এক যুবক খুনের ঘটনায় মাত্র পাঁচ মাসেই বিচার প্রক্রিয়া শেষ করল বোলপুর আদালত। নানুর এলাকার ওই খুনের ঘটনায় মঙ্গলবার ঘটনায় অভিযুক্ত তিন প্রতিবেশী যুবককেই যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন বোলপুরের অতিরিক্ত জেল জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী। সরকারি আইনজীবী তপন দাস এ দিন বলেন, ‘‘বিচারক সোমবারই ওই তিন জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। এ দিন এই সাজার কথা ঘোষণা করেছেন। সাজাপ্রাপ্তদের দশ হাজার টাকা করে জরিমানার নির্দেশও বিচারক দিয়েছেন।’’ সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে নিখোঁজ ছিলেন নানুর থানার পাতিসড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রভাত মাঝি (৩৬)। দুপুর আড়াইটে নাগাদ গ্রামের শেষ প্রান্তে একটি দিঘিতে তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ ভেসে ওঠে। দাদাকে খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই দিনই নানুর থানায় তিন প্রতিবেশী উত্তম ধীবর, দিলীপ ধীবর এবং জগবন্ধু ধীবরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নিহতের ভাই বেণুকর মাঝি। তপনবাবু বলেন, ‘‘বেণুকরবাবু ওই এলাকায় একটি অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট ছিলেন। এলাকা থেকে আমানতকারীদের টাকা ফেরতকে কেন্দ্র করে তাঁর সঙ্গে বার কয়েক ঝামেলা হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। তা ছাড়াও ওই এলাকায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পের আর্থিক লেনদেন নিয়ে তাদের বিরোধ বেধেছিল মাঝি পরিবারের।’’ ওই দুই ঘটনার জেরেই প্রভাতবাবুকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ করেছিল পরিবার।
ওই ঘটনায় পরের দিনই অভিযুক্ত তিন পড়শিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন) এবং ২০১ (তথ্যপ্রমাণ লোপাট) ধারায় মামলা রুজু হয়। আড়াই মাসের মধ্যে (গত ১৯ নভেম্বর) তদন্ত করে ওই তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। জেল হাজতে থেকেই অভিযুক্তদের বিচার শুরু হয়। ঘটনার তদন্তকারী অফিসার সঞ্চয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসক নিয়ে মোট ১৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে আদালত। গত ১০-২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা জজের এজলাসে চলে ওই সাক্ষ্যগ্রহণ। তিন জনের বিরুদ্ধেই আদালতে সন্দেহাতীত ভাবে দোষ প্রমাণিত হয়েছে বলে সরকারি আইনজীবীর দাবি। তিন সাজাপ্রাপ্ত যুবকই অবশ্য এ দিন নিজেদের নির্দোষ দাবি করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন।