Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জঞ্জালে নাজেহাল পুরুলিয়া

সাতসকালে প্রাতর্ভ্রমণে বেরোনোর সময় পুরুলিয়ার অনেক বাসিন্দাই রুমাল নিতে ভোলেন না। শহরে রাস্তা জুড়ে যত্রতত্র ডাঁই হয়ে রয়েছে আবর্জনা। নাকে রুমাল চাপা দিয়ে দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বটে, কিন্তু বিপত্তির সেখানেই শেষ নয়।

এ ভাবেই আবর্জনা পেরিয়ে যেতে হয় পুরুলিয়া শহরের বড়হাটে। —নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই আবর্জনা পেরিয়ে যেতে হয় পুরুলিয়া শহরের বড়হাটে। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫০
Share: Save:

সাতসকালে প্রাতর্ভ্রমণে বেরোনোর সময় পুরুলিয়ার অনেক বাসিন্দাই রুমাল নিতে ভোলেন না। শহরে রাস্তা জুড়ে যত্রতত্র ডাঁই হয়ে রয়েছে আবর্জনা। নাকে রুমাল চাপা দিয়ে দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বটে, কিন্তু বিপত্তির সেখানেই শেষ নয়। পাশ দিয়ে গাড়ি ছুটে গেলে এক রাশ ধুলো উ়ড়ে এসে পড়বে গায়ে। নির্মল বাংলা অভিযান নিয়ে যখন সরগরম গোটা রাজ্য, আবর্জনা নিয়ে ক্ষোভ ছড়াতে শুরু করেছে জেলা সদর পুরুলিয়ায়।

শহরে ঢোকার মুখে নীলকুঠিডাঙা থেকে শুরু করে রেডক্রস রোড, বাসস্ট্যান্ডের কাছে বিটি সরকার রোড, রাধাকৃষ্ণ মোড়, কসাইডাঙা, সিন্দারপট্টি-সহ শহরের বেশ কিছু এলাকায় নিয়মিত আবর্জনা সাফাই হয় না বলে অভিযোগ ওই এলাকাগুলির বাসিন্দাদের একাংশের। কিছু ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, নর্দমা পরিস্কারের পরে আবর্জনা তুলে পাশে রেখে দেওয়া হয়। সে সব শুকিয়ে গেলে সাফাইয়ের গাড়ি আসে তুলে নিতে। তার মাঝে যদি বৃষ্টি হয় তা হলে দুর্ভোগের একশা। বাসিন্দারা জানান, রাস্তায় অবাধে চরে বেড়ায় শুয়োর। আবর্জনা ঘেঁটে একেবারে রাস্তায় নিয়ে এসে ফেলে তারা।

কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে প্রতিদিন ২২ থেকে ২৫ ট্রাক্টর আবর্জনা তোলা হয়। সমস্যা হচ্ছে সেই বিপুর পরিমাণ আবর্জনা ফেলা নিয়ে। এত দিন শহরের বাইরে তেলকল পাড়া শ্মশানকালী মন্দিরের অদূরে, দুলমি শ্মশানকালী মন্দিরের অদূরে বা অলঙ্গিডাঙা শ্মশানের কাছে আবর্জনা ফেলা হত। কিন্তু এখন বিভিন্ন সমস্যার জন্য তা আর করা যায় না।

পুর এলাকার সাফাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর কৃষ্ণেন্দু মাহালি জানান, ফেলার জায়গা মিলছে না বলে নিয়মিত আবর্জনা তুলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তা জমতে শুরু করছে। পুরুলিয়ার উপ-পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘দিন দিন শহরের এলাকা বাড়ছে। রোজকার আবর্জনার পরিমাণও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এ দিকে যেখানে আগে আগে আবর্জনা নিয়ে গিয়ে ফেলা হত, সেই জমির মালিকেরা আপত্তি করতে শুরু করেছেন।’’ তাঁর দাবি, এমনকী এলাকা থেকে আবর্জনা তোলার পরেও ট্রাক্টরে সে সব বোঝাই থেকে যাচ্ছে।

তাহলে উপায় কী? উপ-পুরপ্রধান জানিয়েছেন, সমস্যার কথা পুরসভার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। জেলাশাসকের থেকে আশ্বাস মিলেছে, শহরের বাইরে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের ধারে ছড়রার অদূরে প্রায় দশ একর সরকারি জমি পুরসভাকে দেওয়া হবে। তিনি জানান, জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তা মিললেই সমাধান হবে।

কিন্তু তত দিন? পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে দু’টি কম্প্যাক্টর যন্ত্র আবর্জনা সাফাইয়ের কাজে লাগানো শুরু হয়েছে। এর ফলে পরিস্থিতি সামান্য হলেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে। তাপ এবং চাপ দিয়ে আবর্জনা অনেকটা ছোট করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু উপ-পুরপ্রধান এও স্বীকার করে নিয়েছেন, জমি না মেলা ইস্তক সমস্যায় পুরোপুরি লাগাম পরানো সম্ভব নয়।

এই পরিস্থিতিতে, পুরশহর কবে নির্মল হয় আপাতত সেই পথ চেয়েই রয়েছেন বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE