Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Music college

মিউজ়িক কলেজ সংস্কারে আশ্বাস

ইতিমধ্যেই ওই মহাবিদ্যালয়ের সংস্কারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা তাঁর বিধায়ক উন্নয়ন তহবিল থেকে মঞ্জুর করা হয়েছে। 

‘রামশরণ মিউজ়িক কলেজ’-এর প্রেক্ষাগৃহের এমনই অবস্থা। নিজস্ব চিত্র।

‘রামশরণ মিউজ়িক কলেজ’-এর প্রেক্ষাগৃহের এমনই অবস্থা। নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ অধিকারী
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২০ ০০:৫৪
Share: Save:

বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্য ‘রামশরণ মিউজ়িক কলেজ’ সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন মহল। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সে প্রস্তাব দিলেন বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুপুরের সঙ্গীত ঘরানার কথা মনে করিয়ে দিয়ে ওই মিউজ়িক কলেজের সংস্কারের ব্যাপারে পরে চেষ্টা করা হবে বলে তাঁকে আশ্বস্ত করেন। পরিকাঠামোর সমস্যাতেই ওই মিউজ়িক কলেজ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি পাচ্ছে না বলে আক্ষেপ সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুজিত গঙ্গোপাধ্যায়ের।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৮৮৫ সালে মহারাজ রামকৃষ্ণ সিংহ দেবের সহায়তায় সঙ্গীত চর্চার জন্য বিষ্ণুপুরে গড়ে ওঠে একটি সঙ্গীত বিদ্যালয়। ১৯৪৫ সালে সেটিই কলেজে উন্নীত হয়। বছর দুই-তিন পরে, সরকারি সহায়তায় বিষ্ণুপুর পুরসভা চত্বরে গড়ে ওঠে ‘রামশরণ মিউজ়িক কলেজ’। বিষ্ণুপুর ঘরানা তথা ভারতীয় সঙ্গীত শাস্ত্রের অন্যতম কেন্দ্রটির প্রেক্ষাগৃহ এখন পুরসভার গুদামঘরে পরিণত হয়েছে। সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে যেতে বসেছে প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক এই সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়।

সূত্রের খবর, সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ে ছ’টি শ্রেণিকক্ষ ও একটি প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। দোতলায় রয়েছে বিরল বাদ্যযন্ত্রের গ্যালারি। প্রায় ১৫০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়েই চলছে এই সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়। অধ্যক্ষ ছাড়া, সঙ্গীতের শিক্ষক আছেন ছ’জন, যন্ত্র সঙ্গীতের শিক্ষক তিন ও কর্মী আছেন চার জন।

কলেজ কর্তৃপক্ষের আক্ষেপ, গানের যে ক্লাসঘর রয়েছে, তা পুরসভার অধীনে থাকায় তাঁরা ব্যবহার করতে পাচ্ছেন না। ঘরগুলি এক সময়ে পুরসভা ব্যবহার করত। এখন তালা দেওয়া। বাধ্য হয়ে ক্লাস চলে বারান্দায়। প্রেক্ষাগৃহ থেকেও নেই। সেখানে পুরসভার নানা জিসিসপত্রে ঠাসা। মঞ্চে শালপাতা তৈরির জন্য এক ব্যক্তিকে পুরসভা ভাড়া দিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ।

কলেজের অধ্যক্ষের অভিযোগ, ‘‘ঘর থেকেও আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। তার উপরে সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে ভবনটি। ভবনের ছাদে, কার্নিসে আগাছা জন্মাচ্ছে। কোথাও প্লাস্টার খসে গিয়েছে। কোথাও রং চটে গিয়েছে। গ্যালারিতে ধুলো জমছে। পুরসভাকে বারবার জানিয়েও লাভ হয়নি।’’

তাঁর আক্ষেপ, সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মীদের বেতন পুরসভা নিয়মিত দেয় না। ফলে, গান শিখিয়েও শিল্পীদের পেট চালানো সঙ্কটে। তবে বিষ্ণুপুরের নতুন পুরপ্রশাসক দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় মিউজ়িক কলেজের হাল ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছেন।

ইতিহাস থেকে জানা যায় সঙ্গীতাচার্য রামশঙ্কর ভট্টাচার্যের বাবা গদাধর ভট্টাচার্য বিষ্ণুপুর মল্লরাজসভায় সংস্কৃতের পণ্ডিত ছিলেন। তিনি ছেলেকে সংস্কৃতের পাঠ নেওয়ার জন্য বেনারস পাঠান। সেখানে সংস্কৃতের সঙ্গে তিনি সঙ্গীতের পাঠও নেন। ফিরে এসে তাঁর হাতেই গড়ে ওঠে ‘বিষ্ণুপুর ঘরানা’ নামে একটি স্বতন্ত্র ধারা। গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামী, যদুভট্টের মতো একাধিক গুণীজনের স্পর্শ পড়েছে এই সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ে।

সে প্রসঙ্গ তুলে তুষারবাবু এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে ওই সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের সংস্কারের আর্জি জানান। পরে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেওয়ায় আশা করি এ বার দেশের প্রাচীনতম এই সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের দুর্দাশা কাটবে।’’ তিনি জানান, ইতিমধ্যেই ওই মহাবিদ্যালয়ের সংস্কারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা তাঁর বিধায়ক উন্নয়ন তহবিল থেকে মঞ্জুর করা হয়েছে।

মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত বলেন, “মিউজ়িক কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আবেদন জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসনকে জানানো হচ্ছে। নির্দেশ পেলেই পুরপ্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিষ্ণুপুর পুরপ্রশাসক দিব্যেন্দুবাবু বলেন, “সবে দায়িত্ব নিয়েছি। মিউজ়িক কলেজের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বকেয়া মাইনে কী ভাবে মিটিয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়েও আলোচনা হবে। প্রাচীন এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে পুরসভা পাশে থাকবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Music college Bishnupur Repair
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE