Advertisement
E-Paper

মাধ্যমিকে টেস্টের প্রশ্ন করবে স্কুল, নির্দেশিকা

এ বার মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করতে হবে স্কুলকেই। ৩০ অগস্ট মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে জেলায় জেলায়  এমনই  নির্দেশিকা পৌঁছেছে।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৪২
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

এ বার মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করতে হবে স্কুলকেই। ৩০ অগস্ট মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে জেলায় জেলায় এমনই নির্দেশিকা পৌঁছেছে।

কয়েকটি হাতেগোণা স্কুল ছাড়া এত দিন বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের তৈরি প্রশ্নপত্রেই স্কুলে স্কুলে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা হতো। বিভিন্ন স্কুল সূত্রে খবর, শুধু মাধ্যমিকই নয়, সরাসরি স্কুলকে প্রশ্নপত্র তৈরির নির্দেশ না দিলেও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফেও পরোক্ষ ভাবে এমনই বার্তা এসেছে।

এমন নির্দেশিকা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত শিক্ষকেরা। এক পক্ষের বক্তব্য, জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার আগে প্রস্তুতি কেমন তা যাচাইয়ে বাইরের প্রশ্নপত্রই প্রয়োজন। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রশ্নপত্র তৈরি করলে তা কেমন হতে পারে তা অনুমান করে নিতে পারে পড়ুয়ারা। দ্বিতীয়ত এতে স্কুলের খরচও বাঁচে। তবে অন্য পক্ষের দাবি, বাইরের প্রশ্নপত্র অনেক সময়ই ঠিকঠাক হয় না। অনেক সময় পাঠ্যক্রম বহির্ভূত প্রশ্ন আসে। তাতে বিপাকে পড়তে হয় স্কুলকে। এ বার থেকে তা আর হবে না।

স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের একাংশ বলছেন— একটি স্পর্শকাতর বিষয় ওই নির্দেশিকায় এড়ানো যাবে। কোন শিক্ষক সংগঠনের তৈরি প্রশ্নপত্র নেওয়া হবে, তা নিয়ে চাপ থাকেই। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা অধিকাংশ শিক্ষক যে সংগঠনের সদস্য, সাধারণত সেই সংগঠনের প্রশ্নপত্র নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তাতে প্রশ্নের মান প্রাধান্য পেত না সব সময়। সে দিক থেকে ওই নির্দেশিকা স্বস্তি দিয়েছে।

নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির (এবিটিএ) তরফে জানানো হয়েছে, অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে রাজ্যের দক্ষ শিক্ষকদের দিয়ে নির্ভুল প্রশ্নপত্র তৈরি করানো হতো, যাতে এক জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর প্রস্ততি কেমন তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে। বহু বছর ধরে মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র নিয়মিত তৈরি করে তাদের সংগঠন। সমিতির অভিযোগ, তৃণমূল সরকার ক্ষমতার আসার পরে তাদের সমর্থক সংগঠন কখনও নাম দিয়ে, কখনও বেনামে প্রশ্নপত্র তৈরি করছে।

যদিও ওয়েস্ট বেঙ্গল তৃণমূল সেকেন্ডারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি প্রলয় নায়েকের দাবি— তাদের সংগঠন কখনও প্রশ্নপত্র তৈরি করেনি। বামপন্থী শিক্ষক সংগঠনের তরফেই প্রশ্ন করা হচ্ছিল। টেস্টে ভূল ত্রুটি ও পাঠ্যক্রম বহির্ভূত প্রশ্ন এড়াতে এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। স্কুলের শিক্ষকেরা প্রশ্ন করলে সেই সমস্যা থাকবে না।

এবিটিএ জেলা সম্পাদক আশিস বিশ্বাস বলছেন, ‘‘ভূল আমাদের সংগঠনের প্রশ্নপত্রে ছিল না। শুধুমাত্র এবিটিএকে আটকাতেই এমন সিদ্ধান্ত। স্কুলের তৈরি প্রশ্নপত্রে নৈতিক ভাবে আপত্তির কারণ নেই। তবে বাইরের দক্ষ প্রশ্নকর্তাদের তৈরি যে মানের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিলে পড়ুয়ারা নিজেদের প্রস্তুতি যাচাই করতে পারত, সেটা এ বার অনেক ক্ষেত্রেই ধাক্কা খাবে। কারণ বহু স্কুলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব আছে। বিশেষ করে উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত স্কুলগুলিতে। প্রশ্নপত্র কারা তৈরি করবেন?’’

নলহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসারুল আলম বলছেন, ‘‘টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্ন না করে পরীক্ষক নন এমন অনেক শিক্ষকের পাঠ্যক্রম নিয়ে ধারনাই ফিঁকে হয়ে গিয়েছিল। স্কুলের শিক্ষকেরা প্রশ্নপত্র তৈরি করলে সমস্যা মিটবে। নির্ভুল, সঠিক মানের প্রশ্নে টেস্ট দেওয়ার সুযোগ পাবে পড়ুায়রা।’’ সিউড়ির নগরী এস বি শিক্ষানিকেতনের প্রধান শিক্ষক শীর্ষেন্দু রায়চৌধুরী অবশ্য ভিন্ন মত পোষণ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘টেস্ট পরীক্ষা মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের মহড়া। বাইরের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেলে ভাল পড়ুয়াদের সুবিধা। তারা বুঝতে পারে প্রস্তুতি কেমন হয়েছে। স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকারা কেমন প্রশ্ন করতে পারেন বা তাঁদের পছন্দ-অপছন্দ আগে থেকে অনেকটাই জানা থাকে পড়ুয়াদের।’’

পড়ুয়াদের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে বিশ্লেষণে না গিয়ে স্কুল প্রশ্নপত্র তৈরি করলে খরচের বহর বেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন চিনপাই উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ মজুমদার। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আগে যেখানে সেট প্রতি ৫-৭ টাকা খরচ পড়ত এখন তার তিনগুণ পড়বে।’’ তাতে সহমত পোষণ করছেন খয়রাশোলের বড়রা উচ্চবিদ্যালয়ের টিআইসি কাঞ্চন অধিকারীও।

Education Madhyamik Pariksha West Bengal Board of Secondary Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy