Advertisement
০১ মে ২০২৪
Jagadhatri Puja 2023

স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু করেন সারদা দেবীর মা, এখনও জৌলুস অটুট জয়রামবাটির জগদ্ধাত্রীর

জয়রামবাটিতে জগদ্ধাত্রী পুজোর চল ছিল না। সেই সময় মহা সমারোহে জেলার গ্রামে গ্রামে কালীপুজো হত। কালীর নৈবেদ্য সংগ্রহ করা হত গ্রামের প্রতিটি পরিবার থেকে।

Jagadhatri

সারদা দেবীর বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
জয়রামবাটি শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৩ ২১:০৩
Share: Save:

শুরু ১৮৭৭ সালে। বাঁকুড়ার জয়রামবাটি গ্রামে নিজের বাড়িতে সারদা দেবীর মা শ্যামাসুন্দরী দেবী ছোট আকারে শুরু করেছিলেন জগদ্ধাত্রীর আরাধনা। কথিত আছে, স্বপ্নাদেশ পেয়ে ওই পুজো শুরু করেন তিনি। তার পর দেড়শো বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও সেই সেই পুজো একই ভাবে চলছে। দেড়শো বছরের রীতি মেনে মহা সমারোহে মঙ্গলবার জয়রামবাটি মাতৃ মন্দিরে পুজিত হলেন জগদ্ধাত্রী। সারদার জন্মভিটেতে এই পুজো দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন দেশ বিদেশের অসংখ্য ভক্ত এবং দর্শনার্থী।

বাঁকুড়ার জয়রামবাটিতে জগদ্ধাত্রী পুজোর চল ছিল না। সেই সময় মহা সমারোহে জেলার গ্রামে গ্রামে কালীপুজো হত। কালীর নৈবেদ্য সংগ্রহ করা হত গ্রামের প্রতিটি পরিবার থেকে। নৈবেদ্য দেওয়ার জন্য প্রতি বছরভর একটি কলসিতে এক মুঠো করে চাল তুলে রাখতেন মহিলারা। বছর শেষে সেই চাল সংগ্রহ করে নিয়ে যেতেন গ্রামের পুরোহিত। জনশ্রুতি রয়েছে, ১৮৭৭ সালে গ্রামের বেশির ভাগ বাড়ি থেকে কালীপুজোর নৈবেদ্য সংগ্রহ করা হলেও কোনও এক কারণে সারদা দেবীর মা শ্যামাসুন্দরীর কাছ থেকে নৈবেদ্য নেওয়া হয়নি। তাতে ভীষণ দুঃখ পেয়েছিলেন তিনি। জনশ্রুতি রয়েছে, কালীপুজোর রাতেই শ্যামাসুন্দরী যখন তিনি নৈবেদ্যর ডালার সামনে অঝোরে কাঁদছেন, তখনই এক রক্তবর্ণা নারীমূর্তি তাঁর সামনে হাজির হন। ওই নারীমূর্তি তাঁকে স্বান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বলেন, “কাঁদিস কেন মেয়ে? তোর নৈবেদ্য কালীপুজোর জন্য নেয়নি তো কী হয়েছে? আমি তোর নৈবেদ্য গ্রহণ করব।’’ এই স্বপ্ন দেখে শ্যামাসুন্দরী বুঝতে পারেন রক্তবর্ণা ওই নারীমুর্তি আসলে জগদ্ধাত্রী। সে বছরেই অভাবের সংসারে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন তিনি। পরে ওই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সারদাও।

জানা যায়, ১৯২০ সাল পর্যন্ত বাড়ির ওই জগদ্ধাত্রী পুজোর যাবতীয় দায়িত্ব সামলেছেন সারদা। তাঁর মৃত্যুর পরেও এই পুজো বন্ধ হয়নি। পরে এই পুজোর দায়িত্ব সামলে আসছেন মাতৃমন্দির কর্তৃপক্ষ। রেওয়াজ মেনে এখনও নবমীতে জগদ্ধাত্রী পুজোর সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী তিথির পুজো হয় মাতৃমন্দিরে। তার পরের দিন জয়রামবাটি ও সিহড় গ্রামের বাসিন্দারা মাতৃমন্দিরে যাত্রাপালার আয়োজন করেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সারদাদের পারিবারিক জগদ্ধাত্রী পুজোর কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্ত এবং পূণ্যার্থীরা এখনও জয়রামবাটিতে ছুটে আসেন জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়। এ বছরও তার অন্যথা হয়নি। মঙ্গলবার জয়রামবাটির জগদ্ধাত্রী পুজোতে গিয়েছিলেন বেলঘরিয়ার বাসিন্দা চন্দ্রিমা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “মা জগজ্জননী সারদার বাড়িতে মা জগদ্ধাত্রীর পুজোর ঐতিহ্যই আলাদা। সেই ঐতিহ্যের টানেই প্রতি বছর আমরা পুজোর দিনে জয়রামবাটিতে ছুটে আসি।’’ হাওড়া থেকে জয়রামবাটিতে পুজো দেখতে আসা পূজা দাস নামে এক মহিলার কথায়, “জগদ্ধাত্রী পুজোর দিনে মাতৃমন্দিরে উপস্থিত থাকলে দৈব শক্তির উপস্থিতি অনুভব করি। ওই অনুভূতি ভোলার নয়।”

মাতৃমন্দিরের সন্ন্যাসী স্বামী পররূপানন্দ জানান, আগে জয়রামবাটিতে মন্দিরের মধ্যে জগদ্ধাত্রী পুজো হত। ২০১১ সাল থেকে মন্দিরের বাইরে মণ্ডপ তৈরি করে পুজো হচ্ছে। পুজো উপলক্ষে মঙ্গলবার ১৮ থেকে ২০ হাজার ভক্তকে প্রসাদ দেওয়া হবে। বুধবার হবে যাত্রাপালা। তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার মা সারদা জগদ্ধাত্রী প্রতিমার বিসর্জন দিতে চাইতেন না। সেই ধারা অব্যাহত রেখে শুক্রবার দেবী প্রতিমার বিসর্জন করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE