Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কিছু নিতে নয়, দুষ্টুর বাবাকে মারতে এসেছি

রাতে ধুপধাপ শব্দ শুনে ডাকাত পড়েছে ভেবে ঘুম ভেঙেছিল শিক্ষক দম্পতির। গৃহকর্তা দরজার দিকে এগোতেই তাঁর মাথায় লোহার রডের বাড়ি মারে এক জন। স্বামীকে পড়ে যেতে স্ত্রী চিৎকার করেন, “ওঁকে মারবেন না। যা নেওয়ার নিয়ে যান।” জবাব আসে, “কিছু নিতে আসিনি। দুষ্টুর বাবাকে মারতে এসেছি।” রবিবার রাতে এর পরে ‘দুষ্টুর বাবা’ তথা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপনকুমার পানের (৫৮) বুকে গুলি করে আততায়ীরা।

নিহত স্বপনকুমার পানের শোকার্ত স্ত্রী মালবিকা। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিহত স্বপনকুমার পানের শোকার্ত স্ত্রী মালবিকা। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়পুর (বাঁকুড়া) শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪৫
Share: Save:

রাতে ধুপধাপ শব্দ শুনে ডাকাত পড়েছে ভেবে ঘুম ভেঙেছিল শিক্ষক দম্পতির। গৃহকর্তা দরজার দিকে এগোতেই তাঁর মাথায় লোহার রডের বাড়ি মারে এক জন। স্বামীকে পড়ে যেতে স্ত্রী চিৎকার করেন, “ওঁকে মারবেন না। যা নেওয়ার নিয়ে যান।” জবাব আসে, “কিছু নিতে আসিনি। দুষ্টুর বাবাকে মারতে এসেছি।”

রবিবার রাতে এর পরে ‘দুষ্টুর বাবা’ তথা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপনকুমার পানের (৫৮) বুকে গুলি করে আততায়ীরা। ঠেকাতে গেলে তারা কাটারির কোপ মারে স্বপনবাবুর ছেলে ‘দুষ্টু’ ওরফে অনিমেষকে। রক্তাক্ত বাবা-ছেলেকে ফেলে রেখে ধীরেসুস্থে এলাকা ছাড়ে তারা। বাঁকুড়ার জয়পুর থানার ভবানীপুর গ্রামে এমনই ঘটেছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে পান পরিবার। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) পরাগ ঘোষ বলেন, “খুবই রহস্যজনক ঘটনা। তদন্ত শুরু হয়েছে।”

স্বপনকুমার পান

স্বপনবাবু জয়পুরের আরশোল বোর্ড প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। স্ত্রী মালবিকাও প্রাথমিক-শিক্ষকা। দম্পতির এক ছেলে-এক মেয়ে। মেয়ে অজপার বিয়ে হয়েছে মালদহে। সোমবার ভাইয়ের জন্য পাত্রী দেখার কথা থাকায় তিনি স্বামীর সঙ্গে ছিলেন বাপেরবাড়িতে। অনিমেষ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। তিনি জানান, রাত দেড়টা নাগাদ কোল্যাপ্সিবল গেট এবং কাঠের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে জনা ছয়েক। পরনে বারমুডা আর স্যান্ডো গেঞ্জি। মুখে গামছা। হাতে কাটারি, লোহার রড, পিস্তল ছিল। অনিমেষের কথায়, “মায়ের চিৎকারে আমার, দিদি-জামাইবাবুর ঘুম ভাঙে। ওরা বাবার বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে। বাধা দিতে গেলে আমার ঘাড়ে, হাতে, গালে ও পায়ে কাটারির কোপ মারে।” মোটরবাইকে স্বপনবাবুকে জয়পুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান অনিমেষ। ডাক্তার না থাকায় বিষ্ণুপুর হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তারেরা স্বপনবাবুকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্বপনবাবুর বাড়িতে সোমবার পড়শি-সহকর্মীদের ভিড়। সবারই প্রশ্ন, নির্বিরোধী শিক্ষককে কারা, কেন মারল! সিপিএমের জয়পুর জোনাল কমিটির সম্পাদক বিশ্বনাথ দে বলেন, “স্বপনবাবু এক সময়ে পার্টির সদস্য এবং আমাদের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের স্থানীয় নেতা ছিলেন। কিন্তু এটা রাজনৈতিক খুন বলে মনে হচ্ছে না। পুলিশি তদন্তে সত্যটা উঠে আসুক।” ভাঙা দরজা ধরে অঝোরে কাঁদছিলেন মালবিকা-অজপা। তাঁদের মুখে একটাই কথা, “কেন মারল?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

murder joypur swapan kumar pan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE