Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নালিশ জানাতেই মিলল হুমকি, দাবি করলেন মিঠুন

নবান্নে গিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতার তোলাবাজির বিরুদ্ধে তিনি সরব হয়েছিলেন। সে কথা জানাজানি হতেই তাঁকে হুমকি দেওয়াও শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ পাড়ুইয়ের যুবক মিঠুন গড়াইয়ের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়ুই শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৬ ০১:১৫
Share: Save:

নবান্নে গিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতার তোলাবাজির বিরুদ্ধে তিনি সরব হয়েছিলেন। সে কথা জানাজানি হতেই তাঁকে হুমকি দেওয়াও শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ পাড়ুইয়ের যুবক মিঠুন গড়াইয়ের। পাশাপাশি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জোবি থমাসের সঙ্গে দেখা করে পুলিশি হেনস্থারও নালিশ জানিয়েছেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের পরামর্শ মতো বৃহস্পতিবার সকালে পাড়ুই থানায় স্থানীয় বাতিকার পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নারায়ণ দাস-সহ ৯ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে তোলা চাওয়ার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই যুবকের বাবা রমেশচন্দ্র গড়াই। একই অভিযোগে বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার আক্রোশে ওই নেতা এবং তাঁর লোকজন ছেলেকে হুমকি ও শাসানি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন। জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ এ দিকে, দলের নির্দেশে দিন সাতেক আগেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন নারায়ণবাবু। বুধবারই তাঁর ইস্তফা গৃহীত হয়েছে বলে খবর।

ঘটনা হল, নিজের দ্বিতীয় ইনিংসে তোলাবাজির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তোলাবাজিতে দলের কারও নাম জড়ালেও তাঁকে যে রেয়াত করা হবে না, তা সল্টলেকের তৃণমূল কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পরে স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা করে বুধবারই নবান্নে এসে এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ তুলে সরব হন পাড়ুইয়ের যুবক মিঠুন। পুলিশের মাধ্যমে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি দেন। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর যদিও জানিয়ে দেয়, আগে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে হবে। তার পরেও কোনও ব্যবস্থা না হলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিতে হবে। মিঠুনের অভিযোগ, এলাকার তৃণমূলের এক উপপ্রধান তাঁর কাছে পুকুর সংস্কার এবং চাষ করার জন্য তিন লক্ষ টাকা তোলা দাবি করেছেন। এমনকী, ৫০ হাজার তোলা না দেওয়ায় ওই উপপ্রধান তাঁর কেনা একটি ধান কাটার মেশিন খেতে ব্যবহার করতে দিচ্ছেন না। পুলিশকে মৌখিক ভাবে জানিয়েও কোনও ফল না মেলায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন বলে দাবি করেন ওই যুবক।

নবান্নের পরামর্শ মেনে এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ বাবাকে নিয়ে পাড়ুই থানায় আসেন মিঠুন। একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। পরে মিঠুন বলেন, ‘‘আমার নবান্নে অভিযোগ করতে যাওয়ার খবর পেয়েই উপপ্রধান এবং তাঁর লোকজন হুমকি দিচ্ছে। আমি এবং আমার পরিবার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছি।’’ অভিযোগ পেয়ে এ দিন দুপুরেই গ্রামে তদন্তে যায় পুলিশ। কথা বলে গড়াই পরিবার-সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। পরে এ দিনই সিউড়িতে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেন মিঠুন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তদন্তের নামে পাড়ুই থানার পুলিশ আমাকে হেনস্থা করছে।’’ পুলিশ যদিও সেই অভিযোগ মানতে চায়নি।

বুধবারই নারায়ণবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেছিলেন, মিঠুন দলের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অভিযোগ করছেন। নারায়ণবাবু এ দিনও দাবি করেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তদন্ত হলেই তা প্রমাণিত হবে।’’

তৃণমূল সূত্রের খবর, বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে বোলপুর ও ইলামবাজার ব্লকের একাধিক পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধানদের ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দল। তা মেনে বাতিকার পঞ্চায়েতের প্রধান আবদুল জব্বর এবং উপপ্রধান নারায়ণবাবুও সম্প্রতি ইস্তফাপত্র জমা দেন। বুধবার উপপ্রধানের এবং এ দিন প্রধানের ইস্তফা গৃহীত হয়েছে। যদিও মিঠুনের তোলাবাজির অভিযোগের সঙ্গে ওই সিদ্ধান্তের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই তৃণমূল নেতাদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Extortion Nabanna Complain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE