Advertisement
E-Paper

ডিজে-মুক্তি পুরুলিয়ার

পুরুলিয়ায় দুর্গাপুজোর বিসর্জনে মোটের উপরে পুলিশ উতরে গেল বলে জেলার বাসিন্দাদের অনেকের মত। একাদশী পর্যন্ত জেলার যে সমস্ত সর্বজনীন পুজো কমিটি বিসর্জন করেছে, তাদের অধিকাংশই লাউড স্পিকার এবং সাউন্ড বক্স বাজিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৪৭
শব্দ-যন্ত্রণা পুরুলিয়া শহরের নীলকুঠিডাঙা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

শব্দ-যন্ত্রণা পুরুলিয়া শহরের নীলকুঠিডাঙা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

কানের উপরে অত্যাচারটা কমল না। তবে আগে শব্দের ধাক্কাটা যেমন বুকে এসে লাগত, এ যাত্রা সেটা হয়নি।

পুরুলিয়ায় দুর্গাপুজোর বিসর্জনে মোটের উপরে পুলিশ উতরে গেল বলে জেলার বাসিন্দাদের অনেকের মত। একাদশী পর্যন্ত জেলার যে সমস্ত সর্বজনীন পুজো কমিটি বিসর্জন করেছে, তাদের অধিকাংশই লাউড স্পিকার এবং সাউন্ড বক্স বাজিয়েছে। তবে চোখে পড়ার মতো বিষয়টা হল, ‘ডিজে’-র দাপাদাপি এখনও পর্যন্ত হয়নি। সাউন্ড বক্সে এক প্রকার যন্ত্র লাগিয়ে সেটির আওয়াজ কয়েক গুন বাড়িয়ে দেওয়ার পদ্ধতিকে চলতি কথায় ‘ডিজে’ বলে। জেলার বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, ‘‘আগে ‘ডিজে’-র আওয়াজটা একেবারে বুকে এসে ধাক্কা দিত। এ বারে সেটা হয়নি।’’

তবে পুরুলিয়া শহর, আদ্রা, রঘুনাথপুরের মতো বিভিন্ন জায়গায় লাউডস্পিকারের অত্যাচার ‘ডিজে’-র অভাব পূরণ করে দিয়েছে। একাদশী পর্যন্ত জেলায় বিসর্জন হয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ পুজোর। রবিবার অনেক পুজো কমিটিই বিসর্জন দেয়নি। ওই সমস্ত এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, যে ক’টা বিসর্জন হয়েছে, তার প্রায় সব ক’টিতেই তারস্বরে বেজেছে সাউন্ডবক্স আর লাউডস্পিকার। তবে আদ্রায় রাত ১০টার পরে যে সমস্ত বিসর্জন হয়েছে, তাতে আওয়াজ বেশ কম ছিল বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। আদ্রার বাসিন্দা বাসুদেব বাউড়ি বলেন, ‘‘আদ্রায় যে কোনও পুজোর বিসর্জন মানেই হৃৎকম্প! এ বার শব্দের সেই অত্যাচার কার্যত দেখা যায়নি। অন্তত এখনও পর্যন্ত।’’

প্রতি বছর শব্দবিধি ভাঙার ভুরি ভুরি অভিযোগ আদ্রা থেকে আসে। সেই রেলশহরে পুলিশ এ বার গণেশ পুজো আর বিশ্বকর্মা পুজোর সময় থেকেই তৎপর হয়েছিল। শব্দবিধি মানা হচ্ছে কি না, সেটা মণ্ডপে মণ্ডেপে ঘুরে দেখেছিল পুলিশ। বিসর্জনে বিধি ভেঙে বাজাতে দেখলেই আদ্রা থানার পুলিশ মাইক বাজেয়াপ্ত করেছে। শব্দবিধি ভাঙার দায়ে কয়েকজন মাইক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছিল। পুলিশের দাবি, এর ফলে দুর্গাপুজোয় মাইক বেজেছে বিধি মেনেই।

এ বারে জেলার বেশকিছু পুজো কমিটি সাউন্ড বক্স বাদ দিয়ে শুধু ঢাক বা তাসা বাজিয়ে বিসর্জন করেছে। অনেকে আবার ঢাকের পাশাপাশি খুব কম আওয়াজে সাউন্ড বক্স ব্যবহার করেছে। যা দেখে পুলিশের দাবি, শব্দবিধি নিয়ে কিছুটা হলেও সচেতনতা তৈরি হয়েছে। কাশীপুর উপর বাজার দুর্গাপূজা সমিতি, ঝালদার কাঞ্জিমেলা সর্বজনীন, পাড়ার থানাগোড়া সর্বজনীন, দুবড়া সর্বজনীনের বিসর্জনে শব্দবিধি মানার উপরে জোর দিয়েছিলেন ওই পুজো কমিটিগুলির কর্মকর্তারাই। তাঁদের ভূমিকায় খুশি এলাকার বাসিন্দারা। সোমবার দক্ষিণ পুরুলিয়ার বেশ কয়েকটি সর্বজনীন ও পারিবারিক পুজোর বিসর্জন হয়েছে। সেখানেও দেখা গিয়েছে একই ছবি। ইন্দকুড়ি সর্বজনীন, বান্দোয়ানের নবদুর্গা পুজো কমিটির বিসর্জনের শোভাযাত্রায় শব্দের তাণ্ডব নয়, ভেসে এসেছে কাঁসর, ঘণ্টার ধ্বনি, বাঁশির সুর। আজ, বুধবার বিসর্জন হবে নিতুড়িয়া-দুবেশ্বরী কোলিয়ারি সর্বজনীনের। প্রশাসনের কাছ থেকে জেলার সেরা শিরোপা পাওয়া এই পুজো কমিটির কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা শুধু ঢাক বাজিয়েই বিসর্জন করবেন।

শব্দবিধি মেনে বিসর্জন করলে পুলিশের তরফে যদি পুজো কমিটিগুলিকে পুরস্কৃত করা হয়, তাহলে অনেকেই উৎসাহী হবেন বলে মনে করছেন বেশ কিছু পুজোর উদ্যোক্তারা। পুরুলিয়া শহরের নিমট্যাড় ষোলোআনা কমিটির কর্মকর্তা তথা তৃণমূলের কাউন্সিলর বিভাসরঞ্জন দাস এবং ঝালদার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্থানীয় পুজোর কর্মকর্তা মহেন্দ্রকুমার রুংটা বলেন, ‘‘এখন অনেকেই বিকট শব্দে মাইক বাজিয়ে বিসর্জন পছন্দ করেন না। কিন্তু পুজো কমিটিতে অনেক ধরনের লোকজন থাকেন। তাঁদের চাপেই কমিটিগুলি বাধ্য হয়ে মাইক বাজিয়ে বিসর্জন করে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ পুরস্কার দিলে তাঁদেরও মতি ফিরতে পারে।’’ পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিসর্জনের জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করার ভাবনা আমাদের রয়েছে। পরের বছরে করা যায় কি না দেখা হবে।”

তবে এ বছরের মতো বিষয়টা যে পুরো মিটে গিয়েছে, তা নয়। পুলিশের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, এখনও প্রায় ২০-২৫ শতাংশ পুজোর বিসর্জন বাকি। তার অধিকাংশই বড়মাপের পুজো। সোমবার ও মঙ্গলবার রাতে সেগুলির বিসর্জন হবে। ফলে চূড়ান্ত ফল বেরোতে এখনও বাকি বলে মনে করছেন অধিকাংশ বাসিন্দা।

Loud Speaker Durga Puja Sound Pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy