এমনই অবস্থা হয়েছিল। নিজস্ব চিত্র
কয়েকতলা বাড়ির সমান ধুলোর কুণ্ডলী পাক খাচ্ছে স্কুলের মাঠে। ফ্যাকাসে মুখে সে দিকে তাকিয়ে পড়ুয়ারা। কয়েক সেকেন্ড নয়, বেশ কয়েক মিনিট ধরে বুধবার এমনই দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত ইন্দাস হাইস্কুলের পড়ুয়া থেকে শিক্ষকেরা। ক্লাস ঘরে আছড়ে পড়বে না তো!— এই আতঙ্কে মুখ শুকিয়ে যায় অনেকের। তবে, যে ভাবে অতর্কিতে ধুলো ঝড় এসেছিল, বেশ মিনিট ধরে স্কুলের মাঠ দাপিয়ে হঠাৎই থেমে যায় তা। তা দেখে স্বস্তি ফেরে স্কুলে। স্কুল সূত্রের খবর, ঝড়ে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
সোমবারই এই জেলার অন্য প্রান্ত মুকুটমণিপুরের নারকেলি গ্রামে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড়। তা অবশ্য অনেক শক্তিশালী ছিল। ঘরের খড়ের চালা, উঠোনে শুকতো দেওয়া জামা-কাপড় উড়ে গিয়ে পড়ে বিদ্যুতের তারে। চালার উপড়ে আছড়ে পড়েছিল গাছ। সেই প্রসঙ্গে টেনে এ দিনই ইন্দাস হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ঘূর্ণিঝড় কী, কী ভাবে তৈরি হয় বুঝিয়েছিলেন ভূগোল শিক্ষক শঙ্কর হীরা। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই যে সেই ঝড় তারা চাক্ষুষ করবে, আশা করেনি কেউই।
ইন্দাস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সহদেব মণ্ডল বলেন, ‘‘বুধবার দুপুর দেড়টা নাগাদ স্কুলের খেলার মাঠে একটি ঘূর্ণি ঝড়ের সৃষ্টি হয়। অনেকক্ষণ ধরে তলা এই ঝড়ে পুরো এলাকা ধুলোয় ভরে যায়। কী হয়, এই আতঙ্কে সবাই অস্থির হয়ে পড়েছিল।’’ তিনি জানান, স্কুলের ভূগোলের শিক্ষক শঙ্কর হীরা ওই দৃশ্য মোবাইল ক্যামেরায় ধরে রাখেন। মুহূর্তে সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যায়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ভূগোলের শিক্ষক শঙ্করবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘অতিরিক্ত গরমে এই ধরণের ধুলি ঝড় ঘূর্ণনের আকার নেয়। সারা মাঠ জুড়ে এক দিক থেকে আর এক দিক ঘুরে এক কোণে গিয়ে থেমে যায়। এত ক্ষণ ধরে এমন ঝড় সচরাচর এই এলাকায় দেখা যায়নি।’’ তাঁর দাবি, ধুলিঝড়ের উচ্চতা ছিল আনুমানিক ১০০ মিটারের কাছাকাছি। ব্যাসার্ধ ছিল ১২ থেকে ১৫ মিটার।
অনেকের দাবি, ঝড়ের সময় মাঠে একটি কুকুর ছিল। ঝড়ের ঝাপটা তার উপরেও লাগে। তবে, কুকুরটির কোনও ক্ষতি হয়নি। দশম শ্রেণির ছাত্র তনয় সেনগুপ্ত বলে, ‘‘ঘূর্ণি ঝড়ের দাপট ইউটিউবে দেখেছি, বইয়ে পড়েছি। কিন্তু সামনে এই প্রথম পড়লাম। বিপদের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।’’ তার সহপাঠী সোহম সরকারের মনে হয়েছিল, ‘‘আর বোধহয় বাড়ি ফেরা হবে না। ভয়ে গলা শুকিয়ে গিয়েছিল।একটা কুকুরকে ঝড় প্রায় তুলেই ফেলেছিল।’’
বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডে চৈত্র-বৈশাখ মাসে এই ধরনের ঘূর্ণি দেখা যায়। একে ঝড় বলা যায় না। হঠাৎ করে ভূপৃষ্ঠের কোনও অংশ খুব উত্তপ্ত হলে সেখানকার বাতাস দ্রুত উপরে ওঠে তখন পাশাপাশি অঞ্চলের শীতল বাতাস দ্রুত সেখানে ছুটে আসে এবং পরিচলন স্রোতের কারণে আবার উপরে উঠে যায়। তাতেই ঘূর্ণি সৃষ্টি হয়।’’ তিনি জানান, আকার এবং স্থায়ীত্বের উপর নির্ভর করে ঘূর্ণি কতটা ক্ষতিকর হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy