Migratory Birds Saheb Bandh Pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy