Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
তোলাবাজির প্রতিবাদে অবরোধ

তিন ঘণ্টা ধরে রুদ্ধ জাতীয় সড়ক

এলাকায় ব্যবসার কাজে ঢুকলেই দুষ্কৃতীদের তোলা দিতে হচ্ছে। অভিযোগ, ওই কাজে মদত দিচ্ছে বর্ধমান পুলিশও! তারই প্রতিবাদে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন দুবরাজপুরের প্রায় দু’শো বাসনপত্রের ফেরিওয়ালা। শুক্রবার সকালে দুবরাজপুর শহরের ইসলামপুরের ঘটনা। ওই বিক্ষোভের জেরে এ দিন জাতীয় সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়।

অবরোধের জেরে যানজট রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে। শুক্রবার দুবরাজপুরের ইসলামপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

অবরোধের জেরে যানজট রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে। শুক্রবার দুবরাজপুরের ইসলামপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর ও পাণ্ডবেশ্বর শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২৫
Share: Save:

এলাকায় ব্যবসার কাজে ঢুকলেই দুষ্কৃতীদের তোলা দিতে হচ্ছে। অভিযোগ, ওই কাজে মদত দিচ্ছে বর্ধমান পুলিশও!

তারই প্রতিবাদে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন দুবরাজপুরের প্রায় দু’শো বাসনপত্রের ফেরিওয়ালা। শুক্রবার সকালে দুবরাজপুর শহরের ইসলামপুরের ঘটনা। ওই বিক্ষোভের জেরে এ দিন জাতীয় সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। বহু ট্রাক, লরির পাশাপাশি যাত্রীবাহী বাস এবং বহু ব্যক্তিগত গাড়িও আটকা পড়ে। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত অবরোধ চলার পরে হুঁশ ফেরে পুলিশের। ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধকারী ফেরিওয়ালাদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেয় পুলিশ। অন্য দিকে, ফেরিওয়ালাদের অভিযোগকে বর্ধমান পুলিশ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দুবরাজপুরের বাসিন্দা ওই ফেরিওয়ালারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে মূলত স্টিল-প্লাস্টিকের বাসনপত্রের বিনিময়ে ভাঙাচোরা টিন ও লোহা সংগ্রহের কাজ করেন। অজয় নদ পেরিয়ে বর্ধমানের হরিপুর গাইঘাটায় নেমে বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা ওই ওই ব্যবসার কাজে নেমে পড়েন। স্থানীয় ফেরিওয়ালা রহমত আলি, নুর আলি, শেখ রমজানরা বলছেন, ‘‘দিনভর ঘুরে ঘুরে ভাঙাচোরা টিন ও লোহা, মেয়েদের চুলের মতো নানা ফেলে দেওয়া জিনিস সংগ্রহ করি। বিনিময়ে গৃহস্থকে স্টিল বা প্লাস্টিকের পাত্র দিই। সংগৃহীত জিনিস দুবরাজপুরে এনে বিক্রি করে আমাদের সংসার চলে।’’ এমন কারবারে যুক্ত ফেরিওয়ালাদের অভিযোগ, জিনিসপত্র দুবরাজপুরে নিয়ে আসার পথেই যত সমস্যা। সচরাচর পাণ্ডবেশ্বর থেকে বাসের মাথায় চড়িয়ে ওই জিনিস নিয়ে আসা হয়। ফেরিওয়ালাদের ক্ষোভ, ‘‘ওই জিনিস আনার জন্য পুলিশের মদতপুষ্ট স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী আমাদের কাছ থেকে জোর করে তোলা আদায় করছে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে ওরা জোর করে বাসের ছাদ থেকে সমস্ত মাল ফেলে দেয়। পরে নিজেরাই বিক্রি করে।’’ পুলিশের উপস্থিতিতেই সঙ্গে থাকা মোবাইল এবং টাকাপয়সাও কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের মারধর করা হয় বলেও ফেরিওয়ালাদের অভিযোগ। ওই কাজে দুষ্কৃতীদের কিছু সিভিক ভলান্টিয়ার্সও মদত দেয় বলে তাঁরা দাবি করেছেন। ফেরিওয়ালাদের অভিযোগ, গত তিন মাস ধরে এই অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। তার জন্য ব্যবসায় টান পড়েছে। ফলে ওই ফেরিওয়ালাদের নিজেদের সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তাঁদের দাবি, এ নিয়ে বহু বার পাণ্ডবেশ্বর থানায় অভিযোগ জানিয়েও ফল মেলেনি। তাই বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনতেই দুবরাজপুরে প্রতিবাদ করা হল বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

এ দিকে, দেরিতে হলেও ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয় দুবরাজপুর থানার পুলিশ। ফেরিওয়ালাদের পুলিশ বোঝায়, এ ভাবে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা ঠিক নয়। কিছু বলার থাকলে লিখিত ভাবে জানান। দুবরাজপুর থানাই সেটা পাণ্ডবেশ্বরে পাঠিয়ে দেবে। পুলিশের ওই পরামর্শ মেনে ফেরিওয়ালারা অবরোধ তুলে নেন। অন্য দিকে, বিক্ষোভকারীদের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাণ্ডবেশ্বর পুলিশ। পুলিশের পাল্টা দাবি, এলাকায় দিন কয়েক ধরে কোলিয়ারি থেকে কয়লা চুরি করে বাসের ছাদে চাপানো হচ্ছিল। পুলিশ অভিযান চালিয়ে সেটিই বন্ধ করেছে। এডিসিপি (বর্ধমান পূর্ব) অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘পুলিশের তোলা চাওয়ার কোনও অভিযোগ পাইনি।’’ পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েছে শাসকদলও। তৃণমূলের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি তথা বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এলাকায় কোনও ভাবেই অবৈধ কয়লা, লোহার কারবার চলতে দেব না। পুলিশের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।’’ অন্য দিকে, অবরোধের কথা শুনে পাণ্ডবেশ্বরের সিপিআইএমএল নেতা সাধন দাস বলেন, ‘‘ওটা লোহা চোরদের বিক্ষোভ। তাদের অভিযোগও হাস্যকর!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE