বিচার চাই। অনশনে নির্যাতনের শিকার কলাভবনের ছাত্রীর বাবা-মা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
মেয়ের উপরে নির্যাতনের বিচার চেয়ে আশ্রমে প্রতীকী অনশনে বসলেন বাবা-মা। শুক্রবার এমনই এক ঘটনার সাক্ষী থাকল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। এ দিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলা অনশনে কলাভবনের ভিন্ রাজ্যের ওই ছাত্রীর বাবা-মা পাশেও পেলেন অনেককে। ছাত্রীর বাবা-মা পরে বললেন, ‘‘বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বারবার মেয়ের পরিচয় দুনিয়ার কাছে ফাঁস করে দিয়েছে। এক বারও ক্ষমা চায়নি। এমনকী, মেয়ের পাশেও দাঁড়ায়নি। ওই প্রেস বিবৃতি বিশ্বভারতীকে নিঃশর্তে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় খরচও দিতে হবে। মেয়ের উপরে হওয়া নির্যাতনের বিচার পেতেই এই পদক্ষেপ।’’ নাম প্রকাশের ঘটনায় বুধবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কর্তার বিরুদ্ধে বোলপুর থানায় এফআইআর করেন নির্যাতিতা ওই ছাত্রীর বাবা। এ দিন নির্যাতিতার বাবা আরও জানান, এক দিনের প্রতীকী অনশনে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তাঁরা অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশনে বসবেন।
১৭ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিল বিশ্বভারতী। উদ্দেশ্য ছিল, কলাভবনে গত বছর ভিন্ রাজ্যের ছাত্রীর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা জানানো। সেখানেই ওই দুই আধিকারিকের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের যে প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়, তাতেই ছিল নিগৃহীত ছাত্রী এবং তাঁর বাবার নাম। ফৌজদারি আইনে নির্দিষ্ট ভাবে ধর্ষণের ক্ষেত্রে (৩৭৬ ধারা) নির্যাতিতার পরিচয় ফাঁস করে দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ বলা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছিল, যৌন নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর পরিচয়-ই বা কেন এ ভাবে ফাঁস করবে বিশ্ববিদ্যালয়? গত বছর ২২ সেপ্টম্বরের প্রেস বিবৃতিতেও ওই ছাত্রীর পদবি উল্লেখ করেছিল বিশ্বভারতী। পাঠভবনে প্রস্রাব-কাণ্ডে তাঁরা নির্যাতিতা নাবালিকা ছাত্রীর নামও প্রকাশ করে দেন।
এ দিন সকালে হাতে পোস্টার নিয়ে শান্তিনিকেতনে ছাত্র পরিচালক ও ছাত্র কল্যাণাধিকারিকের দফতরে যাওয়ার রাস্তার ধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গেটের পাশে কাগজ পেতে প্রতীকী অনশনে বসে পড়েন নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা-মা। তাঁরা জানান, এর আগে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েও সাড়া মেলেনি। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা প্রতীকী অনশনে বসেছেন। নির্যাতিতার পরিবারের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে বেশ কিছু সংগঠনও। এ দিন ছাত্রীর বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় বিশ্বভারতীর জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি, ‘সেভ ডেমোক্রেসি ফোরাম’কে। পাশাপাশি বিশ্বভারতীর বহু ছাত্রছাত্রীও নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সঙ্গে অনশনের জায়গায় গিয়ে দেখা করেন। ঘটনার বিচার চেয়ে সন্ধ্যায় আশ্রম এলাকায় ছাত্রছাত্রীদের একটি মৌনী মিছিলও বের হয়। এ দিন গাঁধী জয়ন্তীর জন্য বিশ্বভারতীতে ছুটি ছিল। আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়য়ের কোনও কর্মকর্তাকে এ দিন নির্যাতিতার পরিবারের পাশে যেতে দেখা যায়নি। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব মণিমুকুট মিত্রও মন্তব্য করতে চাননি।
গত বছর অগস্টে ওই ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনায় তিন ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তখনই বিষয়টি আড়াল করার অভিযোগ উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন। দীর্ঘদিন বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন থাকার পরে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন নির্যাতিতাও। সম্প্রতি বিশ্বভারতীতে এসে ছাত্রীর বাবা অভিযোগ করেন, অভিযুক্তরা নিয়মিত ক্লাস করছেন, কিন্তু তাঁর মেয়ে নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে রয়েছেন। ব্যয়সাধ্য চিকিৎসা করাতে হচ্ছে, কিন্তু কোনও সাহায্যই তিনি পাচ্ছেন না। তারই জবাব দিতে ওই সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিল বিশ্বভারতী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy