Advertisement
১৯ মে ২০২৪

নামেই পুর-এলাকা, আঁধারে লোহারপাড়া

নামেই শহর। কিন্তু বিষ্ণুপুরের শ্যামবাঁধের পাড়ে লোহারপাড়া ও আদিবাসীপাড়ায় শহরের উন্নয়নের আলো এসে পড়েনি। পুরভোটের মুখে এমনই অভিযোগ তুলেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। বিষ্ণুপুর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের এই এলাকায় কার্যত নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য এখনও এসে পৌঁছয়নি।

নিকাশি নেই। পথের উপরেই বয়ে যায় নোংরা জল। —নিজস্ব চিত্র।

নিকাশি নেই। পথের উপরেই বয়ে যায় নোংরা জল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৪
Share: Save:

নামেই শহর। কিন্তু বিষ্ণুপুরের শ্যামবাঁধের পাড়ে লোহারপাড়া ও আদিবাসীপাড়ায় শহরের উন্নয়নের আলো এসে পড়েনি। পুরভোটের মুখে এমনই অভিযোগ তুলেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

বিষ্ণুপুর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের এই এলাকায় কার্যত নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য এখনও এসে পৌঁছয়নি। বাস্তবে শহরের সুযোগ-সুবিধা বলতে কিছুই নেই। রাস্তা এখনও কাঁচা। মোরাম বিছানো। জায়গায়-জায়গায় গর্ত। নেই নিকাশি ব্যবস্থাও। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বহু আবেদন-নিবেদনেও এলাকায় বিদ্যুৎও পৌঁছয়নি। লন্ঠনের আলোয় পড়াশোনা করতে হয় ছেলেপুলেদের। পাড়াতে এখনও প্রাথমিক স্কুল গড়ে ওঠেনি। দেড় কিলোমিটার দূরের স্কুলে পড়তে যেতে হয়। এলাকায় প্রাথমিক স্কুল চেয়েও হয়নি। জল বলতে দু’টি টিউবওয়েলই ভরসা। পাইপলাইনের জল এখনও আসেনি। নিকাশি নালা না থাকায় নোংরা জল রাস্তায় গড়ায়। মশা-মাছি ভনভন করে। অথচ ওই দু’টি পাড়ায় অন্তত ২০০ ভোটার রয়েছে।

বাসিন্দাদের ক্ষোভ, পাঁচ বছর অন্তর পুরভোট আসে। তখনই দেখা মেলে ভোট প্রার্থীদের। সমস্যার কথা তুললে তাঁরা আশ্বাস দিয়ে যান, এই করবেন, সেই করবেন। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয় না। ভোটে জিতে কাউন্সিলর হওয়ার পর এই এলাকায় আর পা পড়ে না তাঁদের। জ্যোৎস্না লোহার নামে এক বিধবা এগিয়ে এসে অভিযোগ করেন, ‘‘বিধবা ভাতার জন্য পাঁচ বছর কাউন্সিলরের বাড়ি ছুটোছুটি করছি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।”

ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ প্রহ্লাদ লোহারের ক্ষোভ, “বাচ্চাদের দেড় কিলোমিটার দূরে বাদামতলায় স্কুলে পাঠাতে হয়। এখন গ্রামে গ্রামে প্রাথমিক স্কুল। অথচ শহরে থেকেও আমরা স্কুল পাইনি। ঘরে বিদ্যুতের আলো এ জন্মে হয়তো আর দেখাই হবে না। এলাকায় নালা না থাকায় জল গড়াগড়ি খায় রাস্তায়। মশা-মাছির আঁতুরঘরে আমাদের বাস করতে হয়।’’ কিছু তরুণ এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘একবার এ সবের প্রতিবাদে একজোট হয়ে ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। প্রশাসনের কর্তারা এসে আমাদের বুঝিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সেই ডাক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও কাজই হয়নি।’’

বাসিন্দারা জানান, এই ওয়ার্ড থেকে কখনও সিপিএম জিতেছে, কখনও কংগ্রেস। কেউই ভাবেনি তাঁদের কথা। হচ্ছে হবে প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলেনি। ওই ওয়ার্ডের বর্তমান সিপিএম কাউন্সিলর স্বপন দত্ত এখন পুরভোটের মুখে আশ্বাস দিয়েছেন “ওই এলাকায় বিদ্যুতের সমীক্ষা চলছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হয়ে যাবে। বাকি সমস্যাগুলির কথাও ঊর্ধ্বতন কর্তাদের বলেছি।” যদিও বিষ্ণুপুরের পাঁচবারের পুরপ্রধান তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সমস্যাগুলির কথা আমার জানা নেই। এলাকার কাউন্সিলর কিছুই জানাননি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।” এমন চাপান-উতোরের মধ্যে শহরে থেকেও লোহারপাড়া থেকে যায় সেই আঁধারেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE