Advertisement
E-Paper

বিধি ভেঙে প্রার্থীকে নিয়ে মন্ত্রীর প্রচার

তাঁকে রাজ্যের এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলেই একডাকে চেনেন এলাকার মানুষ। এলাকায় সক্রিয় ওই তৃণমূল কর্মী রূপে পরিচিত ও ব্যক্তির ‘কীর্তি’র জেরেই আজ ফের বুথমুখো হতে হবে বাসিন্দাদের। রবিবার জামিনে ছাড়া পেতেই হৈহৈ করে মোটরবাইকে চাপিয়ে তাঁকে নিয়ে গেলেন শাসকদলের কর্মীরাই। অথচ শনিবারের রামপুরহাটের বুথ দখলের ঘটনার দায় বিরোধীদের উপরে চাপিয়েই নির্বাচনী বিধি ভেঙে প্রচারে নামল শাসকদল।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৪

তাঁকে রাজ্যের এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলেই একডাকে চেনেন এলাকার মানুষ। এলাকায় সক্রিয় ওই তৃণমূল কর্মী রূপে পরিচিত ও ব্যক্তির ‘কীর্তি’র জেরেই আজ ফের বুথমুখো হতে হবে বাসিন্দাদের। রবিবার জামিনে ছাড়া পেতেই হৈহৈ করে মোটরবাইকে চাপিয়ে তাঁকে নিয়ে গেলেন শাসকদলের কর্মীরাই। অথচ শনিবারের রামপুরহাটের বুথ দখলের ঘটনার দায় বিরোধীদের উপরে চাপিয়েই নির্বাচনী বিধি ভেঙে প্রচারে নামল শাসকদল। এমনকী, রবিবার দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৬ নম্বর বুথ এলাকা চষে বেড়াতে দেখা গেল তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কেও!

বিরোধীরা এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ জানানোর সিদ্ধান্ত নিলেও উল্টো সুর গাইছেন মহকুমা প্রশাসনেরই প্রধান। এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে এসডিও (রামপুরহাট) উমাশঙ্কর এস-এর বক্তব্য, ‘‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে তো প্রচার করতেই পারে। এর মধ্যে বিধিভঙ্গের প্রশ্ন আসছে কী করে!’’ রামপুরহাট পুরসভার রিটার্নিং অফিসারের এমন বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেই দাবি করেছেন সিপিএম নেতা রবীন দেব। তাঁর দাবি, ‘‘কোনও বুথে পুনর্নিবাচন হলে রাজনৈতিক প্রচার করা যায় না। তা নির্বাচনী বিধিভঙ্গের মধ্যেই পড়ছে। মহকুমাশাসক এমন বলে থাকলে, এ বিষয়ে তাঁর অজ্ঞতাই প্রকাশ পেয়েছে।’’

ঘটনা হল, শনিবার দুপুরে ভোট চলাকালীন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত রামপুরহাট হাইস্কুলের ৫ নম্বর ঘরে ৪৬ নম্বর বুথে রামপুরহাটে পুরসভা নির্বাচন ঘিরে গঠিত তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য আবদুর রেকিব জনা কুড়ি তৃণমূল কর্মীকে নিয়ে জোর করে ঢুকে পড়েন। ভোটকর্মীদের বের করে দিয়ে শুরু হয় ছাপ্পা ভোট। উপস্থিত পুলিশ কোনও বাধা দেয়নি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আবদুর রেকিবকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এসডিপিও (রামপুরহাট) জোবি থমাস। এর পরেই ওই বুথে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। নির্বাচন কমিশন আজ, ওই বুথে পুনর্নিবাচনের ঘোষণা করেছে। সোমবার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ।

আশিসবাবু মুখে কুলুপ আঁটলেও ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তকে দলের কেউ নন বলে দাবি করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। যদিও তৃণমূল সূত্রেরই খবর, পুরসভা নির্বাচন ঘিরে অনুব্রত নিজে এই শহরে যে কোর কমিটি গঠন করেছিলেন, অভিযুক্ত আব্দুব রেকিব তার সক্রিয় সদস্য। এমনকী, প্রার্থী তালিকা ঠিক করার ক্ষেত্রেও অভিযুক্ত দলে বিশেষ দায়িত্বও পেয়েছিলেন। ওয়ার্ড কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে কোর কমিটির সভাপতি আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আহ্বায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায়কে রিপোর্ট দেওয়ার দায়িত্ব ছিল এই আব্দুর রেকিবেরই। এ ছাড়াও প্রচার চলাকালীন রামপুরহাট পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে একটি সভায় দলীয় বিধায়ক মনিরুল ইসলামকে তৃণমূল প্রভাবিত ফুটপাত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি আবদুর রেকিবের উদ্যোগে তৈরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া বাংলা নববর্ষের ক্যালেন্ডারের উদ্বোধন করতে দেখা গিয়েছিল। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদায়ী পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি-সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্ব। এত কিছুর পরেও শাসকদলের দাবি, শনিবারের ঘটনায় পুলিশের হাতে ধৃত আব্দুর রেকিব কংগ্রেস কর্মী!

এ দিকে, এ দিন সকালে আশিসবাবুর পরে দুপুরেও ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সুকান্ত সরকারকে সঙ্গে নিয়ে ভোট প্রচার করতে দেখা গেল বিধায়কের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। দলের সক্রিয় কর্মীর হাতে বুথ দখলের ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরেই শনিবার হতাশ গলায় সুকান্তবাবু বলেছিলেন, ‘‘এর পর কী করে মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাব!’’ ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে ভোট প্রচারে বেরিয়ে সেই সুকান্তবাবুই বলছেন, ‘‘এলাকার মানুষকে কিছু বলতেই হচ্ছে না! তারা তো জেনেই গিয়েছেন কারা নোংরামি করেছে।’’ এ সব শুনে শাসকদলের কোনও লজ্জা নেই বলেই দাবি করেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। তাঁর দাবি, ‘‘ওই দলের কর্মীরা যখনই কোনও অপরাধের ঘটনায় ধরা পড়ে, তখনই নেতারা আর নিজেদের কর্মীকে চিনতে পারেন না! শুধু ১৬ নম্বর ওয়ার্ডই নয়, গোটা রামপুরহাটই জানে শনিবার পুলিশের হাতে যিনি ধরা পড়েছেন, সেই আব্দুর রেকিব কোন দল করেন।’’

ভোট বাতিল হওয়ার পরেই ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী অনন্ত মণ্ডল, বিজেপি প্রার্থী মিঠু চক্রবর্তী, কংগ্রেস প্রার্থী আনারুল হক— তিন জনেরই অভিযোগ, বুথ দখলের সময় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা দলের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়েছে। এ দিন সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সঞ্জীব বর্মণ দাবি করেন, ‘‘হারার ভয়েই তৃণমূল বুথ দখল করেছে। তার জন্য ভোটের আগের দিন থেকেই আশপাশের বনহাট, কুশুম্বা, কালুহা, দুনিগ্রাম, মুরারই, রাজগ্রাম প্রভৃতি এলাকা থেকে বহিরাগতদের নিয়ে এসে বিভিন্ন ওয়ার্ডে অশান্তির চেষ্টা করেছিল। সেই চেষ্টার সব থেকে বড় খলনায়ক ছিলেন মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ওই তৃণমূল কর্মী!’’ বিজেপি-র জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহার প্রতিক্রিয়া, ‘‘ছাপ্পা ভোট আর সন্ত্রাস— এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। মানুষের প্রতি আমাদের ভরসা আছে। ছাপ্পা ভোটের জবাব মানুষই দেবেন।’’ অন্য দিকে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে এ দিনই অভিযোগ জানাবেন বলে জানিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক রামচন্দ্র ডোম।

এ দিনই রামপুরহাট আদালত হাজির করানো হলে বুথ দখলে ধৃত তৃণমূল কর্মী জামিন পান। সরকারি আইনজীবী নিমাই মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধৃতের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৩৭ (এ)(১-বি) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আগে এই ধরণের ক্ষেত্রে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা চলত। পরে আইনের সংশোধন হয়। এখন এই ধরণের মামলা জামিন যোগ্য হিসাবেই বিবেচিত হয়। সেই কারণেই জামিন পেয়েছেন রেকিব।’’ এ দিকে, ছাড়া মিলতেই যেন স্মৃতিবিভ্রাটে ভুগছেন ধৃত তৃণমূল কর্মী। তিনি দাবি করেন, ‘‘আমি কোনও দল করি না। ভোট দিতে যাওয়ার আগে বুথ ভাঙচুর করা হয়েছিল। এর বেশি কিছু জানি না!’’

apurba chattopadhyay rampurhat municipal election trinamool tmc CPM Congress bjp mamata bandopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy