Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Pancharatna Temple

বাজ পড়ে ক্ষতি পঞ্চরত্ন মন্দিরে

লোক-গবেষক সুভাষ জানান, প্রায় তিনশো বছর প্রাচীন চেলিয়ামা বা বাঘমুণ্ডির আটচালা মন্দিরগুলিতে নির্মাণ চলার সময়েই স্থপতিরা বজ্র-নিরোধক লাগিয়ে ছিলেন।

A Photograph of Pancharatna Temple

পঞ্চকোট পাহাড়ের পঞ্চরত্ন মন্দির। বাজ পড়ে মন্দিরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ। ছবি: সঙ্গীত নাগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৩ ০৬:৪৬
Share: Save:

বাজ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হল নিতুড়িয়ার পঞ্চকোট পাহাড়ের কম-বেশি চারশো বছরের পুরনো পঞ্চরত্ন মন্দির। স্থানীয় তরফে জানা যায়, রবিবার বিকেলে মন্দিরের উপরিভাগে বাজ পড়ে। তার জেরে মন্দিরের চূড়ার একাংশে ফাটল তৈরি হয়। কিছুটা অংশ ভেঙেও পড়ে। বর্তমানে পঞ্চকোট পাহাড়ে ১১টি সাইটে সংরক্ষণের কাজ করা রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সংরক্ষণ স্থপতি অন্জন মিত্র বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন।

পুরুলিয়ার অন্যতম লোক-গবেষক সুভাষ রায় জানান, গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে রাজধানী ছিল শিখর রাজবংশের। আনুমানিক সপ্তদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যে শিখর রাজবংশের রাজা বলভদ্র শেখর তৈরি করেছিলেন পঞ্চরত্ন মন্দিরটি। আদতে শাক্ত শিখর রাজারা পরে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হন। তার পরে বিষ্ণুপুর ঘরানার টেরাকোটার আদলে পাহাড়ের কয়েকটি জায়গায় পঞ্চরত্ন মন্দির তৈরি করা হয়।

স্থানীয় তরফে জানা যায়, রবিবার বিকেলে একপ্রস্থ কালবৈশাখী হয় পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায়। নিতুড়িয়াতেও ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ধারাকল্যাণ সমিতির সম্পাদক দিলীপ দে জানান, হঠাৎই বাজ পড়ে পঞ্চরত্ন মন্দিরের উপরের অংশে। সে সময়ে মন্দিরে পুজো চলছিল। ছিলেন পুরোহিত বামাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাজ পড়ায় তিনিও অল্পবিস্তর জখম হন। স্থানীয়েরাই তাঁকে উদ্ধার করে হারমাড্ডি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

কয়েক বছর আগে মন্দিরটি সংস্কার করে নতুন ভাবে তৈরি করেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। পাহাড়ে আসা পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের জায়গা মন্দিরটি। সেই মন্দিরে বাজ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনায় চিন্তিত স্থানীয়েরা।

ধারাকল্যাণ সমিতির সম্পাদক দিলীপ বলেন, ”প্রথমে পঞ্চরত্নের মন্দিরটি সংস্কার করা হয়। এখন পাহাড়ে জুড়ে থাকা অন্য স্থাপত্যগুলির সংরক্ষণে কাজ করছে হেরিটেজ কমিশন। আগামী দিনে গড়পঞ্চকোট আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনক্ষেত্র হিসাবে গড়ে উঠতে পারে। বাজ পড়ে যাতে স্থাপত্যগুলির ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করা হোক।”

লোক-গবেষক সুভাষ জানান, প্রায় তিনশো বছর প্রাচীন চেলিয়ামা বা বাঘমুণ্ডির আটচালা মন্দিরগুলিতে নির্মাণ চলার সময়েই স্থপতিরা বজ্র-নিরোধক লাগিয়ে ছিলেন। সংস্কার হওয়া রঘুনাথপুর ২ ব্লকের বান্দার দেউলেও বজ্র নিরোধক লাগিয়েছে হেরিটেজ কমিশন। তিনি বলেন, ”আশা করব, কোটি টাকা ব্যয়ে যেখানে গড়পঞ্চকোটের মন্দির সংস্কার করে নতুন ভাবে তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে বাজ পড়ার মতো প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা থেকে স্থাপত্যগুলিকে রক্ষা করতে পদক্ষেপ করবে হেরিটেজ কমিশন।”

তাঁর সংযোজন, ”তিনশো-চারশো বছরের প্রাচীন স্থাপত্যগুলির মূল কাঠামো এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই বাজ পড়লে বড়সড় ক্ষতিহতে পারে।”

কমিশনের সংরক্ষণ স্থপতি অঞ্জন জানান, এত বছরে মন্দিরে বাজ পড়েনি। এখন হঠাৎ বাজ পড়ার বিষয়টি অদ্ভূত ঠেকছে। সম্ভবত ওই মন্দিরের আশপাশে উঁচু কোনও গাছ আছে। তাই মন্দিরে বাজ পড়েছে। তাঁর আশ্বাস, ”মন্দিরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা মেরামত করে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা তৈরি করা হবে। তা ছাড়া সংস্কারের কাজ চলা আর একটি পঞ্চরত্ন মন্দির ও রঘুনাথ মন্দিরেও একই ব্যবস্থাকরা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

temple Destruction Lighting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE