Advertisement
E-Paper

স্কুলে দুপুরের খাবার কেমন, জারি নির্দেশ

শুধু ডাল, সয়াবিন, আলুর তরকারিই দিয়েই রোজের খাবার নয়। সুষম আহার হিসাবে ডাল এবং সয়াবিন ও দু’টি মরসুমি আনাজ দিয়ে মিক্সড তরকারি, সপ্তাহে দু’দিন ডিম, মাসে এক দিন মাংস থাকতেই হবে পড়ুয়াদের পাতে।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:৫০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শুধু ডাল, সয়াবিন, আলুর তরকারিই দিয়েই রোজের খাবার নয়। সুষম আহার হিসাবে ডাল এবং সয়াবিন ও দু’টি মরসুমি আনাজ দিয়ে মিক্সড তরকারি, সপ্তাহে দু’দিন ডিম, মাসে এক দিন মাংস থাকতেই হবে পড়ুয়াদের পাতে। পড়ুয়াদের মধ্যাহ্নকালীন আহার বা মিড-ডে মিলের পদ হিসাবে কী কী থাকবে, তা নিয়ে বীরভূম জেলা প্রশাসনের তরফে সদ্য নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এখনও প্রতিটি স্কুলে ওই নির্দেশ পৌঁছয়নি। তবে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ মারফত প্রশাসনের ঠিক করে দেওয়া তালিকা দেখে শিক্ষকদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, বরাদ্দ না বাড়লে, ওই নির্দেশিকা মানা কী ভাবে সম্ভব!

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় প্রায় চার হাজার স্কুলে সাড়ে পাঁচ লক্ষ বাচ্চা মিড-ডে মিল খায়। কিন্তু তাদের পাতে সোম থেকে শনি কী কী পদ থাকছে, বা আদৌ তা সুষম হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নজরদারি চালাতে তাই ভিন্ন পথে হেঁটেছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসকের তরফে অতিরিক্ত জেলাশাসক ( উন্নয়ন ) রঞ্জন কুমার ঝা গত ১৯ সেপ্টেম্বর জেলার ১৯টি ব্লকের বিডিওদের এই মর্মে একটি নির্দেশ পাঠিয়েছেন। সেখানে বিডিওদের বলা হয়েছে, “পড়ুয়াদের পাতে সুষম খাবার পৌঁছে দিতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা পাঠানো হল। আপনার এলাকায় যত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে মিড-ডে মিল পড়ুয়াদের পাতে পড়ে, সেখানে সেই তালিকা বোর্ডে লাগানোর ব্যবস্থা করুন।” তবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয়, একশোর বেশি ছাত্রছাত্রী রয়েছে, এমন স্কুলেই সপ্তাহে দু’দিন ডিম দিতে বলা হয়েছে। তবে মাসে এক দিন মাংস খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করতে হবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে।

এটা ঘটনা যে, গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে মিড-ডে মিল প্রকল্প। এর ফলে স্কুলছুটের সংখ্যা যেমন কমছে, তেমনই ছাত্র ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। তা হলে যেখানে জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষকদের প্রশ্ন কেন?

আপত্তির মূল কারণ অবশ্য দু’দিন ডিম বা মাংস দেওয়া নিয়েই। জেলায় প্রাথমিক স্কুলে একশোর বেশি পড়ুয়া সব স্কুলে নেই ঠিকই। তবে একশোর বেশি পড়ুয়া থাকলে বরাদ্দ কম। জেলার বেশ কয়েকটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, ‘‘পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চাল বাদে ছাত্রপিছু বরাদ্দ ৪ টাকা ১৩ পয়সা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম পড়ুয়া প্রতি বরাদ্দ ৬ টাকা ১৮ পয়সা। সেখানে একটি ডিমের দামই প্রায় ৬ টাকা। আমরা কী ভাবে পড়ুয়াদের সপ্তাহে দু দিন ডিম দেব।’’ কিছু শিক্ষক জানাচ্ছেন, স্কুলে সে দিন কত পড়ুয়া হাজির রয়েছে, সেটার ভিত্তিতে টাকা পাওয়া যায় না, কত জন সে দিন মিড-ডে মিল খাবে, সেই অনুযায়ী টাকা বরাদ্দ হয়। একটি ক্লাসের সব পড়ুয়াই যদি মিড ডে মিল খায়, সেখানেও বরাদ্দ সীমিত থাকে ৮৫ শতাংশে। তা হলে কী ভাবে এই মেনু বজায় রাখা সম্ভব?

নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক আশিস বিশ্বাসের কথায়, ‘‘পড়ুয়ারা যাতে ভাল করে খেতে পারে, সে দিকে শিক্ষকদের নজর থাকেই। মাসে দু-এক দিন ডিম দেওয়াও হয়। তবে বরাদ্দ না বাড়িয়ে মাসে ৮ দিন ডিম দেওয়া কষ্টকর।’’ তাঁর মতে, জোর করা হলে স্কুলকে হাজিরায় কারচুপি করে বা বেশি সংখ্যক পড়ুয়া দেখিয়েই সেটা করতে হয়। যা সমীচীন নয়। তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রলয় নায়েক বলছেন, ‘‘শিক্ষকেরা নিজেরা যদি ঠিক ভাবে দেখেন এবং সদিচ্ছা থাকে, তা হলে প্রশাসনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী খাবার দেওয়া খুব কঠিন হবে না বলেই মনে হয়।’’

প্রশাসনের দাবি, মিড-ডে মিল নিয়ে তাদের ভাবনা, নজরদারি দু’টিই আছেই। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) রঞ্জনকুমার ঝা বলেন, ‘‘কেউ তালিকার থেকে আরও ভাল খাওয়াতে পারেন। প্রশাসন এমন ভাবে তালিকা তৈরি করেছে, যাতে খাবারের একটা নির্দিষ্ট মান সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বজায় থাকে। সেটা মানতে গিয়ে শিক্ষকদের অসুবিধা হলে পরিবর্তিত হতেই পারে।’’

Mid DAy meal Food Instruction
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy