Advertisement
E-Paper

আদালত কবে শুরু হবে, প্রশ্ন

একই সঙ্কটে বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন আদালতের বিচারপ্রার্থীরা। মঙ্গলবার বাঁকুড়া সকালে আদালতে গিয়ে দেখা গেল গুটিকয় মানুষজন আদালত চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০০:০৩
পুরুলিয়া জেলা আদালত। —ফাইল চিত্র।

পুরুলিয়া জেলা আদালত। —ফাইল চিত্র।

কাকভোরে উঠে হুড়ার দাপাং গ্রামের বাড়ি থেকে ছেলে আশিসকুমার মাহাতোকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিলেন কিশোরী মাহাতো। মামলার দিন ছিল মঙ্গলবার। আদালতে আইনজীবীদের যে কর্মবিরতি চলছে তা জানতেন। কিন্তু যদি গরহাজিরার কারণে কোনও গন্ডগোল হয়ে যায়, তাই সকাল সকাল পুরুলিয়া আদালতে পৌঁছে যান। কিন্তু কাজ হল না।

পুরুলিয়া জেলা আদালত চত্বরে একটি বেঞ্চে বসেছিলেন বাবা-ছেলে। ছেলে বলেন, ‘‘গ্রাম থেকে সদরে আসার একটি মাত্র বাসই রয়েছে সকাল ছ’টায়। কাজ ফেলে সাতসকালেই ওই বাস ধরেছি। কিন্তু, কর্মবিরতিতে কাজই হল না। ভোগান্তিই সার।’’ রঘুনাথপুর থানার নূতনডি গ্রামের তারকনাথ তন্তুবায়ের সমস্যা মামলার তারিখ জানতে পারছেন না। গ্রাম থেকে কার্যত প্রতিদিনই আদালতে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘‘জমি সংক্রান্ত বিবাদের কারণে পড়শির অভিযোগের ভিত্তিতে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় জামিন পেয়েছি। কিন্তু কবে মামলবার শুনানি, সেটাই জানা যাচ্ছে না। তাই প্রায় রোজই আদালতে আসতে হচ্ছে।’’

মানবাজার ১ ব্লকের মাঝিহিড়া গ্রামের বাসিন্দা গণেশ মাহাতো, নির্মল মাহাতো জমি সংক্রান্ত মামলার জন্য এসেছিলেন। তাঁরা বলেন, ‘‘এ দিন মামলার দিন ছিল। সকালে কোর্ট বলে সেই ভোরবেলায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। আইনজীবিদের কর্মবিরতির কারণে কাজ হল না।’’

একই সঙ্কটে বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন আদালতের বিচারপ্রার্থীরা। মঙ্গলবার বাঁকুড়া সকালে আদালতে গিয়ে দেখা গেল গুটিকয় মানুষজন আদালত চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কয়েকজন আইনজীবী এসেছেন, তবে সাদা পোশাকে। মুহুরীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে রয়েছেন আদালত চত্বরে। বিরস মুখে বসেছিলেন পুনিশোল থেকে আসা সুরত আলি মল্লিক। তিনি জানান, একটি দেওয়ানি মামলা করেছেন বাঁকুড়া আদালতে। এ দিন সেই মামলা আদালতে ওঠার কথা ছিল। তাঁর আক্ষেপ, “সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গাঁটের কড়ি খরচ করে বাসে চড়ে বাঁকুড়া আদালতে এলাম। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছি। অথচ এসে দেখছি আদালত ফাঁকা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আইনজীবীরা কাজ করছেন না। দিনটাই নষ্ট হল আমার।”

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রোড চন্দ্রকোনার এক বাসিন্দা বলেন, “একটি ঘটনার জেরে আরপিএফ কয়েক সপ্তাহ আগে আমার একটি গাড়ি মাল-সহ আটক করেছে। তা বাঁকুড়া আদালত থেকে আমাকে ছাড়াতে হবে। কিন্তু আইনজীবীরা কাজ না করায় কোর্ট অচল। গাড়ি ফেরত পাচ্ছি না।” খাতড়া আদালতেও একই চিত্র।

পাত্রসায়রের একটি গ্রাম থেকে বিষ্ণুপুর আদালতে এসেছিলেন এক যুবক। বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের করেছেন তাঁর বৌদি। দাদা জেলে। ওই যুবক-সহ পরিবারের ১৩ জন সেই মামলায় অভিযুক্ত। তিনি বলেন, ‘‘কর্মবিরতির জেরে দাদার জামিনের আবেদন করতে পারছি না। আমরাও বাড়ি ঢুকতে পারছি না। আগাম জামিনের আবেদন করাতে আদালতে এসেছি। কিন্তু কোনও কাজই হচ্ছে না। এ ভাবে কতদিন ঘুরতে হবে?’’

বিচারপ্রার্থীদের বক্তব্য— দিন কয়েকের জন্য কর্মবিরতি করতে যাচ্ছেন বলে কাজ বন্ধ করেছিলেন আইনজীবীরা। মাঝে পার হয়ে গিয়েছে কয়েক সপ্তাহ। অথচ কর্মবিরতি তোলেননি তাঁরা। এতে ঝুলে রয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলা। আর কত দিন এ ভাবে ভুগতে হবে?’’ পুরুলিয়া বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, ‘‘কলকাতা বার কাউন্সিলে বৈঠক রয়েছে। সেখান থেকে যেমন করতে বলা হবে, তেমনই করব।’’

Purulia Court West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy