Advertisement
E-Paper

কোনও শিক্ষক নেই, ক্লাস নিচ্ছে দিদিরাই

মঙ্গলবার স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের বাংলা পড়াচ্ছে দশম শ্রেণির নাজিরা ইয়াসমিন। দশম শ্রেণির কুলসুমা খাতুন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীদের পড়াচ্ছে ইতিহাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৪০
বিকল্প: কুমিড়া-সাওতা অক্ষয়কুমারী বালিকা স্কুলে চলছে পড়াশোনা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

বিকল্প: কুমিড়া-সাওতা অক্ষয়কুমারী বালিকা স্কুলে চলছে পড়াশোনা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

একে শিক্ষিকা বাড়ন্ত। তার উপরে একের পর এক ছুটি নিতে নিতে আর কোনও শিক্ষিকাই নেই স্কুলে! টানা চার দিন ধরে উঁচু ক্লাসের ছাত্রীরাই নিচু ক্লাসের ছাত্রীদের ক্লাস নিয়ে সময়টুকু পার করছে মাত্র। শুক্রবার থেকে এমনটা চলছে নানুরের কুমিড়া-সাওতা অক্ষয়কুমারী বালিকা বিদ্যালয়ে।

বীরভূম জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২১৫ জন পড়ুয়ার এই স্কুল ২০১৪ সালে জুনিয়র থেকে হাইস্কুলে উন্নীত হয়। নিয়ম অনুযায়ী, একটি হাইস্কুলে ন্যূনতম ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকার কথা। জুনিয়র-স্তরে ওই স্কুলে বরাদ্দ ছিল ৬ জন শিক্ষিকা। তাঁদের মধ্যে ২০১১ সালে ২ জন অবসর নেন। এক জন বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। হাইস্কুলের জন্য বরাদ্দ ছ’জন শিক্ষিকা তো দূর, জুনিয়রের বরাদ্দ তিন শিক্ষিকার জায়গায় আজও কোনও শিক্ষিকা দেওয়া হয়নি। ফলে তিন বছর ধরে তিন জন শিক্ষিকা দিয়েই জোড়াতালি দিয়ে চলছিল ৬টি ক্লাস। এর মধ্যে ২০১৬ সালে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে চলে যান প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা দাস। একই কারণে চলতি বছরের ১৭ অগস্ট থেকে ছুটি নিয়েছেন ইংরেজির শিক্ষিকা জয়িতা পাইন। আর আচমকা অসুস্থ হয়ে পরিচালন সমিতির সম্পাদককে জানিয়ে ১৮ অগস্ট, শুক্রবার থেকে স্কুলে আসছেন না জীববিজ্ঞানের শিক্ষিকা তনুশ্রী মুখোপাধ্যায়ও।

মঙ্গলবার স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের বাংলা পড়াচ্ছে দশম শ্রেণির নাজিরা ইয়াসমিন। দশম শ্রেণির কুলসুমা খাতুন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীদের পড়াচ্ছে ইতিহাস। নাজিরা, কুলসুমারা বলছে, ‘‘দিদিমণি আসবেন ভেবে প্রতিদিনই স্কুলে আসছি। কিন্তু, চার দিন হয়ে গেলেও কেউ আসছে না দেখে শুধু শুধু বাড়ি ফিরে যাওয়া বদলে বোনেদের যতটা পারি পড়াচ্ছি। নিজেদেরও চর্চা হচ্ছে।’’ দিদিদের কাছে পড়ে খুশিতে ডগমগ পঞ্চম শ্রেণির পাপিয়া মাঝি, ষষ্ট শ্রেণির আজিমা খাতুনরা। তারা বলে, ‘‘যাদের সঙ্গে খেলি আর গল্প করি, তাদের কাছে পড়তে বেশ ভালই লাগছে। পড়া বলতে না পারলে বকাও খেতে হচ্ছে না।’’

স্কুলের করণিক পরেশনাথ সাহা জানান, তিনিই চার দিন ধরে ছাত্রীদের হাজিরার হিসেব রাখছেন। তারপর ক্লাস নিতে চলে যাচ্ছে বড়োরা। এ ভাবেই চলছে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস। কিন্তু, ছুটি দিয়ে দিতে হচ্ছে টিফিনের আগেই।
স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক মীর বাসারউদ্দিন বলেন, ‘‘একেবারে শেষে স্কুলে ছিলেন তনুশ্রীদেবী। তিনি ১৮ অগস্ট আমাকে ফোনে জানান অসুস্থ হয়ে বোলপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বিষয়টি আর শিক্ষা দফতরকে জানাতে ইচ্ছে করেনি। কেননা সেই কবে থেকে শূন্যপদ পূরণের দাবি জানিয়ে আসছি। কোনও কাজ তো হয়নি।’’

জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রেজাউল হক বলেন, ‘‘খবরটা শুনেছি। এ ভাবে সবাই এক সঙ্গে ছুটি নেওয়া যায় না। খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কিন্তু, শিক্ষা দফতরকে তো সমস্যার কথা আগেভাগেই জানানো
হয়েছিল। নতুন শিক্ষিকা না দিলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়াই কি স্বাভাবিক নয়? জেলা স্কুল পরিদর্শক এর জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক মীর বাসারউদ্দিন মনে করেন, ‘‘আজকের এই অচলাবস্থার জন্য শিক্ষা দফতরের উদাসীনতাই।’’

Education School Class Seniors নানুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy