Advertisement
E-Paper

আর উঠে দাঁড়াননি ‘প্রিয়’ হীরুদা

• ভোটের প্রচারে বেরিয়ে তৃণমূল কর্মীদের হাতে প্রহৃত হন হীরেন্দ্রনাথ ঘোষ (৭২)। • ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিলের ঘটনা। আট মাস পরে মারা যান সকলের প্রিয় হীরুদা। • খুন হয়ে যান প্রধান অভিযুক্ত, তৃণমূল নেতা মহাদেব রায় । • পুলিশ চার্জশিট জমা দিয়েছে। এখনও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।ভোটের প্রচারে বেরিয়ে জুটেছিল বেধড়ক মার। গুরুতর জখম হয়ে দীর্ঘ দিন ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। কয়েক মাস পরে জবাব দিয়েছিল শরীর। আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।

মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১৭
বিচার মিলবে কবে, প্রশ্ন নিহত নেতার পরিবারের। বোলপুরের নিজস্ব চিত্র।

বিচার মিলবে কবে, প্রশ্ন নিহত নেতার পরিবারের। বোলপুরের নিজস্ব চিত্র।

ভোটের প্রচারে বেরিয়ে জুটেছিল বেধড়ক মার। গুরুতর জখম হয়ে দীর্ঘ দিন ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। কয়েক মাস পরে জবাব দিয়েছিল শরীর। আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।

আর পাঁচটা দিনের মতো ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোমের সমর্থনে প্রচারে বেরিয়েছিলেন হীরেন্দ্রনাথ ঘোষ (৭২)। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, দলীয় কর্মীদের মার খেতে দেখে এগিয়ে যান জেলা কমিটির বর্ষীয়ান এই সদস্য। দুষ্কৃতীদের বোঝানোর চেষ্টাও করেছিলেন। জবাবে জুটেছিল রডের মার। অভিযোগ, রাস্তায় ফেলে ওই বৃদ্ধের গায়ের উপর দিয়ে একাধিক বার মোটরবাইক চালানো হয়েছিল। এই অবস্থাতেও তিনি দীর্ঘক্ষণ বিনা চিকিৎসায় রাস্তায় পড়েছিলেন বলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।

সিপিএমের দাবি ছিল, হামলায় সরাসরি তৃণমূলের লোকজন যুক্ত। প্রশ্ন ওঠে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। সিপিএমের সে সময়ের বীরভূম জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া ছিল, “রাজধর্ম পালন করা পুলিশের কাজ। কিন্তু পুলিশ এখন জনগণের হয়ে নয়, তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে। পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তাই হীরেন্দ্রনাথবাবুর মতো মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী।’’ খুনিদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে সে সময় প্রতিবাদে সামিল হয় সিপিএম। এ বারের বিধানসভা ভোটের আগেও পথে-প্রচারে ওঠে আসছে সেই হামলার কথা। জেলা সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘তৃণমূলের চরিত্র চেনাতেই ওই ঘটনা আমরা তুলে ধরছি। মানুষের সাড়াও পাচ্ছি।’’

ছোটবেলা থেকে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেও, দলমত নির্বিশেষে এলাকায় নির্বিবাদী মুখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন হীরেন্দ্রনাথ ঘোষ ওরফে হীরুদা। অবসরপ্রাপ্ত এই স্কুলশিক্ষক অবিবাহিত ছিলেন। নিজের দল সিপিএম তো বটেই বাম শরিক থেকে শুরু করে বিরোধী শিবিরেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল। এমন মানুষের হামলার মুখে পড়ে মৃত্যুকে মানতে পারেননি অনেকেই। সিপিএম সূত্রের খবর, বোলপুরের সর্পলেহনা-আলবাঁধা পঞ্চায়েতের রতনপুরের কাছে হীরেন্দ্রনাথবাবুদের গাড়িতে তৃণমূল কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। হীরেন্দ্রনাথবাবু-সহ দু’জনের আঘাত গুরুতর ছিল। প্রায় আট মাস পরে ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর নিজের বাড়িতেই মারা যান তিনি।

হামলার ঘটনায় প্রথম থেকেই উঠে আসে পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষ খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা মহাদেব রায়ের নাম। যিনি অনুব্রত-অনুগামী হিসাবেই পরিচিত। ঘটনার পরে তৃণমূলের কঙ্কালীতলা অঞ্চল সভাপতি মহাদেব রায়, বাহাদুর ঘোষ-সহ শাসক দলের ছয় নেতা-কর্মীর নামে এফআইআর হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিল। পরে হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পান তৃণমূল নেতা মহাদেব রায়। পরে ‘রহস্যজনক ভাবে’ খুন হয়ে যান মহাদেব। কারও দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই খুন হন তিনি। কেউবা দাবি করেন বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই তাঁকে দিনের বেলায় রাস্তায় পিটিয়ে, কুপিয়ে খুন করেছিল। পুলিশের কাছে বিজেপি-র আশ্রিত কয়েক জন দুষ্কতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়।

সিপিএমের বর্ষীয়ান ওই নেতাকে খুনের স্মৃতি এখনও তাজা বলে জানাচ্ছেন অনেকেই। সিপিএমের বোলপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক মানব রায় যেমন বলছেন, ‘‘ওই খুনের কথা বোলপুরবাসী ভুলে যাননি। ভোটে তার প্রমাণ পাবে তৃণমূল।’’ জোনাল কমিটির সম্পাদক উৎপল রুদ্র জানাচ্ছেন, পথে-প্রচারে তৃণমূল সরকারের আমলে নানা দুর্নীতি, সন্ত্রাসের প্রসঙ্গে উঠে আসছে হীরুদার কথা। তাঁর জবাব, ‘‘সাড়াও পাচ্ছি।’’

হীরুদার শেষশ্রদ্ধায় হাজির ছিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতা নিমাই ঘোষ (দল বদলে তিনি এখন তৃণমূলে), কংগ্রেস নেতা তপন সাহা, মহম্মদ জাহাঙ্গির হোসেনরা। নিমাইবাবু বলেন, “হীরুদা বিরোধী রাজনীতি করলেও খুব ভাল মনের মানুষ ছিলেন। সবাইকে সমান ভাবে দেখতেন। নিঃস্বার্থে সবার পাশে দাঁড়াতেন।’’ পরিবারের পক্ষে ভাইপো মনা ঘোষ, পার্থ ঘোষেরা বলছেন, ‘‘আমরা তো অভিভাবককে হারিয়েছি। হীরুকাকার কাছে দল আর পরিবার আলাদা ছিল না।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, মামলার প্রধান অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছে। চার্জশিট জমা পড়েছে। তবে এখনও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এ দিকে অন্য অভিযুক্তেরা জামিনে মুক্ত। তাঁদের সাজা হবে কবে? সেই প্রশ্নই ঘুরছে বোলপুরে।

election 2016 murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy