Advertisement
১১ মে ২০২৪

অ্যাপ-এ আমজনতাই পর্যবেক্ষক

ভোটের সময় সন্ত্রাস, ভয় দেখানো বা টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী, পর্যবেক্ষক, লুকনো ক্যামেরার প্রযুক্তি— কোনও কিছুতেই ঠেকানো যায়নি এই ধরনের অভিযোগ ওঠা।

রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডীতে বাহিনীর টহল।

রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডীতে বাহিনীর টহল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৬ ০২:২৩
Share: Save:

ভোটের সময় সন্ত্রাস, ভয় দেখানো বা টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী, পর্যবেক্ষক, লুকনো ক্যামেরার প্রযুক্তি— কোনও কিছুতেই ঠেকানো যায়নি এই ধরনের অভিযোগ ওঠা। সমাধানের জন্য এই বারের বিধানসভা নির্বাচনে আমজনতাকেই পর্যবেক্ষক হয়ে ওঠার সুযোগ দিল কমিশন।

কমিশন চালু করেছে ‘সমাধান’ নামের একটি ওয়েবসাইট। তার মাধ্যমে রাজ্যবাসী তাঁদের অভিযোগ সরাসরি জানাতে পারবেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে। অভিযোগের সঙ্গে প্রয়োজনে জুড়ে দিতে পারবেন ছবি বা ভিডিও। তা-ও আবার নিজের নাম-ধাম গোপন রেখেই। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেই সমস্যা না মেটাতে পারলে পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনকে কৈফিয়ত দিতে হবে কমিশনের কাছে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হল তা এসএমএস বা ইমেলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে অভিযোগকারীকেও। ওয়েবসাইটের ঠিকানা— election.cloudapp.net/wb-samadhan। এ ছাড়াও, অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য অ্যাপ হিসাবে পাওয়া যাবে ‘সমাধান’। একই পদ্ধতিতে অভিযোগ জানানো যাবে সেটি থেকেও।

পাশাপাশি, রাজনৈতিক দলগুলির জন্য বিশেষ ‘সুবিধা’-রও ব্যবস্থা করেছে কমিশন। সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল করার জন্য আর জেলা প্রশাসন বা পুলিশের কাছে ছুটতে হবে না তাদের। শুধু মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে ওয়েব ব্রাউজার খুলে election.cloudapp.net/wb-suvidha —এই ঠিকানাতে গেলেই চলবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পাওয়া যাবে অনুমতি।

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জেলায় ইতিমধ্যেই ১৪টি অভিযোগ জমা পড়েছে ‘সমাধান’ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। তার মধ্যে ১৩টির তদন্ত হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের আধিকারিকেরা জানান, অভিযোগ বা পরামর্শ পাওয়া মাত্রই তা রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠানো হচ্ছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রিটার্নিং অফিসার সেটি পাঠিয়ে দিচ্ছেন পুলিশ বা জেলা প্রশাসনের কাছে। সেই মতো সমস্যার সমাধান হলে অভিযোগকারীকে তা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে ভিভিপ্যাট যন্ত্রে ভোটারেরা জানতে পারবেন ঠিক জায়গায় ভোট পড়ল কি না। তারই পরীক্ষা চলল বুধবার।—নিজস্ব চিত্র

জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “ভোটের সময় অনেকেই পুলিশ বা প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ‘সমাধান’ বা ‘সুবিধা’ ওয়েবসাইটে অভিযোগ বা আবেদন করলে তার উপর নজরদারি থাকবে নির্বাচন কমিশনের।” বিহারের গত বিধানসভা নির্বাচনে এই দু’টি ওয়েবসাইট সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করেছিল নির্বাচন কমিশন। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও সেই সাফল্য নিশ্চিত করতে আধিকারিকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ারও বন্দোবস্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হচ্ছিল বটে। তবে এর ফলে কাজের গতি আর স্বচ্ছ্বতা—দুটোই বেড়েছে।”

এ হেন উদ্যোগে খুশি রাজনৈতিক দলগুলিও। প্রযুক্তির সুবিধা নিতে কোমর বেঁধেছে তারাও। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, বুথ পিছু দু’জন করে দলীয় কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম দেখলেই তাঁরা অভিযোগ দায়ের করবেন অ্যাপের মাধ্যমে। দলের পক্ষ থেকে মিটিং মিছিলের অনুমতি জোগাড় করার কাজও সারবেন তারাই। সুব্রতবাবুর দাবি, ইতিমধ্যেই সোনামুখী-সহ বেশ কিছু এলাকা থেকে ‘সমাধান’-এ অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁরা। হাতে নাতে ফলও মিলেছে। তিনি বলেন, “সোনামুখীতে দেওয়াল লিখন নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। ‘সমাধান’-এ অভিযোগ করে আমরা দ্রুত ফল পেয়েছি। সভা করার অনুমতি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে ওয়েবসাইট থেকে।”

অন্য দিকে তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এমনিতেই আমরা খুব একটা অভিযোগ করি না। তাই ‘সমাধান’-এর কথা বলতে পারব না। তবে ‘সুবিধা’ সত্যিই কাজে লাগছে।” ‘সমাধান’-কে হাতিয়ার হিসাবে দেখতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষজনও। বাঁকুড়ার বুদ্ধিজীবীদের সংগঠন ‘আমরা সবাই একসাথে’-র সাধারণ সম্পাদক সমীরণ সেনগুপ্ত বলেন, “সাধারণ মানুষ যদি এই অ্যাপের সঠিক ব্যবহার করতে পারেন তাহলে রাজনৈতিক সন্ত্রাস, ভোট কেনার মতন ঘটনা অনেকটাই রুখে দেওয়া সম্ভব হবে।”

নির্বাচনের কাজের জন্য যাঁদের গাড়ি নেবে প্রশাসন, তাদের জন্যও রয়েছে বিশেষ অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। নাম ‘সুগম’। নির্বাচনের কাজের প্রশাসন গাড়ি চাইলে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় থাকে না।। কিন্তু মালিকদের বরাবরের অভিযোগ, গাড়ির ভাড়া মেলে বটে কিন্তু অব্যবস্থার জন্য নাজেহাল হতে হয়। কত ভাড়া পাওয়া যাবে, কী ভাবেই বা সেটা পাওয়া যাবে— তা নিয়ে দেখা দেয় নানা সমস্যা, মতান্তর। যন্ত্রাংশ খারাপ হতে ক্ষতিপূরণ আদায় করার ঝকমারি আরও বেশি। এই সমস্ত সমস্যা মেটাতেই এ বারের নির্বাচনে ব্যবহার করা ‘সুগম’ অ্যাপ। নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত গাড়িগুলি পরিচালনাও করা হবে এই অ্যাপের মাধ্যমে। অ্যাপের বদলে কম্পিউটার বা ফোনের ওয়েব ব্রাউজার থেকে election.cloudapp.net/wb-sugam —এই ওয়েবসাইটটি খুলেও ‘সুগম’ ব্যবহার করা যাবে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত গাড়ির নম্বর, মালিকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর— সব নথিবদ্ধ থাকবে এই অ্যাপে। এর মাধ্যমে গাড়িটি ঠিক কোথায় রয়েছে তা যে কোনও সময় জেনে নিতে পারবেন মালিক। গাড়িটি কতটা পথ যাতায়াত করেছে তার হিসেব প্রশাসনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মালিকও অ্যাপে যাচাই করে নিতে পারবেন। নির্বাচন পর্ব মিটলে, গাড়ি ফেরত দেওয়ার সময় ভাড়া বাবদ পাওনা গণ্ডা হিসাব করে দেবে এই অ্যাপ। কাজ এগিয়ে থাকায় হাতে হাতে পাওনা মিটিয়ে দেওয়াও সম্ভব হতে পারে।

নির্বাচনের কাজে যাওয়া কর্মী এবং আধিকারিকদের গাড়ি খুঁজতেও বেগ পেতে হয়েছে বরাবর। ‘সুগম’ অ্যাপের মাধ্যমে এ বার সেই সমস্যাও মিটবে। গাড়িটি ঠিক কোথায় আছে তা তাঁরা জানতে পারবেন। অ্যাপের সুবিধা রয়েছে নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও। ‘ইলেকশন ডিউটি’ লেখা কাগজ সাঁটা কোন গাড়ি নিয়ে যদি সন্দেহ দেখা দেয় তাহলে অ্যাপ থেকে যাচাই করে নেওয়া যাবে সেই গাড়িটি আদৌ নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না।

প্রযুক্তি দিয়ে ভোট পর্ব নির্বিঘ্ন এবং নিশ্ছিদ্র করা যায় কি না এখন সে দিকেই তাকিয়ে সবাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

election election commission Mobile App
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE