ঘরমুখো: বন্ধু-পরিজনের সঙ্গে কাটারিনা টুডু। বৃহস্পতিবার নলহাটিতে। নিজস্ব চিত্র
শীর্ণ শরীর। মলিন পোশাক। এক ঝলক দেখলেই মালুম হচ্ছিল বেশ কিছু দিন খাওয়া জোটেনি। এমনই অবস্থায় নলহাটির ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে পড়েছিলেন। গলা থেকে বেরোচ্ছিল ক্ষীণ আওয়াজ।
আর কেউ তাতে বিচলিত না হলেও মন গলেছিল ওই এলাকারই কলিঠা গ্রামের আব্দুল খয়েরের। কী জাত, কী রোগ— সাত-পাঁচ না ভেবে বছর আটচল্লিশের ওই মহিলাকে সটান নিয়ে এসেছিলেন নিজের বাড়িতে। মাস তিনেকের শুশ্রূষার পরে একটু সুস্থ হতে পুলিশের মধ্যস্থতায় বৃহস্পতিবার পরিজনদের হাতে তুলে দিয়ে মানবিকতার নজির গড়লেন এই প্রৌঢ়।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই মহিলার নাম কাটারিনা টুডু। বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার বাসুদেবপুর গ্রামে। এ দিন সাতসকালেই পিসিকে নিতে দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে নলহাটি চলে এসেছিলেন ড্যানিয়েল টুডু। ড্যানিয়েল জানায়, পিসি দশ বছর নিখোঁজ ছিলেন। পিসির চেহারা কেমন সেটাও ভুলে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তপন থানায় সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কর্মরত। কিছু দিন আগে তপন থানা থেকেই জানতে পারি পিসি বীরভূমের নলহাটি থানার কলিঠা গ্রামে আছে। সঙ্গে সঙ্গে পরিবারে অন্য সদস্যদের জানাই। নলহাটি থানায় এসে পরিচয় পত্র দেখিয়ে পিসিকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।”
যাঁর জন্য এটা সম্ভব হল, সেই আব্দুল খায়ের অবশ্য একে মানবিকতা ছা়ড়া আর কিছু বলতে নারাজ। তিনি বলছেন, ‘‘মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াব না! এটা কী করে হয়।’’ তার পরে জানালেন সে দিনের কথা। আব্দুল সাহেবের কথায়, ‘‘রাস্তার ধারে ও ভাবে পড়ে থাকতে দেখে মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল। কোথায় বাড়ি, কী ভাবে এলেন, কী হয়েছে— কিছুই বলতে পারছিলেন না।’’ এর পরেই নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে শুরু হয় সেবা। দেখানো হয় চিকিৎসককেও। তার পরে যোগাযোগ করা হয় নলহাটি থানার সঙ্গে। গ্রামবাসীর অনেকেই বলছেন, ‘‘ওই মহিলার জন্য ওঁরা যা করেছেন ভোলার নয়। সত্যিই নজির তৈরি করলেন।’’
বাড়ির লোকেরা এমন অসুস্থ মহিলাকে নিয়ে আপত্তি জানাননি? আব্দুল সাহেবের স্ত্রীর কথায়, ‘‘শুরুতে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এ কাকে নিয়ে এল? তার পরে সব শুনে আর ওঁর অবস্থা দেখে মায়া পড়ে যায়। সবাই নিজের আত্মীয়ের মতো দেখেছি।’’ বাড়ি ফেরাতে পেরেও সকলেই খুশি। তবে প্রতিবন্ধকতা ছিল আরও। স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, আশ্রয়দাতার সংসারেই ‘নুন আনতে পান্তা ফুরনো’র হাল। চাষবাস করে সংসার চলে। নামমাত্র জমি। তার উপরে আট জন সদস্য। তার মধ্যেও পিসির চিকিৎসা করানোর কথা শুনে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা ছিল না কাটারিনা টুডুর পরিজনদের। কাটারিনাদেবীর বোন সুশিলা টুডু বলেন, ‘‘দশ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া দিদিকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এই ঋণ কি আর শোধ করতে পারব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy