Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কে বলেছে পরিযায়ী নেই, আমাদের লোক রোজ দেখে

শীত আসতেই ঠান্ডার দেশ থেকে উড়ান দেয় ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি। কোনও কোনও ঝাঁক অতিথি হয়ে নামে পুরুলিয়ার সাহেববাঁধে। কিছু নামে বিষ্ণুপুরের লালবাঁধে। গত কয়েক বছর হল, সেই আনাগোনায় ভাটা পড়েছে। 

হুলস্থূল: বিষ্ণুপুরের লালবাঁধে চলছে বোট। উড়ছে পাখি। ছবি: শুভ্র মিত্র

হুলস্থূল: বিষ্ণুপুরের লালবাঁধে চলছে বোট। উড়ছে পাখি। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
পুরুলিয়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:১০
Share: Save:

শীত আসতেই ঠান্ডার দেশ থেকে উড়ান দেয় ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি। কোনও কোনও ঝাঁক অতিথি হয়ে নামে পুরুলিয়ার সাহেববাঁধে। কিছু নামে বিষ্ণুপুরের লালবাঁধে। গত কয়েক বছর হল, সেই আনাগোনায় ভাটা পড়েছে।

সাহেববাঁধের ধারের একটি বাড়ির বাসিন্দা দোলন ঘোষ এবং লালবাঁধের পাড়ের রামানন্দ কলেজের শিক্ষক নরেন্দ্রনাথ মালসের কথায়, ‘‘এ বছর হা-পিত্যেশ করেও বিশেষ পাখি দেখতে পাচ্ছি না। আগের বছরগুলোয় একটু করে পাখি কমছিল। এ বার নেই বললেই চলে।’’

পরিযায়ী পাখিরা যখন আসে, দুই জেলাতেই তখন পর্যটনের মরসুম। পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য সম্প্রতি সাহেববাঁধে চালু হয়েছে শিকারা। লালবাঁধে ভাসছে দু’টি যন্ত্রচালিত নৌকা। সেগুলির জন্যই পাখিরা মুখ ফেরাচ্ছে বলে মনে করছেন দুই শহরের কোনও কোনও বাসিন্দা।

তবে পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খানের দাবি, শিকারা চলে একটা নির্দিষ্ট অংশে। তাতে পাখিদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

লালবাঁধের ক্ষেত্রে অবশ্য নৌকা একটা সমস্যা বলে মনে করছেন বন দফতরের কর্তাদের কেউ কেউ। তাঁরা জানান, নৌকার শব্দ, সে যত আস্তেই হোক, পাখিদের অসুবিধা তৈরি করে। নৌকা দু’টি আবার এই জলাশয়ের সর্বত্র ঘুরে বেড়ায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সম্প্রতি বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। জল বের করে দেওয়া হচ্ছে।

মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল জানান, তাঁরা ঠিক করেছেন, বাঁধের রামানন্দ কলেজের দিকটি থেকে জল সরানো হবে না। জলজ উদ্ভিদও রেখে দেওয়া হবে। তাঁর আশা, সেই জায়গায় থাকতে পারবে পাখিরা। সে দিকে না যেতে বলে দেওয়া হবে নৌকাগুলিকে।

সাহেববাঁধের ধারে জেলা বিজ্ঞানকেন্দ্র। সেখানে আধিকারিক ছিলেন ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়। ২০০৩ সালে জেলা থেকে বদলি হয়ে যান। গত বছর আবার ফিরে এসেছেন। তিনি বলছিলেন, ‘‘ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখে গিয়েছিলাম। এখন দেখছি শীতেও খাঁ-খাঁ করছে জল।’’

প্রতি বছর বিজ্ঞানকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পড়ুয়াদের পরিযায়ী পাখি চেনানোর কর্মশালা হয়। এ বছর সবাই দূরবীন চোখে হন্যে হয়েছেন। হাতে গোনা ক’টা পাখির দেখা মিলেছে। বিজ্ঞানকেন্দ্রের দীর্ঘ দিনের কর্মী নিতাই বাউড়ি বলেন, ‘‘বছর পাঁচেক হল পাখিদের আসা একটু একটু করে কমে যাচ্ছে।’’

উঁচু বাড়িতে ছেয়ে গিয়েছে সাহেববাঁধের চার দিক। কোলাহল বাড়ছে। রাতে আলো বেড়েছে। পুরুলিয়া শহরের সমাজকর্মী আবু সুফিয়ানের মতে, এই সবের জন্য পাখিরা আর নিরাপদ আশ্রয় মনে করছে না সাহেববাঁধকে। তাই সরে যাচ্ছে।

অবশ্য পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খানের বক্তব্য, ‘‘কে বলেছে পাখি নেই? আছে তো। আমাদের আধিকারিকেরা রোজ সকালে গিয়ে দেখছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wildlife Migratory Bird
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE