Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Birbhum

কেন জোড়া খুন, রহস্য বহাল হাবরাপাহাড়িতে

সোমবার রাতে ওই গ্রামে গুলিবিদ্ধ হন পাথর খাদানের কর্মী ধনু শেখ ওরফে ইয়াদ আলি (৪৭) এবং প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ধনা হাঁসদা (৪০)। ঘটনাস্থলেই মারা যান ধনু।

নিহত স্কুল শিক্ষকের শোকার্ত পরিজন। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নিহত স্কুল শিক্ষকের শোকার্ত পরিজন। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

পাপাই বাগদি
মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৫৫
Share: Save:

এক রাতে জোড়া খুনের ঘটনায় ত্রস্ত মহম্মদবাজার থানার ভাঁড়কাটা পঞ্চায়েতের হাবরাপাহাড়ি গ্রাম। পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। কেন খুন করা হল ওই দু’জনকে, জানা যায়নি সেটাও।

সোমবার রাতে ওই গ্রামে গুলিবিদ্ধ হন পাথর খাদানের কর্মী ধনু শেখ ওরফে ইয়াদ আলি (৪৭) এবং প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ধনা হাঁসদা (৪০)। ঘটনাস্থলেই মারা যান ধনু। মঙ্গলবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই স্কুলশিক্ষকের। গ্রামবাসীদের দাবি, এর আগে এই এলাকায় এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। যে-ভাবে এক জন গ্রামের ভিতরে এসে গুলি করে দু’জনকে হত্যা করল, তাতে তাঁরা যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছেন। বিশেষ করে স্থানীয় প্রাথমিক শিক্ষক ধনা হাঁসদার মৃত্যুতে আরও শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে এলাকা।

বুধবার গ্রামবাসীরা জানালেন, মানুষ হিসাবে খুবই ভাল ছিলেন ধনা। তাঁর উদ্যোগেই এলাকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষার আলো দেখছিল। কারও সঙ্গে ধনার বিবাদ ছিল না। এমন এক জনকে কেন এ ভাবে খুন হতে হল, তা এলাকার মানুষজন বুঝতে পারছেন না। তবে, এই দু’দিনে গ্রামের ছবিটা বদলে গিয়েছে আমূল। সন্ধ্যার আগেই পথঘাট ফাঁকা। খুব জরুরি কাজ না-থাকলে বিকেলের পরে কেউ বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না। স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার সাহা, ধানু মুর্মু, লক্ষ্মীরাম বাসকিদের প্রশ্ন, ‘‘এখন গ্রামে পুলিশ রয়েছে। কিন্তু, কতদিন থাকবে?’’ জোড়া খুনের সঙ্গে কি স্থানীয় কেউ জড়িত, সেই প্রশ্নও ঘুরছে গ্রামবাসীদের মনে।

এ দিন সকাল থেকেই নিহত শিক্ষকের বাড়িতে ভিড় জমান প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-পরিজনরা। ওই পরিবারের পাশে রয়েছেন গ্রামের যুবকেরা। গ্রামবাসীদের উদ্যোগে শিক্ষকের বাড়িতে আসা আত্মীয়দের জন্য রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে যেখানে সমাধিস্থ করা হবে ধনাকে, সেই জায়গার ব্যবস্থা এবং কফিন নিয়ে শিক্ষকের দেহের অপেক্ষা করতেও দেখা যায় গ্রামবাসীদের।

পুলিশ মঙ্গলবার ধনার এক দাদা সাইমন হাঁসদাকে আটক করেছিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ দিন সাইমন বলেন, ‘‘দাদাকে কেন গুলি করল, তা বুঝতে পারছি না। পুলিশকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি। খুনি কোথা থেকে আ কী কারণে এসেছিল, তা আমরাও বুঝতে পারছি না। আমরা চাই পুলিশ প্রশাসন দ্রুত এর তদন্ত করে অপরাধীকে চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করুক।’’

গ্রামবাসীরা জানিয়েছিলেন, ওই ব্যক্তিকে গ্রামের একটি ক্লাবে থাকার ব্য়বস্থা করে দিয়েছিলেন সাইমন ও তাঁর দিদি। সাইমনের দাবি, ‘‘সোমবার বাড়িতে দিদি একাই ছিল। সেই মুহূর্তে সাইকেল নিয়ে বাড়িতে এসে ওই লোকটি নিজেকে আমাদের মামার বাড়ির আত্মীয়র পরিচয় দেয়। দিদি আমাকে ফোন করে। আমি এসে দেখি, বহু আগে একবার আমার দাদুর সঙ্গে লোকটি এখানে এসেছিল। তার নাম-পরিচয় জানি না।’’ সাইমনের দাবি, সেই সূত্রেই লোকটির থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল ক্লাবে। তার পরে তাঁর ভাই ধনা এসে লোকটির পরিচয় জানতে চান।

স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, তাঁরই দাদা-দিদি ওই ব্যক্তি থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন দেনে লোকটিকে নিয়ে ধনা ও ধনু বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। তখনই লোকটি তাঁদের গুলি করে সাইকেলে ও টর্চ ফেলে দৌড়ে পালায়। সাইমন বলেন, ‘‘সেই মুহূর্তে এমন কী ঘটেছিল যে গুলি করতে হল, সেটাও আমরা বুঝতে পারছি না। কারণ সেই মুহূর্তে ওখানে কেউ ছিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Birbhum Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE